বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৯ পূর্বাহ্ন

 প্রফেসর এ কে এম শামসুল আলম স্যারের টাইমলাইন থেকে

সুখ-দুঃখের সাতকাহন


(১)

১৯৭৯ সাল, আমি তখন রাবির (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের) আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং হাবিবুর রহমান হলের হাউস টিউটর। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাবার আশায় বেশ কটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনও পাঠিয়েছি, দীর্ঘ দিন কোন জবাব না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি, অবশেষে বৃটেনের সোয়াস (স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ) থেকে একটা জবাব পেলাম, তারা গবেষণা-কর্মের শিরোনাম ও সুপারভাইজার নির্ধারণ ও তাঁর সম্মতিপত্র সহ আবেদন করতে বলেছেন, এ বিষয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. আফতাব আহমাদ রহমানী স্যারের পরামর্শ চাইলাম। স্যার বললেন, এটা তো  লং প্রসেস, তাছাড়া এরা তোমাকে যে স্কলারশিপ দেবে তা পরিমাণে খুব সামান্য, পার্ট  টাইম জব ছাড়া তুমি চলতেই পারবে না। যেহেতু তুমি আরবির শিক্ষক, সঊদী আরবের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলে, আর যাই হোক আরবি শিখে আসতে পারবে। 

বহু প্রতীক্ষার পর অবশেষে ‘কিং আব্দুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ে’র উম্মুল ক্বুরা শাখা, মক্কা মুকাররমা থেকেও  একটি জবাব আসল। আমি সঊদী দূতাবাসের মাননীয় রাষ্ট্রদূত ফুয়াদ আব্দুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম। তিনি বললেন, অভিনন্দন তোমাকে, তবে ঢাকা দূতাবাস থেকে নয় করাচীতে অবস্থিত সঊদী কনস্যুলেট থেকে তোমাকে ভিসা নিতে হবে, সেখানে তোমার জন্য এয়ার টিকেটও পাঠানো হয়েছে। কারণ বাংলাদেশে এখনও কনস্যুলেট অফিস খোলা হয়নি।

আমি পাকিস্তান দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করলাম। তারা বললেন, রিটার্ন টিকেট এবং এনওসি লাগবে। আমি বললাম, যেহেতু আমি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এনওসি লাগবে, খুবই যৌক্তিক কথা, কিন্তু করাচী থেকে আমি সঊদী আরব যাব, বাংলাদেশে ফিরে আসব না, তা সত্ত্বেও রিটার্ন টিকেট কেন? আমার যুক্তি শুনে সংশ্লিষ্ট অফিসার বললেন, ‘এটা সরকারের নির্দেশ, আমাদের করার কিচ্ছু নেই’।

রাজশাহীতে ফিরে আসলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাডি-লিভ পেতে যে এতো সব ঝুঁকি-ঝামেলা হয়, সে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলাম। শিক্ষাশেষে ফিরে আসার বন্ড সাক্ষর করতে হল। ছ’মাসের অগ্রীম বেতন উঠিয়ে করাচী যাওয়ার টিকিট সংগ্রহ এবং পাকিস্তানের ভিসা পেলাম, এক ছেলে এক মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে গঠিত ছোট পরিবারটিকে বগুড়ায় শ্বশুর বাড়িতে  রেখে নির্দয়ভাবে বেরিয়ে পড়লাম, মনে মনে উচ্চারণ করছিলাম, উফাব্বিযু আমরী... আমি আল্লাহর কাছেই আমার বিষয় সোপর্দ করছি, তিনিই বান্দার সব কিছু সূক্ষ্ম দর্শনকারী।

জীবনের প্রথম বিমান আরোহণ

২৭ জানুয়ারি, ১৯৮০ তখনও নতুন এয়ারপোর্ট  হয়নি, তেজগাঁও এ পুরাতন এয়ারপোর্টে পৌঁছে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ভেতরে যাওয়ার কথা ভাবছি, হঠাৎ দেখি বিভাগীয় চেয়ারম্যান রহমানী স্যার। আরো চমক যে, তিনি তাঁর স্যারকেও সঙ্গে করে এসেছেন, স্যারদের স্যার ড. সিরাজুল হক, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দশকের ছাত্র ছিলেন, (১৯২৬-২৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়ে ১৯৩৩ সালে উত্তীর্ণ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন, যিনি একটানা ২২ বছর হেড অব দ্যা ডিপার্টমেন্ট ছিলেন, ১৯৬৮ সালে অবসরে যান।) সালাম মুছাফাহা করে কিছু হালকা পানীয় পান করানোর সাহস দেখালাম। বড় স্যার বললেন, ‘আমার বহু ছাত্রকে সিঅফ করেছি, আব্দুল বারী, আইয়ূব আলী, মুস্তাফিজুর রহমান, আফতাব আহমদ রহমানী, আজ ছাত্রদের ছাত্রকে সিঅফ করতে এসেছি’।

