মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৭:১১ অপরাহ্ন

মাযহাবী গোঁড়ামি ও তার কুপ্রভাব

মূল : শায়খ ইবরাহীম ইবনু আব্দুল্লাহ আল- মাযরূঈ
অনুবাদ : রিদওয়ান ওবাইদ*


(৪র্থ কিস্তি) 

২. মাযহাবী গোঁড়ামির কুপ্রভাব ও অপকারিতাসমূহের  অন্যতম হল মাযহাবী গোঁড়ামিবশত বিশুদ্ধ দলীলাদির বিরুদ্ধাচরণ করা

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلۡیَحۡذَرِ الَّذِیۡنَ یُخَالِفُوۡنَ عَنۡ اَمۡرِہٖۤ اَنۡ تُصِیۡبَہُمۡ فِتۡنَۃٌ  ‘সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে’ (সূরা আন-নূর : ৬৩)। এর কিছু উদাহরণ হল,

* কিছু হানাফী বলেন, তাশাহহুদের বৈঠকে তর্জনী আঙ্গুল উত্তোলন করা জায়েয নয়। অথচ তাশাহ্হুদের বৈঠকে তর্জনী আঙ্গুল উত্তোলন করার আমলটি বিশুদ্ধ হাদীছের মাধ্যমে প্রমাণিত। এমনকি তদের কেউ কেউ যখন কাউকে তাশাহহুদে তর্জনী আঙ্গুল উত্তোলন করতে দেখেছে তখন তাশাহহুদ পাঠকারীর আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছে। (ঘটনাটি রশীদ রেযা তার আল-মুগনী উল্লেখ করেছেন।)

* আর আমরা ইতিপূর্বে আবুল হাসান আল-কারখীর একটি উক্তি উল্লেখ করেছি। তিনি বলেছেন, كل آية تخالف ما عليه أصحابنا فهي مؤولة أو منسوخة ‘যে কোন আয়াত আমাদের ইমামগণের মতের পরিপন্থী সেটি হয়ত ব্যাখ্যা সাপেক্ষ, নয়তো মানসূখ (রহিত) হয়ে গেছে’।[১]

* অনুরূপ (মাযহাবী গোঁড়ামিবশত ছহীহ দলীলের বিরোধিতার আরো উদাহরণ হল) হানাফী এবং মালেকী মাযহাব অনুসারীরা রুকূ‘তে যাওয়ার সময়, রুকূ‘ থেকে পুনরায় দণ্ডায়মান হওয়ার সময় এবং প্রথম তাশাহহুদের বৈঠক থেকে দণ্ডায়মান হওয়ার পর রাফ‘উল ইয়াদান (দু’হাত উত্তোলন) না করার মাধ্যমে ছহীহ হাদীছের বিরোধিতা করছে।

* অনুরূপভাবে হানাফী মাযহাবে জোরপূর্বক ত্বালাক্বের বৈধতা প্রদান করা হয়েছে এবং ছালাতে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক করা হয়নি।

* মালেকী মাযহাবে জুমু‘আর দিন ইমামের খুত্ববা চলাকালীন কথা বলার বৈধতা প্রদান করা হয়েছে এবং মসজিদে প্রবেশের পর দু’ রাক‘আত ছালাত আদায় করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে।

* জানাযার ছালাতে ইমাম ছাহেবের দাঁড়ানোর স্থান প্রসঙ্গে ‘হিদায়া’ গ্রন্থকার বলেন, ‘কোন পুরুষ বা মহিলার জানাযার ছালাতে ইমাম লাশের বুক সোজা দাঁড়াবে। কেননা তা ক্বলবের স্থান এবং তাতে ঈমানের আলো বিদ্যমান’। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত হাদীছটি উল্লেখ করা সত্ত্বেও তিনি এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। (হাদীছটি হল,) নিশ্চয় সুন্নাহ হল, জানাযার ছালাতে ইমাম পুরুষের মাথা বরাবর এবং মহিলার মধ্যখান বরাবর দাঁড়াবে। আর এটাই ইমাম আবূ হানিফা, আবূ ইউসুফ, ত্বাহাবীসহ জমহূর আলিমের অভিমত।[২]

