সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:১০ অপরাহ্ন
উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিকে ইসলামী পরিভাষায় ‘বাইয়ে সালাম বা সালাফ’ বলা হয়। সালাম শব্দের অর্থ অগ্রিম কেনা-বেচা। ‘বাইয়ে সালাম’, ক্রয়-বিক্রয়ের এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বিক্রেতা পণ্যদ্রব্যের অগ্রিম মূল্য নিয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করে যে, সে ভবিষ্যতের কোন একটি নির্ধারিত তারিখে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের পণ্যদ্রব্য ক্রেতাকে সরবরাহ করবে। এখানে মূল্য নগদ কিন্তু পণ্যদ্রব্য  (বিক্রিতব্য জিনিস) পরিশোধে বিলম্বিত হয় (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৪৯)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, واتفق العلماء على مشروعيته ‘আলিমগণের সর্বসম্মতিক্রমে বাইয়ে সালাম জায়েয’ (ফাৎহুল বারী, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৭৬ )। তবে এই অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য শর্ত হল নির্ধারিত পরিমাপ, নির্দিষ্ট ওযন এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ করে (ছহীহ বুখারী, হা/২২৩৯, ছহীহ মুসলিম, হা/১৬০৪)।

হাদীছে কয়েকটি শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, (১) ক্রেতা চুক্তির সময়ই বিক্রেতাকে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবে। কেননা, চুক্তির সময় ক্রেতা যদি সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ না করে, তাহলে তা ঋণের বিনিময়ে ঋণ বিক্রির সাদৃশ্য হয়ে যাবে। যা করতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন (আল-মুগনী, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৩৭; আশ-শারহুল মুমতি‘, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৪৪; কুয়েতি ফিকহ বিশ্বকোষ, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৭৬)। (২) বাইয়ে সালাম শুধু সেই সব পণ্যে জায়েয হবে, যে সব পণ্যের কোয়ালিটি বা গুণগত মান, পরিমাণ, পরিমাপ ও সংখ্যা পূর্বেই পরিপূর্ণরূপে নির্ধারণ করা সম্ভব। (৩) যে পণ্যদ্রব্যে সালাম করার ইচ্ছা পোষণ করবে, তার ধরন এবং গুণগত মান সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়াও অপিরহার্য। (৪) বিক্রিতব্য জিনিস পরিশোধের তারিখ এবং স্থান চুক্তিতে নির্ধারণ করে নেয়া অপরিহার্য।

টাকার বিনিময়ে টাকা বেশি নেয়া নিষিদ্ধ। এটা স্পষ্ট সূদ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৩০)। আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘দীনারের বিনিময়ে দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম সমান সমান হওয়া চাই। আর যে বেশি দিবে বা বেশি নিবে সে সূদের লেনদেন করল’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৮০, ১৫৯৬)। উসামা ইবনু যায়দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কেবল বাকীতে বৃদ্ধি করলেই সূদ হয়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৮১, ৩৯৮২, ৩৯৮৩, ১৫৯৬)।

অতএব ১ লক্ষ প্রদান করে ১ লক্ষ ২০ হাজার গ্রহণ করা হালাল হবে না। প্রশ্নে বর্ণিত চুক্তি সাপেক্ষে নির্ধারিত দিনে ১৯ হাজার ইটই গ্রহণ করতে হবে। ইটের পরিবর্তে বিনিময় নেয়া যাবে না। কেননা এর মধ্যে সূদের সম্ভাবনা আছে (বাদায়িউছ ছানাঈ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ২০১)।

শর্তানুযায়ী ১৯ হাজার ইট আপনার হস্তগত হয়নি। আর শরী‘আতের দৃষ্টিতে ক্রয়কৃত বস্তু হস্তগত হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করা হারাম। আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতাম। তখন তিনি আমাদের নিকট এ মর্মে আদেশ দিয়ে লোক পাঠাতেন যে, এ মাল বিক্রয় করার পূর্বেই যেন ক্রয়ের স্থান হতে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বরং নিজেদের ঘরে তুলে নেয়ার আগেই বিক্রয় করলে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হত (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে তা নিজ আয়ত্বে নেয়ার পূর্বে বিক্রয়  করতে পারবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৫; বাদায়িউছ ছানাঈ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৪৫১; কুয়েতী ফিক্বহ বিশ্বকোষ, ২৫তম খণ্ড, পৃ. ২১৮-২১৯)।

প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ ফিরোজ আহমাদ, সিরাজগঞ্জ।




প্রশ্ন (৩৩) : ওয়াক্তিয়া মসজিদের চেয়ে জুম‘আ মসজিদে ছালাত আদায় করলে বেশী নেকী হয়। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : মেয়ের শ্বশূরবাড়ি আর নিজের বাড়ির লোকের মধ্যে ঝামেলার কারণে প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী যদি নিজের মা আর চাচাদের চাপে পরে, স্বামীর বাড়িতে মোহরানা না জানিয়ে রেখে যায় এবং এর পর কোর্ট থেকে নোটারীর পাবলিকের মাধ্যমে স্বামীর অনুপস্থিতিতে নোটিশ পাঠিয়ে খোলা ত্বালাক্ব দেয়। তাহলে ত্বালাক হবে কিনা? উল্লেখ্য, এখানে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তেমন কোন জামেলা ছিলো না। আর স্বামী ত্বালাক্ব দিতে বা মানতেও রাজি না। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩১) : ছালাত শেষে যিকিরগুলো সরবে বলতে হবে, না-কি চুপেচুপে বলতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : যে সব প্রতিষ্ঠানে নিজেকে সূদের হিসাব করতে হয়, সে সব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে উপার্জিত অর্থ হালাল হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : কুরআন তেলাওয়াতের পরে ‘ছাদাক্বাল্লা-হুল ‘আযীম’ বলা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : লাশ কবরে রাখার সঠিক নিয়ম কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : কুরআন মাজীদ খতম করে পুনরায় সূরা ফাহিতা ও সূরা বাক্বারার শুরু থেকে ‘মুফলিহূন’ পর্যন্ত পড়ার কোন বিধান আছে কী? জনৈক ব্যক্তি বলেন, তিরমিযীর ২৯৪৮ নং হাদীছে এ নির্দেশ রয়েছে। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : একই পশুতে কুরবানী ও আক্বীক্বার নিয়ত করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : তাসবীহ কি দু’হাতের আঙ্গুলেই গণনা করা যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : ইসলাম ‘ক্রেডিট কার্ড’ সম্পর্কে কী বলে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : মৃত ব্যক্তির নামে যে খানার আয়োজন করা হয়, সে খাবার কি পরিবারের অন্য সদস্যরা খেতে পারবে?   - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : মুক্তাদীরা ফরয ছালাতের জন্য কখন দাঁড়াবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