আনন্দে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, আনন্দ-অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে আমার গাল বয়ে। ইশারাই তাদের বিদায় দিয়ে ভেতরে চলে গেলাম। সুপরিসর ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করছি, পি আই এ’র ফ্লাইটের সিডিউল ছিল বিকেল সাড়ে তিনটা। যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য বিলম্ব হবে মর্মে ঘোষণা হল, কত বিলম্ব হবে, ক্লিয়ার করে কেউ কিছু বলছে না। অন্যদিকে টেনশনে ভুলেই গেছি আজ কখন কী খেয়েছি! ভীষণ ক্ষুধা পেয়েছে, চড়া দামে বিমান বন্দরের কেক-বিস্কুট খাওয়ার চেষ্টা করলাম। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, যেন পানি পান করতেও কষ্ট হচ্ছে, অবশেষে নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা পর বিমানে আরোহণ করলাম, আল্লাহর শোকর আদায় করলাম। যানবাহনে চড়ার দু‘আটি পড়ার সময় মনে হল ‘সুবহানাল্লাযি সাখ্খারা লানা... একটা বিশাল শকট-যান কে মহান আল্লাহ মানুষের জন্য বাধ্য না করলে আকাশ ভ্রমণ কোন দিনই  সফলতার মুখ দেখতাম না, আলহামদুলিল্লাহ।

এই এক-দেড় ঘণ্টার ভ্রমণে ভালো খাবার পরিবেশন করেছিল, পিআইএ। সাড়ে আটটার সময় বিমান ল্যান্ড করল, এর পূর্বে করাচী শহরের উপর থেকে করাচী শহরের রাতের দৃশ্য দেখে আমি মনে মনে ঢাকার সাথে তুলনা করছিলাম, কত পরিকল্পনা মাফিক বানান, রাস্তাগুলো কত সোজা আর প্রশস্ত, রাস্তায় ছোট বড় বাতিগুলো আকাশের তারকারাজির মতই মনে হচ্ছিল।

জীবনের স্মরণীয় ও ভয়ানক এক সঙ্কট

করাচী বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আমি বাইরে এসে ট্যাক্সিতে আরোহণ করলাম, ভাড়া নির্ধারণ করতে চাইলে ড্রাইভার বলল, মিটার দেখে ভাড়া দিবেন। উল্লেখ্য যে, পাকিস্তানে তখন শরী‘আহ আইন চলছে বলে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি। কোন  অঘটনের শিকার হতে হবে, এমন কল্পনা মাথায়ও আসেনি। আমি মদীনা আবাসিক হোটেল যাব, একথা শুনে ড্রাইভার বলল, ‘ফেকের মাত কিজিয়ে ও হোটেল মাশহূর হ্যায়’।

মদীনা হোটেল তো আমি নিজেও চিনি না। এ নামটি বলার কারণ হল, বিমানের সহযাত্রী লিবিয়াগামী এক ডাক্তার সপরিবারে ঐ হোটেলে রাত্রিযাপন করে পরদিন সকালে পিআইএ করে লিবিয়া যাবেন। তারা চারজন ছিলেন বলে আমাকে অন্য এক ট্যাক্সি নিয়ে আসতে বলেন। পাঁচ সাত মিনিট পর্যন্ত আমি আগের সেই ট্যাক্সি ফলো করেছি, অতঃপর কোন এক সিগন্যালে আমার ট্যাক্সি আটকে গেল, আর ডাক্তার সাহেবেরটা চলে গেল এবং দৃষ্টির সীমানার বাইরে।

সিগন্যালে আটকে থাকার সময় আমার ট্যাক্সির সামনের সিটে এক ভদ্রলোক আচমকা দরজা খুলে ঢুকে পড়ল। আমি বললাম, ‘এ তো রিজার্ভ হ্যায়’। ড্রাইভার বলল, এ  হামারা আদমী, ডর মাত কিজিয়ে’। আমার মনে খটকা লাগল, গাড়ি চলছে তো চলছেই, সবাই নিশ্চুপ। এক পর্যায়ে মনে হল শহরের কোলাহলমুক্ত নির্জন এলাকায় গাড়ি চলছে, রাস্তায় মানুষ নেই, দু’ধারে কেবল  জঙ্গল আর জঙ্গল, রাস্তাটি হাই-রোড, বেশ চওড়া, এবার চলন্ত গাড়িতে আগন্তুক লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কেয়া তুম গাদ্দার বাঙালি হ্যায়?  হামারে লাখোঁ ফৌজকে খুন পিয়ে হো, আজ হাম তুমহারে খুন পিয়েঙ্গে’।