* ফাতহুল ক্বাদীর গ্রন্থের পাদটীকায় ‘শারহুল ‘ইনায়াহ আলাল হিদায়া’ গ্রন্থকার উল্লেখ করেন, ‘মহিলাদের জামা‘আতে অংশগ্রহণের বিষয়টি পরবর্তী যুগের আলেমগণের ইজমা‘র মাধ্যমে পরিত্যাক্ত’।[৩] (মাযহাবী গোঁড়ামিবশত ছহীহ হাদীছ পরিত্যাগের) এ জাতীয় আরো বহু উপমা রয়েছে।

৩. মাযহাবী গোঁড়ামির আরেকটি কুফল হল, দলীলের উপর আলেমদের বক্তব্যকে অগ্রাধিকার দেয়া এবং কিতাব-সুন্নাহর সঠিক বুঝ থেকে বঞ্চিত হওয়া

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইমাম আবূ হানীফা, মালেক, শাফেঈ এবং আহমাদ ইবনু হাম্বলসহ অন্যান্য ইমামদের বহু অনুসারী কেবল নিজ অনুসৃত ইমাম ও সেই ইমামের শিষ্যদের বক্তব্য সংকলন করে কিতাব-সুন্নাহর উপর নিজের অনুসৃত ইমামের বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়ে কিতাব রচনা করেছেন’।[৪]

৪. মাযহাবী গ্রন্থসমূহে বানোয়াট হাদীছে ভরপুর এবং সেই বানোয়াট হাদীছের উপর (মাযহাবী) আহকামের ভিত্তি

ইজতিহাদ বা গবেষণা ভুল হওয়ার পিছনে এটাই সব থেকে বড় কারণ। দুর্বল হাদীছ প্রসারের পিছনে মাযহাবী গোঁড়ামির বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা তাদের মাযহাবকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই এ অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে। যেমন তারা তাদের মাযহাবের বাহিরে কোন বিশুদ্ধ হাদীছ পেলে সেটিকে ত্রুটিযুক্ত প্রমাণ করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায়। এছাড়াও দুর্বল হাদীছ ছড়িয়ে পড়ার আরো একটি কারণ হল, পরবর্তী যুগের বহু ফক্বীহর সুন্নাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা।

৫. ইমাম ও পূর্ববর্তী আলেমগণের মতামতের উপর পরবর্তী যুগের আলেমদের মতামতকে অগ্রাধিকার দেয়া

এটা পরবর্তী যুগের মাযহাবীদের বইগুলোতে পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ তারা ধারণা করে বলে থাকেন, ইজতিহাদের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। উক্ত বিষয়ে কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি।

* পরবর্তী যুগের হানাফী এবং শাফেঈ মাযহাবের মুফতিদের ফৎওয়া অনুসারে কোন মুছল্লী ইমামের মধ্যে ওযূ বা ছালাত বিনষ্টকারী কিছু দেখতে পেলে তার ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। অথচ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, يُصَلُّوْنَ لَكُمْ فَإِنْ أَصَابُوْا فَلَكُمْ وَإِنْ أَخْطَئُوْا فَلَكُمْ وَعَلَيْهِمْ ‘তোমাদের মধ্যে যারা ছালাত আদায় করাবে, তারা যদি ঠিকমত আদায় করায়, তাহলে তা তোমাদের সকলের পক্ষেই। আর বেঠিক আদায় করালে তা তোমাদের পক্ষে কিন্তু তাদের বিপক্ষে’।[৫]

* কিছুক্ষণ পূর্বেই আলোচনা করেছি যে, জানাযার ছালাতে ইমাম দাঁড়ানোর স্থান সম্পর্কে হিদায়া গ্রন্থের মরদেহের বুক সোজা দাঁড়াবে। অথচ সেখানেই আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর হাদীছের আলোকে ইমাম আবূ হানীফা, আবূ ইউসুফ এবং জনহূর আলিম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।

* হানাফী মাযহাবের পবরর্তী যুগের আলেম কাইদানী এবং মাসঊদ দু’জনই ছালাতে তাশাহহুদের বৈঠকে তর্জনী আঙ্গুল উত্তোলন করা হারাম মনে করতেন। অথচ ‘মুওয়াত্ত্বা’ গ্রন্থে স্বয়ং ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) ও মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, ‘মা‘আনীল আছার’ গ্রন্থে ইমাম ত্বাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) এবং ‘ফাৎহুল ক্বাদীর’ গ্রন্থে ইবনুল হুমামসহ বহু বিদ্বান এই আমলের স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। উক্ত আমলটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সহ ছাহাবীগণ থেকে প্রমাণিত হওয়ায় পূর্ববর্তী সকল আলেমই এটিকে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন।

