উত্তর : শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছগুলোকে একজন মুহাদ্দিছও ছহীহ বলেননি। বরং বিদ্বানগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, হাদীছগুলো মিথ্যা ও তৈরিকৃত এবং সেগুলো কোন নির্ভরযোগ্য হাদীছ গ্রন্থে বর্ণিত হয়নি (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, ৪/৩২৫-৩২৭ পৃ.)। মুহাদ্দিছগণ বলেন, এ সম্পর্কে বর্ণিত একটি হাদীছও ছহীহ নয় বরং সবগুলোই জাল, অত্যধিক দুর্বল ও বানোয়াট’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৭১৭০)। ইমাম ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘নিঃসন্দেহে হাদীছটি জাল ও বানোয়াট’ (আল-মাওযু‘আত ২/১১, ১/২৮৩ পৃ.)। ইমাম সাখাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছগুলো খুবই দুর্বল, ভিত্তিহীন ও ত্রুটিপূর্ণ’ (আল-আযওয়াবাতুল মুরজিয়াহ, ৩/৯৬৮ পৃ.)। ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘রাসূল (ﷺ)-এর পিতা-মাতার ঈমান নিয়ে আসা বিষয়ক হাদীছগুলো জাল ও বানোয়াট এবং এই আক্বীদা কুরআনের মূল ভাবধারার বিপরীত’ (আত-তাযকিরাতু বি আহ্ওয়ালিল মাওতা ওয়াল আখিরাহ, পৃ. ১৪০-১৪১)। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছটি জাল ও বানোয়াট’ (আল-ফাওয়ায়িদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদিছিল মাওযূ‘আহ, পৃ. ৩২২)।
দ্বিতীয়তঃ এটি কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ্র বিরোধী। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তাওবাহ্ তাদের জন্য নয় যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, ‘আমি এখন তাওবাহ্ করছি’ এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা যাদের জন্য আমি কষ্টদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করেছি’ (সূরা আন-নিসা : ১৮)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, فَبَيَّنَ اللهُ تَعَالَى أَنَّهُ لا تَوْبَةَ لِمَنْ مَاتَ كَافِرًا ‘সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট করে বলে দিলেন যে, নিশ্চয় যে কাফির অবস্থায় মারা যায় তার জন্য তওবাহ্ নেই (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, ৪/৩২৫-৩২৭ পৃ.)। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার পিতা কোথায় আছেন (জান্নাতে না জাহান্নামে)? রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘জাহান্নামে। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি যখন চলে যেতে লাগল, তখন তিনি তাকে ডাকলেন এবং বললেন, إِنَّ أَبِي وَأَبَاكَ فِي النَّارِ ‘আমার পিতা এবং তোমার পিতা জাহান্নামে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২০৩, ৩৮৮; আবূ দাঊদ, হা/৪৭১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২১৯২, ১৩৮৩৪)। তাই এ সমস্ত জাল ও বানোয়াট হাদীছ বর্ণনা করা যাবে না।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ মাযহার, বগুড়া।