ঐ সময় আমি কী বলেছি, আল্লাহ ভালো জানেন, আমি কোট-টাই পরিহিত ছিলাম, হাতে একটা পকেট সাইজের মুছহাফ (কুরআন) ছিল, পকেটে রেখে দিলাম, ফাঁসিতে ঝুলানোর পূর্বে মানুষ যেমন দু‘আ-দরূদ পড়ে, আমিও তাই করলাম। আমি যেন ঐ লোকটিকে মৃত্যুর দূত মনে করতে লাগলাম, সে আমাকে দু‘আ পড়ার সুযোগ দিচ্ছে এ জন্য মনে মনে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এমন সময় সে আমার পাশে এসে আমার কোট সার্চ করা শুরু করল। কোটের ভেতরে ছিল ৫০ ডলার ভাঙ্গানো সাড়ে আটশ পাকিস্তানী রুপি। আর কিছু না পেয়ে সে আমার ব্যাগ তল্লাশি করল, আমার জীবনের সব সার্টিফিকেটের মূল ও ফটোকপি এবং কিছু পোশাক-আশাক ছিল। তন্যতন্য করে দেখল। সাথে ছিল চিড়ে-মুড়ি এবং পান সব নিয়ে নিল। আমাকে গালি দিতে দিতে নামিয়ে দিল। সঊদী আরব পড়তে যাচ্ছি, পকেটে কুরআন আছে এসব কারণে হয়ত তারা আমাকে মেরে গহীন অরণ্যে ছুড়ে মারেনি। গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়ার পর আমি বললাম, তোমরা আমার সব রুপি নিয়ে যাচ্ছ, আমি কিভাবে লোকালয়ে যাব? ঐ ডাকাত কোন কথা বলেনি, ড্রাইভার নিজের পকেট থেকে দশ রুপি বের করে আমার হাতে দিয়ে বলল, ‘দেখো! উঁচা মিনার ওয়ালা মসজিদ নযর আ রাহা হ্যায়, ওহাঁ চালে যাও, তোমহারে খানে আওর ঠাহারনে কা বন্দোবস্ত হো জায়েগা’।

ওরা চলে যাওয়ার পর কয়েক মিনিট আমি বসেই থাকলাম। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে আছি, রাত তখন প্রায় এগারোটা। অবশেষে চাকাওয়ালা ট্রলিটা টেনে নিয়ে দূরের সেই মিনার অভিমুখে যাত্রা, প্রায় আধাঘণ্টা হাঁটার পর পেলাম মসজিদ। ‘তূবা মসজিদ’, এটি করাচীর ডিওএইচএস এলাকা, অর্থাৎ অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের আবাসিক এলাকা। যায়গাটি ‘খায়াবানে শমসের’/‘বায়াবানে শমসের’ নামেও পরিচিত।

মসজিদটি ভিত থেকেই গোলাকৃতির, তবে আয়াতনে বেশ বড়, দশতলা উঁচু একটি ফুটবল সাইজের, ভেতরে ফাঁকা দশ হাজার মুছল্লী এক সাথে ছালাত আদায় করতে পারবে, রাত সাড়ে এগারোটায় জুতাখানার সুপ্রশস্ত কক্ষে আমার জুতা-ব্যাগ সব রেখে আমি একটা টোকেন হাতে মসজিদে প্রবেশ করলাম। কমপক্ষে পনরটি দরজা, সবই প্রধান ফটক মনে হচ্ছে। মসজিদের চতুর্দিকে রয়েছে বহমান একটি ড্রেইন, দশ ফুট গভীর চওড়া একই মনে হল, মাঝে মাঝে রয়েছে পারাপারের জন্য ব্রিজ। ওযূর পানি নিষ্কাশনের জন্যই এটি তৈরি। যাইহোক ভেতরে ঢুকে ক্বাযা ছালাত আদায়ের পর মনে হল, মানুষ এখন কিসের ছালাত আদায় করছেন? এখন তো কোন ছালাতের সময় নয়! শতাধিক মুছল্লী, অধিকাংশের মাথায় পাগড়ি, কিন্তু কারো দাড়ি নযরে পড়েনি। আমি খুব ক্ষুধার্ত, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি কিন্তু ক্লান্তি ও ক্ষুধায় আমার মনোযোগ আসছিল না। তাছাড়া অজানা আতঙ্ক, এরা সবাই কি জিন জাতি? আমি কি এদের হাতে বন্দী?