৬. মাযহাবী গোঁড়ামির আরেকটি কুফল হল, অপর মাযহাব এবং উম্মাহর প্রথিতযশা অন্যান্য আলেমের নিকট হতে ফায়দা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা

এ ব্যাপারগুলো তাদেরকে সংকীর্ণমনায় রূপান্তরিত করে ফেলে। যার ফলে বহুমুখী ফিতনার গোড়াপত্তন হয়। যেমন, (ক) অন্য মাযহাবের আলেমদের দ্বীনি খেদমত থেকে ফায়দা গ্রহণ না করা। (খ) কেবল নির্দিষ্ট একটি মাযহাবে নিজেকে বন্দি রাখা। যা তাকে জগতে সংকীর্ণমনা করে ফেলে। (গ) এমন একেকটি দল মাথা চাড়া দিয়ে উঠে, যে দলের কর্মীরা মানুষদেরকে (তাদের) মাযহাবের দিকেই আহ্বান করতে থাকে। এমনকি খারেজী ও শী‘আ মতবাদের দিকেও।

৭. মাযহাবী বহু কিতাব শারঈ দলীলশূন্য

ঐ সকল কিতাব হতে কয়েকটি কিতাব যেমন, শাফেঈ মাযহাবের ‘গায়াতুত তাক্বরীব ওয়াল মানহাজ’ নামক গ্রন্থ, হানাফী মাযহাবের ‘মিরাক্বিল ফালাহ ওয়াল কানয্’ নামক গ্রন্থ, মালেকী মাযহাবের ‘আল-মুখতাছারুল খলীল ওয়ার রিসালাতি লিল ক্বাইরুওয়ানী’ গ্রন্থদ্বয় এবং হাম্বলী মাযহাবের ‘যাদুল মুসতাক্বনি‘’ নামক গ্রন্থ। অথচ এই মাযহাবের ইমামগণ হাদীছ, ফিক্বহ, কুরআন এবং তার তাফসীরের উপর পড়াশোনা করে ব্যাপক পাণ্ডিত্য অর্জন করেছিলেন। একারণেই তাঁরা সর্বজন সমাদৃত আলেম হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন।

৮. মাযহাবী গোঁড়ামির আরেকটি কুফল হল, অবাস্তব অসাধ্য (মাসায়েল) এবং পরবর্তী যুগের আলেমদের উদ্ভট বক্তব্য নিয়ে ব্যস্ত থাকা

অবাস্তব ও কাল্পনিক সব মাসায়েল নিয়ে মগ্ন থাকা শরী‘আতে অত্যন্ত গর্হিত একটি কাজ। কারণ এগুলো নিয়ে পড়ে থেকে অযথা শ্রম দেয়ায় কোন সার্থকতা নেই। এর কিছু উদাহরণ,

* মুহাম্মাদ জাবাবী আল-হানাফী বলেন, ‘ইমামতি করার সর্বাধিক হক্বদার হল শাসক অথবা তাঁর পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি। অতঃপর ক্রমান্বয়ে যে ব্যক্তি শারীরিক গঠন দিক থেকে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিনন্দন। যার মুখাবয়ব সবচেয়ে বেশি সুন্দর, যার সুর সুমধুর, যার স্ত্রী রূপবতী, যার ধন-সম্পদ বেশি, যার পরিধেয় বস্ত্র পরিচ্ছন্ন, যার মাথা বড়, অতঃপর যার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছোট সে ইমামতি করবে’।[৬] অথচ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

يَؤُمُّ الْقَوْمَ أَقْرَؤُهُمْ لِكِتَابِ اللهِ فَإِنْ كَانُوْا فِى الْقِرَاءَةِ سَوَاءً فَأَعْلَمُهُمْ بِالسُّنَّةِ فَإِنْ كَانُوْا فِى السُّنَّةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ هِجْرَةً فَإِنْ كَانُوْا فِى الْهِجْرَةِ سَوَاءً فَأَقْدَمُهُمْ سِنًّا

‘মানুষের ইমামতি করবে সেই ব্যক্তি, যার কুরআন বেশি মুখস্থ রয়েছে এবং তেলাওয়াত বেশি শুদ্ধ। যদি কুরআন তেলাওয়াতে সকলে সমান হয়, তবে যে সুন্নাহ তথা হাদীছ সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখে। যদি সুন্নাতেও সকলে সমান হয়, তবে যে হিজরত করেছে সেই ইমামতি করবে। যদি হিজরতেও সকলে সমান হয়, তবে যে বয়সে বড়’।[৭]

