উত্তর : ইসলামের মূলনীতি হল, কোন কিছু হারাম প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তা বৈধ বলে গণ্য হবে। শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে ছালাত পরিত্যাগ করা শরী‘আতসম্মত নয়। আলেমগণ বলেন, মসজিদ একবার নির্মিত হলে তা আল্লাহর ঘর হয়ে যায় এবং মুসল্লিদের জন্য ছালাত পড়া জায়েয হয়, যদিও তার নির্মাণের অর্থ সন্দেহযুক্ত হয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য, সুতরাং তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কারও ইবাদত করো না’ (সূরা আল-জিন: ১৮)। ইবনু তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোন মসজিদ হারাম অর্থ দিয়ে নির্মিত হয়, তবুও তাতে ছালাত শুদ্ধ হবে। কারণ একবার মসজিদ হয়ে গেলে তা আল্লাহর ঘর হিসাবে গণ্য হয়’ (মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ৩১/২০৬ পৃ.)। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি কোন হারাম সম্পদ মসজিদ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়, তাহলে এটি গুনাহ হবে; তবে মুছল্লীদের জন্য তাতে ছালাত পড়া হারাম হবে না’ (আল-মাজমূ‘, ৩/১৫৭ পৃ.)। সন্দেহের ভিত্তিতে ইবাদত বর্জন করা জায়েয নয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমরা সেই জিনিস ছেড়ে দাও যা সন্দেহজনক এবং যা সন্দেহমুক্ত তা গ্রহণ করো’ (তিরমিযী, হা/২৫১৮, সনদ ছহীহ)।
দ্বিতীয়তঃ বিদ‘আতকারী ইমামের পিছনে ছালাত পড়ার বিধান হল- মনে রাখতে হবে, বিদ‘আত দুই ধরনের। বিদ‘আতে মুকাফফিরাহ, যা কুফরের পর্যায়ে পড়ে, যেমন শিরক ও কুফরি বিশ্বাস এবং বিদ‘আতে মুফাসসিকাহ, যা বিদ‘আত হলেও কুফরের পর্যায়ে যায় না। ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ফাসিক বা বিদ‘আতকারী হলেও মুছল্লীরা যদি তাকে ইমাম হিসাবে গ্রহণ করে, তবে তার পিছনে ছালাত পড়তে হবে এবং জামা‘আতকে পরিত্যাগ করা যাবে না’ (আল-মাসায়েল লি আবি দাঊদ, হা/১১৭৪)। ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘বিদ‘আত যদি কুফর না হয়, তাহলে তার পিছনে ছালাত পড়া জায়েয। বিদ‘আত ছড়িয়ে পড়লে বিদ‘আতীদের পিছনে ছালাত না পড়লে অনেক সময় জামা‘আতই ছুটে যাবে, যা শরী‘আতের দৃষ্টিতে আরও বড় ক্ষতি’ (মাজমূ‘ঊল ফাতাওয়া, ২৩/৩৪৩ পৃ.)।
তবে, বিদ‘আত গুরুতর হলে করণীয় হল- আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা নেক কাজের আদেশ দাও এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করো’ (সূরা আলে ইমরান: ১১০)। যদি ইমামের বিদ‘আত শিরক বা কুফর হয়, তবে তার পিছনে ছালাত আদায় করা যাবে না। অন্য মসজিদ খোঁজতে হবে। যদি বিদ‘আত ছোটখাটো হয়, তবে জামা‘আতের সাথে ছালাত আদায় করাই উত্তম।
প্রশ্নকারী: আরিফ, কিশোরগঞ্জ।