উত্তর: ফরয ছালাতের পর যিকির, তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর, দরূদ এবং সবশেষে সাধারণ দু‘আও করা যায়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَلَاةَ فَاذْكُرُوْا اللّٰهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلَى جُنُوْبِكُمْ ‘যখন তোমরা ছালাত শেষ করবে তখন আল্লাহর যিকির করো, দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে’ (সূরা আন-নিসা: ১০৩)। রাসূল (ﷺ)ও একাধিক হাদীছে ছালাতের সালাম ফিরানোর পর যিকির, তাসবীহ, তাহলীল করার কথা বলেছেন। আর মুনাজাত বা বিশেষ দু‘আর সময় ছিল সালামের পূর্ব পর্যন্ত। উল্লেখ্য যে, ‘দুবুরুছ ছালাত’ বা ছালাতের পর দু‘আ করা বলতে মূলত তাশাহহুদে বসে সালাম ফিরানোর আগ পর্যন্ত দু‘আ করাকে বুঝায়। যেমন একদা রাসূল (ﷺ)-কে প্রশ্ন করা হল,
أَىُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟ قَالَ جَوْفُ اللَّيْلِ الآَخِرِ وَدُبُرُ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوْبَاتِ
‘কোন্ দু‘আ সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য? তিনি বললেন, ‘রাতের শেষাংশে এবং ফরয ছালাত সমূহের পরে’ (ছহীহ তিরমিযী, হা/৩৪৯৯, ২/১৮৭ পৃ., ‘দু‘আ সমূহ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৯, সনদ হাসান; মিশকাত, হা/৯৬৮)।
‘দুবুরুছ ছালাত’ বা ছালাতের পিছে বলতে দু’টি অর্থ বুঝায়। যে হাদীছে দুবুরুছ ছালাত বলে দু‘আর কথা এসেছে, তার অর্থ হবে ছালাতের শেষে সালাম ফিরানোর আগে। আর যে হাদীছে যিকিরের কথা এসেছে, তার অর্থ হবে সালামের পর। ‘দুবুরুছ ছালাত’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে, সে সম্পর্কে শায়খ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)-কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ছালাতের পরে বলতে ছালাতের শেষে সালামের পূর্বে বুঝায় এবং প্রত্যক্ষভাবে সালামের পরেও বুঝায়। এ বিষয়ে অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে বেশীর ভাগ যা প্রমাণ করে, তা হল- ছালাতের শেষে বলতে সালামের আগে, যে হাদীছগুলো দু‘আর সাথে সম্পৃক্ত’। অতঃপর তিনি বলেন, ‘আর অনেক ছহীহ হাদীছে বর্র্ণিত যিকির সমূহ দ্বারা যা প্রমাণিত হয়েছে, তা হল- ছালাতের পিছনে বলতে সালামের পর’ (শায়খ বিন বায, মাজমূউ ফাতাওয়া, ১১/১৯৪ পৃ.)।
অন্যত্র শায়খ বলেন, সালামের পর যিকির, তাসবীহ, তাহলীল করার পর দু‘আও করা যায়। কারণ সাধারণ দু‘আ করারও প্রমাণ রয়েছে (মাজমূউ ফাতাওয়া, ১১/১৯৮ পৃ.)। তাছাড়া তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর, যিকিরকেও ব্যাপকতার দৃষ্টিতে দু‘আ বলা হয় (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩২৯, ২/৯৩৭ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হি.)ও ‘দুবুরুছ ছালাত’ বলতে উপরিউক্ত দু’টি অর্থই নিয়েছেন (মাজমূঊল ফাতাওয়া ২২/৫১৬-১৭ পৃ.)। তিনি আরো বলেন,
وَإِنَّمَا الْمَسْنُوْنُ عَقِبَ الصَّلَاةِ هذَا الذِّكْرُ الْمَأْثُوْرُ عَنِ النَّبِىِّ r مِنَ التَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ كَمَا كَانَ النَّبِىُّ r يَقُوْلُ عَقِبَ الصَّلَاةِ.
‘ছালাতের পর সুন্নাত হল- হাদীছে বর্ণিত যিকির, তাকবীর, তাহলীল করা, যা রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনিও যেগুলো ছালাতের পর বলতেন’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ২২/৫১৯ পৃ.)। ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) (৬৯১-৭৪১ হি.) বলেন, ‘মূলত সাধারণ দু‘আসমূহ ছালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট, যা মুছল্লী ছালাতের মধ্যেই করেছে। আর ছালাতের মধ্যে দু‘আ করার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। মুছল্লী হিসাবে এটাই যথোপযুক্ত। কেননা সে যতক্ষণ ছালাতের মধ্যে থাকে ততক্ষণ সে তার রবের সম্মুখে থেকে তাঁর সঙ্গে মুনাজাত করে। যখনই সে সালাম ফিরায়, তখনই মুনাজাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। উক্ত অবস্থানই হল রবের সামনে দাঁড়ানো ও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য উপযোগী’ (ইবনুল ক্বাইয়িম, যাদুল মা‘আদ, ১/২৪৯-২৫০ পৃ.)।
আল্লামা শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালেহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যিকির করতে হবে সালামের পর। যেমন মহান আল্লাহর বাণী, ‘তোমরা যখন ছালাত সমাপ্ত করবে, তখন আল্লাহর যিকির কর- দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে’ (সূরা আন-নিসা: ১০৩)। এর দ্বারা প্রমাণ হয় যে, যিকির হল সালামের পরে আর দু‘আ হল সালামের আগে, যা হাদীছ-কুরআন উভয়টি দ্বারা প্রমাণিত। এর অর্থও তাই, কেননা মুছল্লী ততক্ষণ আল্লাহর সামনে অবস্থান করে যতক্ষণ সে ছালাতে রত থাকে। তখন মুছল্লী তার রবের সাথে মুনাজাত করে। যেমনটি রাসূল (ﷺ) বলেছেন। আর যখন সে সালাম ফিরায় তখন উক্ত মুনাজাত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সুতরাং তুমি যখন আল্লাহর সাথে মুনাজাত করা থেকে ফিরে গেলে, তখন আমরা কিভাবে দু‘আর কথা বলতে পারি? জ্ঞানসম্পন্ন কথা এটাই প্রমাণ করে যে, সালামের পূর্বেই তুমি দু‘আ করবে যতক্ষণ তুমি তোমার রবের সাথে মুনাজাত করো। আর এ কথাই বলেছেন ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ) এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ)। আর সেটাই সঠিক, যা দলীল এবং জ্ঞান উভয় দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে’ (মাজমূউ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১৩/২৪৬ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মুবারক, দিনাজপুর।