উত্তর : মাদরাসায় যাকাতের অর্থ প্রদান করা বা উক্ত অর্থ দিয়ে মাদরাসার নামে জমি ক্রয় করা এবং ছাত্রদের জন্য আবাসিক বা একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা যাবে। তবে শর্ত হল উক্ত মাদরাসা সম্পূর্ণ লিল্লাহ হতে হবে। অর্থাৎ সরকারী বেতন বা রাষ্ট্রীয় কোন অনুদান ছাড়াই সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক যে মাদরাসা পরিচালিত হয়। যেখানে কুরআন, হাদীছ, তাফসীর, উছূল, ফিক্বহ, ফারায়েয, বালাগাত, আবরী সাহিত্য ও ব্যাকরণসহ প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান করা হয়। যেগুলো কোন ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নয় এবং শিরক-বিদ‘আত চর্চার কারখানাও নয়। মূলত এ ধরনের মাদরাসাগুলোতেই প্রকৃত ইলম ও দ্বীন চর্চা হয় এবং ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখে থাকে। এ ধরনের মাদরাসাগুলোকে যাকাতের ৮টি খাতের মধ্যে ‘ফী সাবীলিল্লাহ’ খাতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় (সূরা আত-তওবাহ : ৬০)। এ সম্পর্কে চমৎকার ও যুগপযোগী প্রজ্ঞাপূর্ণ ফৎওয়া দিয়েছেন একবিংশ শতাব্দির শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ শায়খ মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ)। তাকে জিজ্ঞেস করা হয়-
প্রশ্ন : মহান আল্লাহ যাকাত দেয়ার খাতগুলো উল্লেখ করেছেন। যার মাঝে- ‘আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য এবং মুসাফিরদের জন্য খাত রয়েছে। এটা হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’। বিদ্বানগণ বলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ’ বলতে জিহাদ তরবারী দ্বারাও হয়, জিহ্বা দ্বারাও হয়। আবার জিহাদ হয় ইলম দ্বারা এবং বক্তৃতা দ্বারাও। বর্তমানে আমরা এই মাসআলা নিয়ে সমস্যাই পড়েছি যে, যাকাতের অর্থ শারঈ ইলম অর্জনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের উপর ব্যয় করা এবং তাদের জন্য মাদরাসার ভবন নির্মাণ করা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বই ক্রয় করা যাবে কি-না, যেমন যাকাতের অর্থ দিয়ে মুজাহিদদের জন্য জিহাদী ক্যাম্প তৈরি করা হয় বা তাদের জন্য অস্ত্র কেনা হয়।
একটি বিষয় জানানোর দরকার যে, অনেক রাষ্ট্র আছে যেখানে শারঈ ইলম চর্চার মাদরাসাগুলোকে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। দেশের ভাল কিছু সাধারণ মানুষের দ্বারা দেখভাল করা হয় এবং মুহসিন বান্দাদের সহযোগিতায় চলে। কখনো কখনো খুব কমসংখ্যক দানশীল ব্যক্তিদের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র কেনা সম্ভব হয়। এই অবস্থায় যাকাতের অর্থ ছাত্র-ছাত্রীদের দেয়া এবং তাদের জন্য মাদরাসার আবাসিক ভবন নির্মাণের কাজে লাগানো যাবে কি?
উত্তর: আমি মনে করি এ সকল শারঈ ইলম অর্জনকারী অক্ষম ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা জায়েয। কারণ দ্বীন প্রতিষ্ঠা লাভ করে জ্ঞান এবং হাতিয়ারের মাধ্যমে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। সেটা কতই না নিকৃষ্ট স্থান’ (সূরা আত-তাহরীম : ৯)। এটা জানা বিষয় যে, মুনাফিকদের সাথে জিহাদ হচ্ছে ইলম দ্বারা; অস্ত্র দ্বারা নয়। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় বই-পুস্তক ক্রয় করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে। সে বইগুলো ছাত্রদের ব্যক্তি মালিকানাতেও হতে পারে, আবার আমভাবে গ্রন্থাগারের জন্যও হতে পারে- যেখান থেকে ছাত্ররা বই উঠিয়ে পড়বে আবার ফেরত দেবে। কারণ ছাত্রদের জন্য বই হল জিহাদের মাঠে মুজাহিদদের হাতিয়ারের মত।
অনুরূপভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক এবং একাডেমিক ভবন নির্মাণেও যাকাতের অর্থ ব্যয় করা জায়েয। বই ক্রয় এবং ভবন তৈরি উভয় বিষয়ের মাঝে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, কিতাব থেকে একটু বেশী উপকৃত হয়। কিতাব ছাড়া ইলম অনেকটাই অসম্ভব, যা ভবনের সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাছাড়া সেখানে যখন গরীব-ইয়াতীম ছাত্ররা থাকবে, তখন সেই গরীব ছাত্র-ছাত্রীদের দারিদ্র্যতার জন্য ভবন নির্মাণে ব্যয় করা যাবে (ফকীর বা দরিদ্র ব্যক্তি ৮টি খাতের একটি)। অনুরূপ অন্যান্য মাদরাসাও নির্মাণ করা যাবে যখন মসজিদে দারস দেয়া সম্ভব হবে না। আল্লাহই সর্বাধিক অবগত (মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন, মাজমূ‘ঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসায়েল, ১৮তম খণ্ড, পৃ. ২৫২-২৫৩)।
প্রশ্নকারী : আকবার হোসাইন, যশোর।