উত্তর : ইসলাম বিদ্বেষী, ইসলামের চিরশত্রু, ইসলামের দুশমন কোন কাফির অথবা ভয়ঙ্কর বিদ‘আতী অথবা প্রকাশ্য গুনাহকারী ব্যক্তি মারা গেলে আনন্দ প্রকাশ করা বা আল-হামদলিল্লাহ পাঠ করা জায়েয। কারণ, ইসলামের দুশমনদের ধ্বংস মুসলিমদের জন্য এমনকি গাছপালা ও পশুপাখির জন্যও একটি নে‘মত। এ মর্মে কুরআন ও সুন্নাহর দলীল এবং সালাফদের আমল রয়েছে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৫৪৭২৭)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নে‘মত ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন শত্রুবাহিনী তোমাদের বিরুদ্ধে সমাগত হয়েছিল এবং আমি ওদের বিরুদ্ধে ঝড় এবং এমন সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেছিলাম, যা তোমরা দেখতে পাওনি। আর তোমরা যা কর, আল্লাহ তার দ্রষ্টা’ (সূরা আল-আহযাব: ৯)। উপরিউক্ত আয়াতের মধ্যে বলা হয়েছে যে, ইসলামের দুশমনদের ধ্বংস করাটাও আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মুসলিমদের উপর একটি বিশাল বড় নে‘মত। সুতরাং মুসলিমদের উপর অপরিহার্য এর জন্য আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করা।
আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘কিছু সংখ্যক ছাহাবী একটি জানাযার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তাঁরা তার প্রশংসা করলেন। তখন নবী (ﷺ) বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেল। একটু পরে অপর একটি জানাযা অতিক্রম করলেন। তখন তাঁরা তার নিন্দাসূচক মন্তব্য করলেন। (এবারও) নবী (ﷺ) বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেলে। তখন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! কী ওয়াজিব হয়ে গেল? তিনি বললেন, এ (প্রথম) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা উত্তম মন্তব্য করলে, তাই তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে গেল। আর এ (দ্বিতীয়) ব্যক্তি সম্পর্কে তোমরা নিন্দাসূচক মন্তব্য করায় তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়ে গেল। তোমরা তো পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৬৭, ২৬৪২; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৪৯)। ক্বাতাদা ইবনু রিবঈ আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একবার রাসূল (ﷺ)-এর পাশ দিয়ে একটি জানাযা নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি বললেন, সে সুখী অথবা (অন্য লোকেরা) তার থেকে শান্তি লাভকারী। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ‘মুস্তারিহ’ ও ‘মুস্তারাহ মিনহু’-এর অর্থ কী? তিনি বললেন, মুমিন বান্দা দুনিয়ার কষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর রহমতের দিকে পৌঁছে শান্তি প্রাপ্ত হয়। আর গুনাহগার বান্দার আচার-আচরণ থেকে সকল মানুষ, শহর-বন্দর, বৃক্ষলতা ও জীবজন্তু শান্তি প্রাপ্ত হয়’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৫১২, ৬৫১৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৫০)।
উপরে বর্ণিত হাদীছে অত্যাচারী, পেশী শক্তি ব্যবহারকারী যালিমের মৃত্যুতে মুমিন বান্দার শান্তি লাভের কথা বলা হয়েছে। আর শান্তি ও খুশির খবরে আল-হামদুলিল্লাহ বলতে কোন সমস্যা নেই (শারহুল মুসলিম লিন নববী, ৭/২০-২১; আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া, ১২/৩৩৮ পৃ.)। সুতরাং কোন চিহ্নিত, পরিচিত, প্রসিদ্ধ ও সুনির্দিষ্ট যুলুমকারী, অত্যাচারী, নির্যাতনকারী ও পেশী শক্তি ব্যবহারকারী যালিমের মৃত্যুতে খুশি হওয়া জায়েয। সেই হিসাবে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ বলাও যাবে। তবে কারো ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে পেশী শক্তি ব্যবহারকারী, যালিম হওয়া প্রমাণিত না হলে সন্দেহের বশে কোন মুসলিমের মৃত্যুতে খুশি প্রকাশ করা জায়েয নয়। তবে যালিম ও অত্যাচারী হওয়া নিশ্চিত হলে জায়েয আছে (তারীখে বাগদাদ, ১০/৩৮২ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ, ভারত।