উত্তর : ওয়াহ্হাবী শব্দটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র থেকে উৎপত্তি হয়েছে। এটি কোন নতুন মাযহাব নয়। প্রচলিত চার মাযহাবের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। হানাফী, মালেকী, শাফেঈ ও হাম্বলী মাযহাবের মত কেউ ওয়াহহাবী বলে পরিচয় দেয় না। অথচ বিধর্মীরা ও বিদ‘আতীরা সালাফী মানহাজের অনুসারী আহলেহাদীছদের ‘ওয়াহহাবী’ নামে আখ্যায়িত করে অপপ্রচার চালায়।
রাসূল (ﷺ)-এর দাওয়াতী ও তাবলিগী কর্মপদ্ধতি ও কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ)-এর দাওয়াতী ও তাবলীগী কর্মপদ্ধতি ও কর্মক্ষেত্রের বৃহৎ অংশই সামঞ্জস্যপূর্ণ। উছমানীয় সাম্রাজ্যের প্রভাবে সর্বাধিক পবিত্র নগরী খোদ মাক্কা-মাদীনাতেও ক্ববর, মাযার ও স্মৃতি সৌধের মত শিরকের বিস্তার হয়। তখনই মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেন। হাদীছের ভাষ্য অনুযায়ী ১২০০ হিজরী শতক বা ১৭০০ খ্রিষ্টীয় শতকের সংস্কারক ছিলেন শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব (রাহিমাহুল্লাহ)। যখন সঊদী আরবের মুসলিমরা জাহিলিয়্যাতের যুগের ন্যায় পুনরায় শিরকের গভীর গহীনে হাবুডুবু খাচ্ছিল। ঠিক তখনই শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) আরবের বুক থেকে শিরক ও বিদ‘আতকে উৎখাত করে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন এবং এই সংগ্রামে সফল হন।
এরপর থেকেই মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব নামটি মাযার পূজারী, কবর পূজারী, শিরককারী ও বিদ‘আতীদের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে, যখনই কেউ কবর, মাযার বা বিদ‘আতের প্রতিবাদ করে, তখন তাঁকে ওয়াহহাবী, নবীর দুশমন ইত্যাদি অপবাদ দিয়ে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।
বর্তমানেও মাযার পূজারী, পীর পূজারী ও বিদ‘আতীরা সাধারণ মানুষের অন্তরে ঘৃণা তৈরি করার জন্য আহলেহাদীছদের নামে বিভিন্ন প্রকারের অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। ‘ওয়াহহাবী’ নামকরণটি এ আন্দোলনের উদ্যোক্তা মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব বা তাঁর অনুগামীদের প্রবর্তিত নয়। পরবর্তী ঐতিহাসিকরা বিদ্বেষবশতঃ এ আন্দোলনকে এই নামে পরিচিত করে তুলেছে। এটা মূলত এ আন্দোলনের বিরোধীদের পক্ষ থেকে গালি স্বরূপ ব্যবহার করা হয়। হাসান ইবনু আব্দুল্লাহ আলে শায়খ এ সম্পর্কে বলেন, ‘ওয়াহহাবিয়্যাহ বিশেষণটি এ আন্দোলনের অনুগামীরা সৃষ্টি করেনি। বরং তাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদেরকে পৃথক করার জন্য এটা ব্যবহার করে যেন মানুষ তাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকে এবং শ্রোতারা মনে করে যে, এ আন্দোলন প্রচলিত বড় বড় চারটি মাযহাবের বিপরীতে পঞ্চম একটি মাযহাব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। তবে এ আন্দোলনের কর্মীরা নিজেদেরকে ‘সালাফী’ এবং তাদের দাওয়াতকে ‘সালাফী দাওয়াত’ বলে আখ্যায়িত করাকেই অধিক পসন্দ করতেন (আল-ওয়াহহাবিয়াহ ওয়া যাঈমুহা মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহহাব, ৮/৮২১ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : উমর ফারুক, লন্ডন।