এ ব্যাপারে আরও বহু উদাহরণ রয়েছে। যেমন, যে সন্তান পশুকাম তথা একজন পুরুষ ও একটি ছাগলের যৌন মিলনের মাধ্যমে জন্মলাভ করেছে সেই সন্তানের মাধ্যমে কুরবানী করার হুকুম, ‘যে ব্যক্তি কোন মহিলার লজ্জাস্থানে তার গোটা দেহ প্রবেশ করাল, সে ব্যক্তির উপর গোসল করার হুকুম কী? সে কি অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জনের ন্যায় গোসল করবে? প্রাচ্যের কোন ব্যক্তি পশ্চিমা কোন নারীকে বিবাহ করার ফলে যে সন্তান জন্ম লাভ করবে, সেই সন্তানকে তাঁর বাবার দিকে সম্বন্ধযুক্ত করা হবে কি না’? ইত্যাদি।

৯. মাযহাবী গোঁড়ামির আরেকটি কুফল হল, পরবর্তী যুগের আলিমগণ কর্তৃক দলীলের কিছু অংশ গ্রহণ করে বাকি অংশ প্রত্যাখ্যান করা

সাধারণত তারা এমন একটি হাদীছের মাধ্যমে দলীল পেশ করে, যে হাদীছের একটি অংশ তাদের মাযহাবের বক্তব্যকে প্রমোট করে আর অবশিষ্ট অংশটুকু অন্য কোন মাযহাবের পক্ষে। তাই তারা সেই অবশিষ্ট অংশটুকু বর্জন করে এবং অমান্য করে। শুধু মাযহাবী গোঁড়ামিবশত তারা এমনটা করে থাকে। এ প্রসঙ্গে কিছু উপমা হল,

জুমু‘আর দিন ইমামের খুত্ববা চলাকালীন শ্রোতাদের কথা বলা জায়েয করণে তারা নিম্নোক্ত হাদীছের মাধ্যমে দলীল পেশ করে থাকেন। অর্থাৎ খুত্ববা চলাকালে মসজিদ প্রবেশকারী ছাহাবীদের উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,  أَصَلَّيْتَ يَا فُلَانُ قَالَ لَا. قَالَ قُمْ فَارْكَعْ رَكْعَتَيْنِ ‘হে অমুক! বসার পূর্বে (দু’রাক‘আত) ছালাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘দাঁড়াও! অতঃপর দু‘রাক‘আত ছালাত আদায় কর’।[৮] অথচ প্রকৃতপক্ষে এই হাদীছটি যেই আমলকে প্রমাণ করে তারা সেই আমলের বিরোধিতা করে।

তাদের কেউ কেউ حديث مسئ الصلاة তথা ছালাত ভুলকারী ব্যক্তির হাদীছের মাধ্যমে ‘ছালাতে সূরা আল-ফাতিহা পাঠ করা আবশ্যক নয়’ মর্মে দলীল পেশ করে থাকেন। অথচ সেই হাদীছে ছালাত ভুলকারীকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, اقْرَأْ مَا تَيَسَّرَ مَعَكَ مِنَ الْقُرْآنِ ‘কুরআনের যে অংশ তোমার পক্ষে সহজ সে অংশই পাঠ কর’।[৯] অতঃপর তারা একই হাদীছে বর্ণিত অন্যান্য অংশের যেমন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ثُمَّ ارْكَعْ حَتَّى تَطْمَئِنَّ رَاكِعًا ‘অতঃপর রুকূ‘তে গিয়ে ধীরস্থিরভাবে রুকূ‘ সম্পন্ন করবে। তিনি বলেন, ارْجِعْ فَصَلِّ فَإِنَّكَ لَمْ تُصَلِّ ‘ফিরে গিয়ে পুনরায় ছালাত আদায় কর। কারণ তুমি ছালাত আদায় করনি’ বাক্য দু’টির বিরোধিতা করেছে। তারা বলে, من ترك الطمأنينة فقد صل‘যে ব্যক্তি ছালাতে ধীরস্থিরতা ছেড়ে দিবে তার ছালাত সম্পন্ন হয়ে যাবে’। অথচ এই হাদীছে ছালাতে ধীরস্থিরতা রক্ষা করার জন্য এবং  তেলাওয়াত করার জন্য সমানভাবে আদেশ করা হয়েছে।

