শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ অপরাহ্ন

প্রফেসর এ কে এম শামসুল আলম স্যারের টাইমলাইন থেকে

সুখ-দুঃখের সাতকাহন


(৫ম কিস্তি)

(১৪)

আমি সঊদী গ্রান্ড মুফতি শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অফিসে প্রবেশ করার সময় হতাশা ও দুশ্চিন্তায় ছিলাম, কিন্তু ফেরার সময় আল্লাহর শোকর আদায় করার মত উপযুক্ত ভাষাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না, সারা জীবনের অভ্যাস মত উচ্চারণ করলাম ‘আলহামদুলিল্লাহ’। আল কুরআনুল কারীমের একটি আয়াত পড়তে পড়তেই প্রবেশ করেছিলাম,

وَ قُلۡ رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

আগের কোন এক সাতকাহনে আয়াতটির মর্মার্থ উল্লেখ করেছি, তাই আর এর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না (সাতকাহন- ৩ দ্র.)। সারা জীবন শুনে আসছি, إن المصائب لن تأتى فرادى ‘বিপদ কখনো একাকী আসে না’। ইংরেজি ভাষায়ও বলা হয়, Misfortune never comes alone. প্রমাণিত হল সুখও আসে শত দরজা দিয়ে। মহান আল্লাহ বলেন,

 فَاِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ  یُسۡرًا  -  اِنَّ مَعَ الۡعُسۡرِ  یُسۡرًا

‘কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে, অবশ্য কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে’ (সূরা আশ-শারহ/ইনশিরাহ : ৫-৬)। এখানে কষ্টের আরবি শব্দটি ব্যাকরণের পরিভাষায় মা‘রিফা, অপরটি নাকিরা। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়, কষ্ট সুনির্দিষ্ট কিন্তু সুখ অনির্দিষ্ট। অলংকারশাস্ত্র অনুযায়ী অনির্দিষ্ট জিনিসের ব্যাপ্তি সীমাহীন, অসংখ্য।

শায়খের অফিস থেকে বের হয়ে আমি খুঁজছিলাম একটি মসজিদ, ‘মাগরিব’-এর ছালাত আদায় করে প্রাণ খুলে আল্লাহর শোকর আদায় করলাম। আমি এখন দুশ্চিন্তা মুক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলেও আমার আর দেশে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। মসজিদ থেকে বের হয়ে খুশি মনে হাঁটতে লাগলাম। সন্ধ্যার সোনালী আলোতে ত্বায়েফ নগরীর অপূর্ব শোভা দেখে আমি বিমোহিত হলাম। আরো কিছুক্ষণ ঘুরাফেরা করতে ইচ্ছে হল। কারণ আমার জীবনের প্রথম উঁচু পর্বতের উপর আরোহণ ও ঐতিহাসিক এক এমন শহরে মুক্তভাবে বিচরণ যেখানে প্রতারণা বা ছিনতাইয়ের আশংকা নেই। অবশ্য এর আগে মক্কা শহরের তাৎপর্যপূর্ণ পর্বত জাবাল নূর দেখেছি, উপরে উঠেছি। কিন্তু, সেটা ছিল এর চার ভাগের এক ভাগ উঁচু।

পরবর্তীতে দার্জিলিং-এ এক সপ্তাহ কাটিয়েছি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় স্বপরিবারে দশদিন সফর করার সৌভাগ্য হয়েছে, কিন্তু ত্বায়েফের এই স্বপ্নিল শহরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আমি অধিক মুগ্ধ হয়েছি। তাই চেষ্টা করলাম, আরো কিছুক্ষণ এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে।

ফুটপাত ব্যবহার করছি, গন্তব্যহীন পায়চারি, কিন্তু মনে হল হালকা বাতাসে মেঘের ভগ্নাংশগুলো আমার গায়ে ঠেকছে, ধুনো তূলার উড়ন্ত উচ্ছিষ্ট হয়ে, রাস্তার আলোর ছটায় সেগুলো এক অপূর্ব সুন্দর দেখাচ্ছিল। আর সাথে সাথে তা জামা-কাপড় ভিজিয়ে দিচ্ছিল। রাস্তার দু’ধারে প্রায় বাসার সামনেই আঙ্গুরের উঁচা মাচা/টালে বড় বড় থোকায় আঙ্গুর ঝুলে আছে। তার নিচে পার্কিং করা ব্যক্তিগত গাড়ি।

হেঁটে হেঁটে বাস কাউন্টার অভিমুখে যাত্রা করেছি, রাস্তায় এক বেদুইন কয়েক ঝুড়ি রুম্মান (ডালিম) বিক্রয় করছেন। পাশে তার বোঝা বহনের গাধাটা বাঁধা ছিল। দামের কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, كيلو بأربعة ريالات قطاعيا وبريالين جملة ‘খুচরা চার রিয়াল প্রতি কেজি, কিন্তু পুরো ঝুড়ি পাইকারি নিলে দুই রিয়াল কেজি’। বিশ কেজি ওজন প্রতিটি ঝুড়ি। উল্লেখ্য যে, আঙ্গুরের মতই ডালিমও তিন চার রঙ্গের।  আল্লাহর কুদরতের চমক দেখুন!