হঠাৎ একটা অল্প বয়সী ছেলে আসল, তার মাথায় কিস্তি টুপি। নাইন টেনের ছাত্র মনে হল কিন্তু তাকে মানুষ মনে হয়নি, শরীরের কোথাও কোন স্পট ছিল না, আমি এত সুন্দর চেহারা ইতিপূর্বে কখনো দেখিনি, সে আমাকে খুব আস্তে ক্ষীণস্বরে বলল, ‘তুমকো আজনবী মা‘লূম হোতা হ্যায়, কিয়া তুম বাংলাদেশ সে আয়া হো?’ আমি কিছু না বলতেই সে আবার বলল, ‘হামারে ইস মাসজিদ কে পেশ ইমাম ভি বাঙালি হ্যায়, তুমি উনসে মিলনেকো যায়েঙ্গে?’

আলহামদুলিল্লাহ বলে ঐ ছেলের সাথে বেরিয়ে পড়লাম। একটা দ্বিতল ভবন, কলিং বেল টিপতেই দোতলা থেকে নেমে আসার শব্দ শোনা গেল, তিনি নামতে নামতে স্বজোরে আওয়াজ করে বলছেন, ‘আহলান সাহলান মারহাবা’, কায়ফা হালুকুম, মিন আয়না জে’তুম...। তাঁর কথার সার সংক্ষেপ ছিল, ‘সুস্বাগতম! আপনি কেমন আছেন, কোত্থেকে এসেছেন?’ ক্ষুধায় কাতর আমি, আমার মুখে প্রিয় মাতৃভাষা ছাড়া আর কিছুই বেরিয়ে আসল না। বললাম, ভাই বাংলাদেশ থেকে এসেছি, এই ছেলেটি বলল, আমাদের ইমাম সাহেবও বাঙালি, তাই আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলাম।

তিনি অভ্যার্থনা কক্ষ খুলে দিলেন, আমার হাত থেকে টোকেন নিয়ে জুতা খান বলে জোর গলায় হাঁক দিলেন। মুহূর্তের মধ্যে জুতা খান এসে হাজির। ওর হাতে টোকেন দিয়ে বললেন, ‘সাহেবকে মাল-সামান এধার লে আও’।

ডাকাতের হাত থেকে আল্লাহ জীবন রক্ষা করেছেন, একথা শুনে তিনি খুব ব্যথিত হয়েছেন মনে হয়নি, কারণ আমি ক্ষুধার্ত শুনে তিনি কোন সমবেদনা জ্ঞাপন করেননি, শুধু বললেন, ‘চোর-ডাকাত সবখানেই আছে, একটু সতর্ক হয়ে পথ চলতে হবে’।

তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, ক্বাজী ক্বারী যাকারিয়া, বাংলাদেশে নোয়াখালীতে বাড়ি। তিনি দোতলায় উঠার সময় বাথরুমে ঘটি বাটি আছে কি না, চেক করে বললেন, ফজরে আবার দেখা হবে। আপনার দুর্ঘটনা শুনতে শুনতে আমার রুটি ঠা-া হয়ে গেল।

ভাবতে লাগলাম, আমার কোন্ অপরাধে এই শাস্তি? অঙ্ক মিলাতে মিলাতে রাত কাটল। রাবিতে আমার সবচেয়ে আন্তরিকতা নোয়াখালীর মানুষ প্রফেসর মাওলানা জামাল উদ্দীন সাহেবের সাথে। ছাত্র জীবনেও অনেক শিক্ষক পেয়েছি নোয়াখালী জেলার। কখনো এমন মানুষ তো দেখিনি। টয়লেটের ট্যাপের পানি বদনা দিয়ে পান করেছি আর চিড়ামুড়ি যা ব্যাগের তলায় অবশিষ্ট ছিল সেগুলোই কুড়িয়ে কুড়িয়ে খেয়েই বিনিদ্র রাত কেটেছে।

(২)