তারা ছালাতে جلسة الاستراحة (বিশ্রামের বৈঠক)-কে নাকোচ করার পক্ষে আবূ হুমাইদ আস-সাঈদী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর হাদীছের মাধ্যমে দলীল পেশ করে থাকেন। প্রকৃতপক্ষে উক্ত হাদীছ আদৌ এমনটা বলা হয়নি। অথচ উক্ত হাদীছেই রুকূ‘তে যাওয়ার সময় এবং রুকূ‘ থেকে উঠার পর ‘রাফ‘উল ইয়াদান‘-এর কথা বলা হয়েছে কিন্তু তারা এটি গ্রহণ করেনি। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত জানতে আগ্রহীদের জন্য إعلام الموقعين এবং كتاب إيقاظ الهمم للفلاني নামক গ্রন্থদ্বয় দ্রষ্টব্য।

১০. মাযহাবী গোঁড়ামির আরেকটি কুফল হল, ইজাতিহাদ পরিহার করা এবং যারা ইজাতিহাদরত রয়েছেন তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা। জ্ঞানী এবং সম্মানিত ব্যক্তির মধ্যকার সিদ্ধান্তকে অবজ্ঞা করা

এগুলো হল, পরবর্তীযুগের আলেমগণের মাযহাবী গোঁড়ামির ক্ষতিকর প্রভাব। সুতরাং আমরা কি অপরাধী হব যদি আমরা মানুষদেরকে কেবল কিতাব-সুন্নাহর দিকে আহ্বান করি, বিবাদপূর্ণ প্রতিটি বিষয়ে কিতাব-সুন্নাহ থেকে সমাধান গ্রহণ করার জন্য (আহ্বান করি)। যাতে করে পূর্ববর্তী সালাফগণের ন্যায় মুসলিম উম্মাহ পুনরায় একই মাযহাবের অনুসারী হতে পারে এবং সকলে একই কাতারে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে পারে। أَلَا هَلْ بَلَّغْتُ... اَللّٰهُمَّ اشْهَدْ ‘আমি কি (তোমাদের নিকট রিসালাতের দাওয়াত) পৌঁছে দিতে পেরেছি?...হে আল্লাহ! তুমি সাক্ষী থেকো’।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* পাঁচরুখী, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

তথ্যসূত্র :
[১]. উছূলুল কারখী আল-মাতবূঊ মা‘আ তা’সীসিন নাযর, পৃ. ৮৪।
[২]. আহকামুল জানায়েয, পৃ. ১০৮।
[৩]. ফাতহুল ক্বাদীর, ১ম খণ্ড, পৃ. ২২৫।
[৪]. মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১০ম খণ্ড, পৃ. ৩৬৭।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৯৪; মিশকাত, হা/১১৩৩।
[৬]. কিতাবু রফিকিল আসফার, পৃ. ৪৩।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৭৩; মিশকাত, হা/১১১৭।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮৭৫।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৭।




প্রসঙ্গসমূহ »: বিবিধ বিধি-বিধান
সূদ-ঘুষ ও অবৈধ ব্যবসা (৯ম কিস্তি) - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
আল-কুরআনের আলোকে দাওয়াতের মাধ্যম - আব্দুল গাফফার মাদানী
বিদ‘আত পরিচিতি (২৬তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ বযলুর রহমান
তওবার গুরুত্ব ও ফযীলত - ড. ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
কুরআন মাজীদের উপর বিদ‘আতের আবরণ - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ছয়টি মূলনীতির ব্যাখ্যা (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
প্রচলিত তাবলীগ জামা‘আত সম্পর্কে শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের অবস্থান (৮ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুর রাযযাক বিন আব্দুল ক্বাদির
বাউল মতবাদ (শেষ কিস্তি) - গোলাম রহমান
বিদায় হজ্জের ভাষণ : তাৎপর্য ও মূল্যায়ন - অধ্যাপক মো. আকবার হোসেন
আশূরায়ে মুহাররম - ছাদীক মাহমূদ
ইসলামী পুনর্জাগরণের প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণের উপায় (৮ম কিস্তি) - ড. মুযাফফর বিন মুহসিন
ইসলামী জামা‘আতের মূল স্তম্ভ (১৩তম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ মুছলেহুদ্দীন

ফেসবুক পেজ