পাতার মত সবুজ রং এর ডালিমের দানাগুলো দেখা যায় শুভ্র ও স্বচ্ছ/ ডিসপারেন্ট। মাত্র দু-তিনটে দানা মুখে দিলে এর অপূর্ব স্বাদ ও সুঘ্রাণ এবং পর্যাপ্ত রসে আপনি যেন স্বর্গীয় অনুভুতি লাভ করবেন। পক্ষান্তরে লাল রঙ্গের ডালিমের রঙ্গিন দানা, একটু টকটক এবং কষটা টাইপের। পৃথিবীর সব দেশের ডালিম সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা নেই। তবে ত্বায়েফের ফল-মূল যেমন তাজা, তেমনি সুস্বাদু। ত্বায়েফবাসীর জন্য আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাঁর উপর নির্যাতন কালে বদ দু‘আ করেননি, বরং বলেছেন, (আল্লাহুম্মাহ দে  কাওমি ফাইন্নাহুম লা-য়্যালামূন) ‘হে আল্লাহ! আমার সম্প্রদায় না জেনে আমার উপর অত্যাচার করেছে, তাদেরকে সুপথ দেখান’। এখানের উৎপাদিত শস্যের বরকতময় বিশেষত্ব, উন্নত মানের ফল-মূল, সবুজ শস্যক্ষেত, ফুলের মার্কেট, স্থানীয় উৎপন্ন দ্রব্যের সবজি বাজার, পাহাড়ের মধু ভাণ্ডার, পিকনিক স্পট ইত্যাদির বর্ণনায় পৃথকভাবে কিছু লিখার ইচ্ছা রইল, অবিল্লাহিত্ তাওফীক।

রাতের বেলায়ই মক্কা ফিরে আসব তাই রাতের খাবারের কূপণটা রুমমেটের কাছে রেখে গিয়েছিলাম। রাত দশটার সময় হোস্টেলে ফিরলাম। টেবিলে খাবার দেখে আনন্দ পেলাম, আলহামদুলিল্লাহ। সিরিয়ান রুমমেট এসে জড়িয়ে ধরে বললেন ‘লাকা বুশরা’ তোমার জন্য সুখবর আছে। বললাম, বল! বলল, দিরাসাত উলিয়ার লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। মাত্র ছয়জন চান্স পেয়েছে। তুমি তাদের একজন। ওর কথা শুনে প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। ভাবছিলাম, আরবরা একটু বেশিই ঠাট্টা মশকরা করে। কিন্তু চান্স পাওয়া আরেকজন এসে হাজির হল। উযাইর শামস, ভারতের বিহারের এই ছাত্রটি মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাজার মার্কস এর মধ্যে ৯৯৬ পেয়ে ফার্স্ট হয়েছেন। তিনিও রিটেন পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তার কথায় বিশ্বাস না করে উপায় নেই।

উল্লেখ্য যে, মন্ত্রণালয়ে সার্টিফিকেটের সমতা বিধান করার জন্য কাগজ পাঠিয়েছি। ফলাফল পজিটিভ হলে আমাকে ভর্তি করা হবে। তাই শর্ত সাপেক্ষে আমাকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে দিয়েছিলেন। এ দিকে আনন্দে ও উল্লাসে সারা রাত ঘুমোতে পারিনি। পরদিন শুক্রবার, শনিবারও অফিস বন্ধ। তাই সকালে লাইব্রেরীর আব্দুল লতীফ ভাইকে দোভাষী হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার কথাটা বলে কী করণীয় পরামর্শ চাইলাম। তিনি বললেন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন স্যারের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত। জুমু‘আর পর স্যারের বাসায় গেলাম। ড. আলী আশরাফ এবং সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন আপন খালাতো ভাই। দু’জনই ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর। একই বাসায় থাকতেন। কারও পরিবার সাথে ছিল না। শুক্রবার দুপুরে বাংলাদেশী যুবকরা এখানে খাওয়ার টেবিলে হাজির হতেন, খেতেন এবং দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করতেন। ‘গাযা’ মার্কেটের পাশে বড় পোস্ট অফিসের পাশেই ছিল এই বাসাটি। ইমারাতুল মুফতি নাম। মসজিদুল হারামের কয়েকশ’ মিটারের মধ্যেই।