ফজর ছালাত আদায় করে আমি ইমাম সাহেবের বাসায় ফিরলাম, রাতে ঘুম না হওয়ার দরুন ক্লান্তি ভাব নিয়ে একটু ঘুমের আশায় শুয়ে পড়লাম, আধঘন্টা পর ইমাম সাহেবের ছেলে-মেয়েদের কোলাহলে উঠে পড়লাম, তারা বাংলাদেশের মানুষ দেখে অনেক আনন্দিত মনে হল। দু-তিন বছরের  মেয়েটি আমাকে জিজ্ঞেস করল, তুমি আমাদের জন্য কি এনেছ? আমি আমার ব্যর্থতা ঢাকার জন্য প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমাদের আব্বা কোথায়? আট বছরের ছেলেটি জবাব দিল, আব্বু তো ফজর শেষে কখনোই বাসায় ফিরেন না, তিনি দু-তিন টা টিউশনি করার পর বাসায় ফিরেন এবং কাজী অফিসে বসেন।

আমি মসজিদের আশেপাশে এক চক্কর ঘুরে আসলাম, কোথাও কোন খাবারের দোকান দেখতে পাইনি, যেহেতু মাঠের মধ্যে মসজিদ এবং একটু দূরে লোকালয়, তাই সকালেও  নাস্তার ব্যবস্থা হল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমাম সাহেব পান মুখে বাসায় ফিরলেন, আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনি কি কনস্যুলেট অফিস যাবেন? কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজী অফিসে লোকজন এসে যাবে, আমি আপনাকে একটা ট্যাক্সি ঠিক করে দেই, আমি বললাম, ভাই! আমি একা আর ট্যাক্সিতে উঠবনা, মেহেরবানী করে আমাকে অফিসে রেখে আসেন।

বলতে ভুলেই গেছি, আমার কোটের নিচের দিকে, বর্ডার বরাবর আড়াআড়ি লম্বা একটা কনসিল্ড পকেট, একটা পকেট- চিরুনি মাপের, আমি সেখানে একশ ডলার লুকিয়ে রেখেছিলাম, ডাকতটা তা টের পাইনি, সেই ডলার ভাঙ্গানোর সুযোগ খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না, আমার কাছে ড্রাইভারের দেয়া দশ রুপিই ছিল সর্বসাকুল্যে। কনস্যুলেট অফিসে পৌঁছে ড্রাইভারকে ভাড়া দিতে হল মাত্র দশ রুপি। ক্বারী সাহেব ফিরে গেলেন।

করাচীতে সঊদী কনস্যুলেট অফিসটি ছিল বড়ই জাঁকজমকপূর্ণ, কনস্যুলর তখনও অফিসে আসেননি, তাঁর পি এ ছিলেন, তার সামনে উপবিষ্ট ছিলেন কয়েকজন সঊদী যুবক, কথাবার্তা শুনে মনে হয়েছিল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র, তারা ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় ছিলেন।

অফিসের পি এ কে খুব দক্ষ মনে হয়েছিল, আরবি, উর্দু ও ইংলিশ, তিন ভাষাই সমান পারদর্শী। তাকে দেখে আমার পরিচিত মনে হচ্ছিল, কিন্তু ব্যস্ততার কারণে তিনি আমার দিকে তাকিয়ে দেখেননি, এবার কনস্যুলর এসে কলিং বেল টিপতেই তিনি শুদ্ধ বাংলায় বললেন, কোথায় আবুল কালাম, আপনার পাসপোর্ট নিয়ে স্যারের সাথে দেখা করেন। আমার মুখের দিকে তাকিয়েই ভদ্রলোক চিৎকার দিয়ে বললেন, শামসুল আলম ভাই! আপনি আবার আবুল কালাম হলেন কবে? সবাইকে ছেড়ে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করলেন, বারবার অনুতপ্ত হয়ে বলতে লাগলেন, আবুল কালাম নাম দেখে আমি আর বাকিটা দেখিইনি। তিনি আরো বললেন, উনসত্তর সালে আমি ঢাকা আলীয়ায় উর্দু ডিপার্টমেন্টে পড়তাম, আপনি ১ম বর্ষে, আমি ২য় বর্ষে, দু’জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বলে আমরা গর্ব করতাম এক জেলার দু’জন।

এবার আমাকে সঙ্গে নিয়ে অফিসের বসের রুমে ঢুকে আরবিতে বললেন, আমার পুরাতন অন্তরঙ্গ বন্ধু এসেছেন, আমাকে আজ ছুটি দিন। বস এর নিকট আমার পাসপোর্টটি  রাখতেই তিনি (কনস্যুলর) বললেন, আমাদের নিকট তোমার নামে যে লেটার টি এসেছে, পাসপোর্টের নামের সাথে তো মিল নেই। এ কে এম শামসুল আলম আর আবুল কালাম মুহাম্মদ শামসুল আলম যে একই নাম তা বাংলাদেশ দূতাবাসের সিল সহ প্রমান কর, নচেৎ আমরা তোমাকে ভিসা ও টিকেট দিতে পারব না। মনে হল মাথায় বজ্রপাত হল, চিন্তা করলাম করাচী থেকে ইসলামাবাদ গিয়ে নাম কারেকশন করার চেয়ে ঢাকা ফিরে যাওয়াই উত্তম।

