উত্তর : সালাফদের মানহাজ বলতে উদ্দেশ্য হল, যে আদর্শের উপর ছাহাবায়ে কিরামগণ, তাবিঈগণ ও তাবি‘ তাবিঈগণ ছিলেন এবং দ্বীনের সেই ইমামগণ, যাদের ইমাম হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করা হয়েছে, দ্বীনে তাঁদের বিশাল মর্যাদা বিদিত হয়েছে এবং তাঁদের বাণীকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল যুগের মানুষই সাদরে গ্রহণ করেছে। তারা নয়, যাদেরকে বিদ‘আতী আখ্যায়িত করা হয়েছে অথবা যারা অসন্তোষজনক উপাধি নিয়ে প্রসিদ্ধ হয়েছে। যেমন খাওয়ারিজ, রাওয়াফিয, ক্বাদারিয়্যাহ, মুরজি‘আহ্, জাবারিয়্যাহ্, জাহমিয়্যাহ, মু‘তাযিলাহ, কারামিয়্যাহ প্রভৃতি সম্প্রদায়’ (লাওয়ামিউল আনওয়ার, ১/২০ পৃ.)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ‘আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি (অর্থাৎ ছাহাবীরা)। অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (অর্থাৎ তাবিঈরা)। অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (অর্থাৎ তাবি‘ তাবিঈরা)...’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৬৫২, ৩৬৫১, ৬৪২৯, ৬৬৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৩৩, ২৬৩৪)।
অর্থাৎ ছাহাবীদের যুগ, তাবিঈদের যুগ এবং তাবি‘ তাবিঈদের যুগের ব্যক্তিদেরই সালাফে ছালিহীন বুঝানো হয়েছে। অনুরূপভাবে পরবর্তী যুগের হিদায়াতপ্রাপ্ত, সত্যবাদী ও ন্যায়পরায়ণ ইমামগণও শামিল। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ছাহাবায়ে কিরাম এবং তাঁদের অনুগামী তাবিঈন এবং তাঁদের অনুগামী তাবি‘-তাবিঈন ও দ্বীনের ইমামগণের অনুসরণ করে ছহীহ হাদীছের সিদ্ধান্তকে মাথা পেতে গ্রহণ করে, কুরআন ও হাদীছকে তাঁদের বুঝ অনুযায়ী বোঝে এবং সেই মত আমল করে। তাওহীদে, ধর্মবিশ্বাসে, ইবাদতে, আচার-আচরণে, দাওয়াত ও তাবলীগে, শুধু তাঁদেরই অনুসরণ করে, সেই হল প্রকৃত সালাফী। সেই-ই হল সালাফী মানহাজ ও আদর্শের অনুসারী।
বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এ ব্যাপারে সে নির্দিষ্টভাবে কোন একজনের অন্ধানুকরণ করে না, বরং আলেমদের অনুসরণ করে এবং দলীলপুষ্ট ও যুক্তিযুক্ত মতটিকে গ্রহণ করে। শায়খুল ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম আবুল মুযাফফার সাম‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আমরা সুন্নাতের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং বিদ‘আত হতে আমাদেরকে নিষেধ ও তিরষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের প্রতীক হল, সালাফে ছালিহীনদের অনুসরণ করা এবং প্রত্যেক নব উদ্ভূত ও বিদ‘আতকে বর্জন করা (ছাওনুল মানত্বিক, পৃ. ১৫৮)।
সালাফদের বুঝের আলোকে শরী‘আত বুঝা অপরিহার্য। আল্লাহ তা‘আলা এ সম্পর্কে বলেন,
وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُ الۡہُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّہٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِہٖ جَہَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا
‘আর যে ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা কত মন্দ আবাস!’ (সূরা আন-নিসা: ১১৫)। রাসূল (ﷺ)ও জানিয়ে দিয়েছেন, যারা ছাহাবী তথা সালাফদের মানহাজে চলবে তারা সঠিক পথের উপর অবিচল থাকবে। তিনি বলেন, ‘আমার উম্মাত ৭৩ দলে বিভক্ত হবে। শুধু একটি দল ছাড়া তাদের সব দলগুলোই জাহান্নামী হবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! সে দল কোন্টি? তিনি বললেন, ‘আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপর প্রতিষ্ঠিত’ (তিরমিযী, হা/২৬৪১; মিশকাত, হা/১৬৯, ১৭১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৩৪৮; ছহীহুল জামি‘, হা/৫৩৪৩)। অন্যত্র তিনি বলেন, من كان على مثل ما أنا عليه وأصحابي ‘সে দল ব্যতীত যারা আমার ও আমার ছাহাবীদের মানহাজের/পদ্ধতির উপরে রয়েছে তারা বিভ্রান্ত জাহান্নামী ৭৩ ফিরক্বার দলভুক্ত হবে না’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৪/২৬৪ পৃ.)। ইমাম ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
فمن أحب الكون مع السلف في الآخرة، وأن يكون موجودا بما وعدوا به من الجنات والرضوان؛ فليتبعهم بإحسان، ومن اتبع غير سبيلهم؛ دخل في عموم قوله تعالى:- وَ مَنۡ یُّشَاقِقِ الرَّسُوۡلَ مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُ الۡہُدٰی وَ یَتَّبِعۡ غَیۡرَ سَبِیۡلِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ نُوَلِّہٖ مَا تَوَلّٰی وَ نُصۡلِہٖ جَہَنَّمَ ؕ وَ سَآءَتۡ مَصِیۡرًا
‘যে ব্যক্তি পরকালে সালাফদের সাথে থাকতে এবং তাঁদেরকে যে জান্নাত ও সন্তুষ্টির প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা নিজের জন্য পেতে চায়, সে যেন তাদের যথাযথভাবে অনুসরণ করে। আর যে তাঁদের পথ ভিন্ন অন্য কোন পথের অনুসরণ করে সে আল্লাহ তা‘আলার এই ব্যাপক বিধানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে, ‘যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রাসূল (ﷺ)-এর বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাব যে পথে সে ফিরতে যায়, আর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাব, আর তা কতই না মন্দ গন্তব্যস্থল!’ (সূরা আন-নিসা: ১১৫; যাম্মুত তা'বীল, পৃ. ১০)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ হুমায়ূন কবীর, পূর্বাচল, ঢাকা।