উত্তর : আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
لاَ يَحِلُّ سَلَفٌ وَبَيْعٌ وَلَا شَرْطَانِ فِيْ بَيْعٍ وَلَا رِبْحُ مَا لَمْ يُضْمَنْ وَلَا بَيْعُ مَا لَيْسَ عِنْدَكَ.
‘ঋণ ও বিক্রয় একত্রে জায়েয নয় এবং দুই প্রকারের শর্তও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জুড়ে দেয়া জায়িয নয়, মুনাফা গ্রহণও জায়েয নয় যতক্ষণ না লোকসানের দায়িত্ব না নেয়া হয়, তোমার আয়ত্তে নেই এমন বস্তু বিক্রয় করাও জায়েয নয়’ (তিরমিযী, হা/১২৩৪; আবূ দাঊদ, হা/৩৫০৪)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় আব্দুর রহমান মুবারাকপুরী (রাহিমাহুল্লাহ), শাইখ মুহাম্মাদ শামসুল হক্ব আল-আযীমাবাদী (রাহিমাহুল্লাহ) ও শাইখ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘মানুষের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন সুবিন্যস্ত করার ব্যাপারে, তাদের অধিকার রক্ষা করার ব্যাপারে এবং তাদের মধ্যে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারেও ইসলাম গভীর গুরুত্বারোপ করেছে। এই হাদীছের মধ্যে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, لَا يَحِلُّ سَلَفٌ وَبَيْعٌ ‘ঋণ ও বিক্রয় একত্রিত করা হালাল নয়’ অর্থাৎ তিনি শর্তসাপেক্ষে ক্রয়-বিক্রয় করতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ আপনি যখন কোন জিনিস বিক্রয় করছেন, তখন ক্রেতাকে বলছেন, ‘আমি আপনার কাছে বিক্রয় করতে পারি এই শর্তে যে, আপনি আমাকে এতো টাকা ঋণ দেবেন’, অথবা বলা হল যে, ‘আপনি আমাকে এটি ধার দিন, অতঃপর তার কিছু অংশ বাজার মূল্যের চেয়ে অধিক দামে বিক্রি করলেন’। দু’টি পদ্ধতিই সূদের অন্তর্ভুক্ত। কেননা এমন প্রত্যেকটি ঋণ, যা লাভ আনয়ন করে সেটিই সূদ। অথবা কাউকে ধার দেয়ার সময় বা ধারে কোন জিনিস বিক্রয় করার সময় ঋণগ্রহীতাকে বলা হল- ‘যদি আপনি ঋণ পরিশোধ অথবা এটির বিনিময় পরিশোধ করতে সক্ষম না হন, তাহলে আপনি আমার কাছে এটি এতো টাকায় বিক্রয় করবেন’ এবং (وَلاَ شَرْطَانِ فِي بَيْعٍ) ‘একটি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে দুই প্রকারের শর্ত জুড়ে দেয়াও জায়েয নয়’।
এর উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ‘ধরুন একটি পণ্য ধারে একরকম মূল্যে বিক্রয় করা হল, অতঃপর নগদে অন্য মূল্যে তার থেকে ক্রয় করা হল। এক্ষেত্রে বাজার মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত নিলে সেটি সূদের অন্তর্ভুক্ত হবে। এটিকেই ‘বাইয়ে ঈনাহ’ বলা হয়’ (আবূ দাঊদ, হা/৩৪৬২)। অর্থাৎ প্রকৃত মূল্যের চেয়ে ধারে অধিক মূল্যে ক্রয়-বিক্রয় করা। এর অর্থ হল- একটি বস্তু কাউকে ধারে একরকম দামে বিক্রয় করা এবং সেই জিনিসটাই তার কাছ থেকে তার থেকে কম দামে ক্রয় করা (আল-মাউসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ৯/৯৬ পৃ.)। যেমন কেউ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দশ টাকায় কিছু বিক্রয় করল এবং ঐ সময় শেষ হওয়ার পর তা আট টাকায় ক্রয় করে নিল। তাকে বলা হল যে, ‘আমি আপনাকে এই কাপড়টি নগদে এক দীনারে বিক্রয় করব, আর ধারে হলে দুই দীনারে’। এখানে দু’টি শর্ত রাখা হয়েছে। অথবা বলা হল যে, ‘আমি আপনাকে এই জামাটি বিক্রয় করেছি এবং আমি-ই সাইজ মাপে সেলাই করে ছোট করে দেবো’। এরূপ শর্ত সম্পর্কে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কেউ জায়েয বলেছেন আবার কেউ নাজায়েয। তবে হাদীছের অর্থের দিক দিয়ে প্রথম পদ্ধতিটিই অধিক নিকটবর্তী মনে হচ্ছে। অর্থাৎ এটি ‘বাইয়ে ঈনাহ’-এর অন্তর্ভুক্ত। আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি একই দ্রব্য বিক্রয়ে দু’রকম নিয়ম রাখে তাকে দু’মূল্যের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যই গ্রহণ করতে হবে, নতুবা তা হবে সূদ’ (আবূ দাঊদ, হা/৩৪৬১; তুহ্ফাতুল আহওয়াযী বি শারহি জামিঈত তিরমিযী, আওনুল মা‘বূদ, ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩৫৭৮৭২)।
প্রশ্নকারী : আব্দুস সালাম, সঊদী আরব।