স্যারদের পরামর্শ ছিল, তুমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চুক্তি সই করে এসেছ উচ্চ শিক্ষার জন্য। তোমাকে চাকুরি করতে হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি রিজাইন করতে হবে।

রবিবার সকালে আরবি অনুষদের ডিন প্রফেসর উলিয়ানের সাথে দেখা করতে গেলাম। তিনিও হাসিমুখ হতে পারেন এই প্রথম দেখলাম। তিনি আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন, ترغب اللغة ام الادب؟ ‘কিসে ভর্তি হবে, ভাষা না সাহিত্যে? তখন পর্যন্ত আমার জানা ছিল না যে, ভাষা ও সাহিত্যের জন্য পৃথক পৃথক বিভাগ রয়েছে। আমার জবাব দিতে দ্বিধা-দ্বন্দ দেখে তিনি বললেন, অনারব ছাত্রদের জন্য সাহিত্যই সহজ হবে। তবুও তুমি স্বাধীন। বললাম, একটু ভেবে চিন্তে দু’টোর সিলেবাস দেখে সিদ্ধান্ত নিব ইনশাআল্লাহ।
----0---
(১৫)

শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সেক্রেটারি ড. লোকমান সাহেবের নিকট একটি পত্র পাঠিয়ে জানিয়ে দিলাম যে, আমি ‘দিরাসাত উলিয়ায়’ ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় ‘দারুল ইফতায়’ দোভাষী হিসাবে কাজে যোগদান করা সম্ভব হচ্ছে না। শায়খের মহানুভবতায় আমি মুগ্ধ। আশা করি, তিনি আমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন এবং আমাকে ক্ষমা করবেন।

আমি ভর্তির জন্য মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলাম। বিভাগীয় চেয়ারম্যান ড. হাসান বাজুদা এবং ডীন মহোদয় ড. আলী আল-উলয়ান উপস্থিত ছিলেন। প্রথমেই ডীন মহোদয় জানতে চাইলেন, আমি ভাষা বিভাগে ভর্তি হতে চাই, না-কি সাহিত্যে? বললাম, সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হতে চাই। ড. বাজুদা জানতে চাইলেন, দেশে মাস্টার ডিগ্রীতে আরবি সাহিত্যের জন্য কী কী পড়েছি। মোটামুটি তাঁরা সন্তুষ্ট মনে হল। শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তাঁরা  খুশি হতে পারেননি মনে হল। মাষ্টার পিএইচ.ডি পর্যায়ে ভর্তির জন্য পাঁচ-দশ পারা কুরআন হিফয থাকতে হবে। বললাম, সর্বমোট হিফযের পরিমাণ প্রায় একপারা হবে, তবে বিভিন্ন সূরার অংশ হিসাবে। তাঁরা আমাকে সাত দিন সময় দিলেন, হা-মীম দিয়ে শুরু সাতটি সূরা মুখস্থ শোনাতে পারলে আমাকে ভর্তির অনুমতি দেয়া হবে। আল্লাহর রহমতে আমি তিন চার দিনের মধ্যেই সূরা কয়টি হিফয করে শোনাতে পেরেছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ।

দিরাসাত উলয়্যায়  প্রথম বর্ষে দশটি বিষয়ে হাজার মার্কসের সিলেবাস পড়তে হয়েছিল। এই কোর্সের নাম ছিল ‘আস সানাহ আল মানহাজিয়্যা (ওহঃৎড়ফঁপঃড়ৎু পষধংংবং)। তাফসীর পড়াতেন ড.  হাসান বাজূদা নিজেই। সিবওয়হর ‘আল-কিতাব’ এবং ‘আল-ইনসাফ ফী মাসায়েলিল খিলাফ’ পড়াতেন ড.  আহমদ মাক্কি আল-আনছারী। ‘আল-আদব আল-ইসলামী’ পড়াতেন ড. মুহাম্মদ যাইন। ‘হাদীছ’ পড়াতেন ড. ইউসুফ আল দব‘উ। এবং ‘বালাগাত’ পড়াতেন ড. আম্মারী। এদের কাছে যা শিখেছি, পেয়েছি এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি তা অতি সংক্ষেপে বর্ণনা করতে ব্যর্থ হলে অকৃতজ্ঞ হিসাবেই চিহ্নিত হব।