কনস্যুলেট থেকে বের হয়ে বন্ধুবর মুখলেস আমাকে তার হোন্ডায় করে করাচীতে অবস্থিত বাংলাদেশ ট্রেড কমিশন অফিসে নিয়ে যান, ট্রেড কমিশন অফিসে দায়িত্বশীল ছিলেন জনাব কামরুল হাসান, তিনি আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করেননি, তবে তাঁর অফিস থেকে আমাদের এক পাকিস্তানী অফিসার আমাদের কাজটি মুহুর্তের মধ্যে করে দিয়েছিলেন, আলহামদুলিল্লাহ।

এবার মুখলেস সাহেব আমাকে নিয়ে গেলেন উন্নত মানের এক রেস্টুরেন্টে, বাসমতি চালের বিরানি খেলাম, মনে হল বিপদের পর শান্তির ও স্বস্তির নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসল, বড় তৃপ্তির সাথে খেলাম, আলহামদুলিল্লাহ।

পাকিস্তানের মার্কেটে উলের পোশাক কোয়ালিটি সম্পন্ন, তাই এবার কিছু মার্কেটিং করব ভেবে আমি ডলার ভাঙ্গানোর জন্য পিড়াপিড়ি করলাম, কিন্তু তিনি বললেন ইয়ারপোর্ট ছাড়া ভালো রেট পাওয়া যাবে না, সুতরাং যা কিনতে চান কিনুন আমার কাছে টাকা আছে, একটা চাদর ও একটি সুয়েটার কিনলাম, এবার ওর বাড়ি ফেরার পালা, আমি তার হোন্ডার  পেছনের যাত্রি হয়ে করাচী শহরের অলিগলি ঘুরে ফিরে  মাছের বাজার থেকে মস্তবড় কাতল মাছের মাথা কিনে তার বাসার দিকে রওনা দিলাম, পথিমধ্যে জিন্নাহর মাযার এলাকার লালু খেত মোড় নামক এক চৌরাস্তায় থামলাম, কিছু ফলমূল কেনার জন্য এগিয়ে গেলাম, মালটা, কিনু (কমলা লেবুর মতই এক ধরণের ফল) ও আংগুর কেনা হল। অতঃপর সে বলল, ভাই কিসের সুঘ্রাণ আসছে বলতে পারবেন? আমি বললাম, তাজা ঘি এর সুঘ্রাণ আসছে। সে বলল, চলেন এ হোটেলে দেশি খাসির ঝোল দিয়ে তন্দুর খাই। বললাম, বিরানি এখনো হজম হয়নি, এখন খেলে বদ-হজম হবে। কে শুনে কার কথা, গিয়ে দেখি বড় বড় রুটি, মাটির চুলা থেকে বের করে ঘি ছিটিয়ে খাসির গোশত সহ পরিবেশন করছেন, খেতে খেতে মনে হচ্ছিল দুনিয়ার না  হয়ত বেহেস্তের খানা খাচ্ছি, আজও সেই টেষ্টি খাবারের স্বাদ ভুলতে পারিনি।

উল্লেখ্য যে মূসা কলোনীতে মুখলেস সাহেব-এর বাসা, ব্যাচেলর জীবন তিন রুমের বাসা, সাথে থাকে এক পাঞ্জাবী মধ্য বয়সী লোক, যিনি বাজার করেন, রান্না বান্না এবং বাড়ির সব কাজ।

(৩)

মুসা কলোনীর মুখলেস সাহেবের বাসায় গতরাতে মুগ-ডাল দিয়ে কাতল মাছের মুড়ি-ঘন্ট খেয়ে তৃপ্তির সাথে ঘুমালাম, সকালে তাঁর অফিস গিয়ে টিকেট ভিসা সংগ্রহ করে যাত্রার জন্য ফ্লাইট কনফার্ম করে ফিরে গেলাম তুবা মসজিদ-এর ইমাম সাহেবের বাসায়, তিনি ঐসময় বাসায় ছিলেন না, তাই একটা চিরকুট লিখে মাল সামান নিয়ে চলে আসলাম।

