উত্তর : মোজার উপর মাসাহ করা জায়েয, যদি সে মোজাদ্বয় পায়ের টাকনুদ্বয়কে আচ্ছাদিত করে রাখে এবং মোজাদ্বয় পরিপূর্ণ পবিত্র অবস্থায় পরিধান করা হয় (তিরমিযী হা/৯৮, সনদ ছহীহ)। অর্থাৎ যে পবিত্রতা অর্জনের সময় পা-দ্বয় ধৌত করা হয়েছে। এরপর চাইলে মোজাদ্বয়ের ওপর মাসাহ করতে পারবে। চামড়ার মোজা কিংবা মোটা কাপড়ের মোজার উপর মাসাহ করার সময়কাল শুরু হয় প্রথমবার ওযূ ভাঙ্গার পর প্রথমবার মাসাহ করা থেকে। প্রথমবার মোজা পরিধানের সময় থেকে নয়। মোজাদ্বয় যদি প্যান্টের সাথে লেগে থাকে তাতে কোন অসুবিধা নেই। এ ধরণের প্যান্ট পরা ইসবাল (টাকনুর নিচে পোশাক পরিধান) হিসাবে গণ্য হবে না (ইসলাম সাওয়াল ওয় জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩০৯৬৯১, ১২৭৯৬)।
মাসাহ করার পদ্ধতি : দুই হাতের ভেজা আঙ্গুলগুলো দুই পায়ের আঙ্গুলের উপর রাখবে। এরপর হাত দু’টি পায়ের গোছার দিকে টেনে আনবে। ডান পা ডান হাত দিয়ে মাসাহ করবে, বাম পা বাম হাত দিয়ে মাসাহ করবে। মাসাহ করার সময় হাতের আঙ্গুলগুলো ফাঁকা ফাঁকা করে রাখবে। একাধিকবার মাসাহ করবে না’ (আল-মুলাখ্খাছ আল-ফিক্বহ, ১/৪৩ পৃ.)।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ মোজার উপরের অংশ মাসাহ করতে হবে। শুধু পায়ের আঙ্গুলের দিক থেকে পায়ের গোছার দিকে হাত টেনে আনবে। একত্রে দুই হাত দিয়ে দুই পা মাসাহ্ করবে। অর্থাৎ ডান হাত দিয়ে ডান পা মাসাহ করবে এবং একই সময়ে বাম হাত দিয়ে বাম পা মাসাহ করবে। যেমনটি দুই কান মাসাহ করার ক্ষেত্রেও করা হয়। কেননা সুন্নাহ থেকে বাহ্যিকভাবে এটাই জানা যায়। দলীল হল মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর উক্তি, ‘তিনি দুই পায়ের উপর মাসাহ করেছেন’। তিনি এ কথা বলেননি যে, ডান পা দিয়ে শুরু করেছেন। বরং বলেছেন, ‘দুই পায়ের উপর মাসাহ করেছেন’। এ কারণে সুন্নাহ থেকে বাহ্যিকভাবে এটাই জানা যায়। হ্যাঁ, যদি এমন হয় যে, তার এক হাত কাজ করে না সেক্ষেত্রে সে বাম পায়ের আগে ডান পা মাসাহ করে তাহলে ঠিক আছে। অনেক মানুষ দুই হাত দিয়ে ডান পা মাসাহ করে অতঃপর দুই হাত দিয়ে বাম পা মাসাহ করে, কিন্তু এর কোন ভিত্তি নেই। তবে ব্যক্তি মোজার উপরের অংশ যেভাবেই মাসাহ করুক না কেন সেটা জায়েয হবে। আমরা এখানে যেটা আলোচনা করেছি সেটা হচ্ছে কোন্টি পদ্ধতি উত্তম সে সম্পর্কে (ফাতাওয়া আল-মারআতুল মুসলিমাহ, ১/২৫০ পৃ.)।
উল্লেখ্য, মোজার দুই পার্শ্ব কিংবা পেছনের অংশ মাসাহ করবেন না। যেহেতু এ বিষয়ে কোন দলীল নেই। শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কেউ হয়ত বলতে পারে যে, বাহ্যিক দৃষ্টিতে মোজার উপরের অংশ মাসাহ করার চেয়ে নিচের অংশ মাসাহ করা অধিক যুক্তিযুক্ত। কারণ নিচের অংশে মাটি ও ময়লা লাগে। কিন্তু আমরা চিন্তাভাবনা করে পেয়েছি মোজার উপরের অংশ মাসাহ করা অধিক যুক্তিযুক্ত এবং বিবেক-বুদ্ধিসম্মত। কারণ এ মাসাহ দ্বারা পরিষ্কার করা বা নির্মল করা উদ্দেশ্য নয়। এর দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি ইবাদত পালন করা। যদি আমরা মোজার নিচের অংশ মাসাহ করতাম তাহলে তো মোজা আরও বেশি ময়লা হয়ে যেত। আল্লাহই ভাল জানেন’ (আল-শারহুল মুমতি‘, ১/২১৩ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : উমর ফারুক, দিনাজপুর।