পিআইএ বিমানের সকাল আটটায় নির্ধারিত ফ্লাইট সিডিউল, আরো দুঘণ্টা আগে এয়ারপোর্ট পৌঁছে রিপোর্ট করতে হবে, তাই ভোর ছটায় এয়ার পোর্ট পৌঁছার জন্য একটা পরিচিত ট্যাক্সি রিজার্ভ করে দিলেন বন্ধুবর মুখলেস, নামের মতোই ব্যক্তি মুখলেস, এ পর্যন্ত আমাকে একটি পয়সাও খরচ করতে দেননি তিনি, পরদিন যথাসময়ে এয়ারপোর্ট পৌঁছে আনুষ্ঠানিকতা সেরে আমাকে ডলার ভাঙ্গিয়ে দিলেন, কিন্তু কিছুতেই আমাকে ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ দেননি, আমি যখন তাঁর পকেটে রুপি ঢোকানোর চেষ্টা করলাম, তিনি বললেন, আমি কদিন পরেই ওমরায় যাব, তখন আপনি আমার ঋণ শোধ করবেন ইনশাআল্লাহ।

যথাসময়ে বিমানে আরোহণ করলাম, বারবার মনে পড়ছিল শাওকীর সেই পংক্তি :

رب اخ لك لم تلده امك

‘পৃথিবীতে তোমার অনেক ভাই আছে, যাদেরকে তোমার মা প্রসব করেননি’।

উল্লেখ্য যে, আমি করাচী বিমান বন্দরেই ইহরাম পরে নিয়েছিলাম, পথিমধ্যে সে সুযোগ হবে কিনা, অভিজ্ঞতা ছিল না। পিআইএর সার্ভিস খুব মনোরম ছিল, জেদ্দা পৌঁছার ঘন্টা খানেক আগে ঘোষণা হল, ওমরাহ পালন ইচ্ছুক যাত্রিরা এখান থেকে ইহরাম পরে নিন।

একচল্লিশ বছর আগের স্মৃতিচারণ করছি, তবুও মনে হচ্ছে এ স্মৃতিছাড়া এ মুহূর্তে আমার মস্তিস্কে আর কিছুই নেই, মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে কতবড় এই নে‘মত দান করেছেন, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কারো শক্তি আছে কি? আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ, আলফু আলফ মাররা।

অবশেষে জেদ্দা বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পেরে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে থাকলাম, আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বেরিয়ে আসলাম, সামনে সরকারি পরিবহনের কাউন্টার নজরে আসল, ‘সাপতকো’  ঝঅচঞঈঙ সঊদী অ্যারাবিয়ান পাবলিক ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি, মক্কার ভাঙ্গা মাত্র দশ রিয়াল, (১৯৮০ সাল) টিকেট সংগ্রহ করে এসি বাসে উঠে পড়লাম, পাসপোর্ট টিকেট কাউন্টারে জমা থাকল, সেগুলো গাড়ির চালক নিয়ে তার কাছেই রেখে দিলেন, পথিমধ্যে পুলিশ চেকপোস্টে পাসপোর্ট দেখিয়ে এন্ট্রি সিল সহ যাত্রিদের কাছে পাসপোর্টগুলো ফেরত দেয়া হল।

মক্কা মুকাররামায় প্রবেশের ২৩ কিলোমিটার দূরে অমুসলিমদের জন্য একটা বাইপাস রাস্তা তায়েফের দিকে চলে গেছে, আরো পরে মক্কা শহরের উপকণ্ঠে বড় সাইন বোর্ড, তাতে লেখা ছিল,

وَ قُلۡ رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

‘আর বলুন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে প্রবেশ করান কল্যাণের সাথে এবং আমাকে বের করান কল্যাণের সাথে এবং আমাকে দান করুন সাহায্যকারী শক্তি’ (সূরা আল-ইসরা : ৮০)।

একটু পরে চোখের সামনে ভেসে উঠবে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বেশি আকাঙ্ক্ষার মূল্যবান সম্পদ, ইবাদতের জন্য নির্মিত সর্বপ্রথম ঘর, বরকত ও হিদায়েতের মূর্ত প্রতীক আল-কা’বাতুল মুশাররফা, সেজন্য অধিক আগ্রহে কাবা মুখে তাকিয়ে আছি, এদিকে চোখের অশ্রু ঝরে পড়ে ইহরামের অনেকাংশ ভিজে গেছে টেরই পাইনি, অতঃপর অনেক দূরে থেকেই মাসজিদুল হারামের সুউচ্চ একটি মিনার দেখে শিহরণ জীবন্ত রূপ ধারণ করল, আঁকা বাঁকা পাহাড়ে ঘেরা পথ, তাই আবার দৃষ্টির আড়ালে চলে গেল সেই মিনারের দৃশ্য, এভাবে একাধিক বার লুকোচুরির খেলা চলল।

অবশেষে গাড়ি থেকে নামার সুযোগে হল, আবু কোবেস পর্বতের পশ্চিমে, বাবে মালেক আব্দুল আযীযের সন্নিকটেই তখন সাপতকোর বাসস্ট্যান্ড ছিল, আমি আমার ব্যাগ বোচকা নিয়েই বাব মালেক আব্দুল আযীয দিয়ে ঢুকার চেষ্টা করেছিলাম, পুলিশের বাধায় সম্বিত ফিরল, তখন পশ্চিম পাশে পাকিস্তানিদের কিছু দোকান/হোটেল ছিল, সেগুলোতেই মাল সামান রাখার চেষ্টা করি, কিন্তু কেউ রাজি হয়নি, তাই ডবল লাইনের সড়কের মাঝে আইল্যান্ডের উপর বড়সড় ব্যাগটি রেখেই ওমরাহর নিয়তে মসজিদুল হারামে প্রবেশ করি, বিখ্যাত গেইট বাব মালেক আব্দুল আযীয দিয়েই। জীবনের সব সার্টিফিকেট এবং মূল্যবান কাগজপত্র রেখে চলে যাওয়ার ঘটনা আমার তখনকার পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক ছিল কিনা বিবেচনায় আসেনি, আগে হোস্টেলে গিয়ে ব্যাগ রেখে ওমরাহ পালন সহজ হত, কিন্তু জীবনের প্রথম যোহরের জামা‘আত হারামের পবিত্র অঙ্গণে পড়ব, এ সুযোগ হাতছাড়া হতে দেইনি, ওমরাহর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে প্রায় দু’ঘন্টা সময় লেগেছিল, একবারও মাল-সামানের কথা ভাববনায় আসেনি।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে আছর ছালাত জামা‘আতে আদায় করে বেরিয়ে দেখি সব ঠিক আছে। আমি যখন ব্যাগে হাত দিলাম, একজন পুলিশ এসে বললেন, লিমান হাযা? আস্থার সাথেই বলেছিলাম হাযা লী, পুুলিশ আবার বললেন হাযা হাগগাক? ভালো বুঝিনি তবুও ব্যাগের উপর থেকে হাত সরাইনি আমার এই দৃঢ়তা আর বডি লাংগুয়েজ দেখে পুলিশের মনের সংশয় দূর হয়েছিল, তবুও তিনি আরো কিছু বলে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন, যে আমিই ব্যাগের মালিক। আঞ্চলিক ভাষা রপ্ত ছিল না তাই তাঁর সব কথা বুঝতে পারিনি, সব শেষ তাঁর প্রশ্ন ছিল ‘ফেন রুহ’ (কোথায় গন্তব্য?) এর জবাবে বললাম, আযিযিয়া, জামে‘আ উম্মুল ক্বুরা, লোকটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আযিযীয়া মারুফ ইনদাক? বললাম লা, লা।

তিনি একটি ট্যাক্সি আটকে কি যেন বলে দিলেন,‌ আমি অল্প কিছুক্ষুণ পরে সাকানুল জামে‘আ (ছাত্রাবাসে) পৌঁছে গেলাম। ভাতিজা  ইউসুফ সহ বেশ ক’জন পরিচিত ছিল সবাই চমকে উঠেছিল, শহীদভাই, কামাল উদ্দিন জাফরী, হাসান মুঈনুদ্দিন ও হেলাল সহ অনেকেই তখন মক্কা মুকাররামায় ছাত্র ছিলেন। ছোট পাহাড়ের পাশে উম্মুল ক্বুরা ইউনিভার্সিটির তিন তলা এক ছাত্রাবাসের দোতলায় আমার রাত কাটে, সেটিই পরদিন আমার নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। রুম মেট ছিলেন জামাল ইবরাহীম, সিরিয়ার নাগরিক বড়ই মিষ্টি কণ্ঠের মানুষ, ‘আহলান সাহলান মারহাবা’ বলে আমাকে তার প্রথম প্রশ্ন ছিল, সুসমাক্? আমি না বুঝে তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম, অসম্ভব সুন্দর লোকটি আমাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করলেন, আর সঠিক উচ্চারণে আবার বললেন, ما اسمك  ‘তোমার নাম কি?’

(ইনশাআল্লাহ চলবে)




প্রসঙ্গসমূহ »: স্মৃতিচারণ

ফেসবুক পেজ