এদিকে নতুন ক্লাসে ভর্তির পরপরই হোস্টেল পরিবর্তন এর বিজ্ঞপ্তি আসল। আগের চেয়ে আরো অনেক উন্নত বিল্ডিংএ সিট বরাদ্দ হল। তবে একটু দূরে, বাসে আসা যাওয়া করতে হবে। এবার রুমমেট পেলাম ফিলিস্তীনি। আগের রুমমেটের সম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের মানুষ। মেনে নেয়া ছাড়া উপায় ছিল না। হোস্টেলের নাম  আল-মান্দুরা। এই হোস্টেলের দক্ষিণ পাশে এক বিল্ডিং পরেই একটি বাসা। প্রায় সময় খালিই মনে হত। পরে জেনেছি, এখানে বসবাস করেন দেশের সেরা ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও সঊদী আরবের গ্রা- মুফতি শায়খ ইবনু বায। মূলত হজ্জ মৌসুমেই এ বাসায় তিনি তিন-চার মাস কাটাতেন।

একদিন হোস্টেলে ফিরে গোসল করার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় হোস্টেলের রুমে কে যেন নক করছে। দেখা যায়, অফিসের পিয়ন। বলল, আপনাকে হোস্টেল সুপার ডেকে পাঠিয়েছেন। গেলাম, তিনি বললেন, ইংরেজী থেকে আরবি এবং আরবি থেকে ইংরেজি অনুবাদ করতে পারবেন? হঠাৎ মুখ থেকে উচ্চারিত হয়েছে, হ্যাঁ। ভেবেছিলাম কোন গ্রন্থ অনুবাদ করতে বলবেন। কিন্তু তিনি বললেন, শায়খের বাসায় এ মুহূর্তে কোন ইংরেজী জানা ভালো দক্ষ দোভাষী উপস্থিত নেই। তাই তিনি আমার কাছে পিয়ন পাঠিয়ে একজন দোভাষী চেয়েছেন এবং এক্ষুণি যেতে  হবে। কিছু সময়ের মধ্যেই মেহমান চলে আসবেন। সুতরাং আর দেরি করা যাবে না। শীঘ্রই চলে যাও, ওখানেই দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আছে। প্রথমে একটু ভয় ভয় লাগছিল তবুও পিয়নের সাথে  রওয়ানা হলাম। মাত্র কিছুদিন আগে শায়খের সাথে কথা হয়েছে। তাঁর দেয়া চাকরির অফার গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। এসব স্মরণ করে লজ্জা পাচ্ছিলাম। তবুও তাঁকে সালাম দিতেই হাসিমুখে সালামের জবাব দিয়েই বললেন, للعلك ابو الكلام من بنغلاديش؟ ‘সম্ভবত তুমি বাংলাদেশী ছাত্র আবুল কালাম? বিস্ময়ে আবাক হচ্ছিলাম তাঁর স্মরণশক্তির প্রখরতা দেখে। তিনি চোখে দেখতেন না, সেজন্যই এত সজাগ সচেতন ও তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব! সুবহানাল্লাহ!

কিছুক্ষণের মধ্যেই পঁচিশ জনের একটি কাফেলা আসলেন। রাজকীয় সম্মান দিয়ে তাদের আপ্যায়ন করা হল। আগন্তুকদের দলপতি ছিলেন উগান্ডার। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ইদি আমীন। বাকীরা সবাই তাঁর ছেলে। ছেলেদের অন্যঘরে রেখে প্রেসিডেন্ট ইদি আমীন ও শায়খ এর মধ্যে প্রায়ই আধা ঘণ্টা আলাপ হল। বিষয়বস্তÍ উল্লেখ করা সমীচীন হবে না। তবে ইদি আমীন অত্যান্ত স্পষ্ট উচ্চারণে ইংরেজি বলছিলেন। আমার বুঝতে বা শায়খের নিকট আরবিতে এর সারমর্ম বলতে মোটেও অসুবিধে হয়নি। আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আবার তাদের ফলমূল ও গাহওয়াহ পরিবেশন কালে ইদি আমীন আমাকে বললেন, I love Bangladeshis, they are faithful and amiable, I have had my personal doctor who was Bangladeshi.

এক ফাঁকে সেভেনে পড়া তাঁর এক ছেলেকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমরা আঠার ভাই, বোন কয়জন এবং মা কয়জন? ছেলেটি বলেছিল, দু’জন মা বেঁচে আছেন, একজন মারা গেছেন আর বোনের সংখ্যা সাত।

মেহমানদের বিদায়ের পর আমি অনুমতি চাইলাম চলে আসার জন্যে। শায়খ বললেন, তুমি কি ‘তাওঈয়া’ অফিসের মুদীরকে চেন? আমি বললাম, চিনি। সেই অফিসের পাশের মসজিদে ছালাত আদায় করি যা আমাদের হোস্টেলের অপর পাশে। তবে তিনি আমাকে চেনার কথা নয়। শায়খ আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার কথা বলে তাঁর কক্ষে চলে গেলেন। অনেকক্ষণ পর তার সেক্রেটারি ড. লোকমান একটি খাম দিয়ে বললেন, এটা শায়খ জাবেরের হাতে দিয়ে আসতে হবে। যদি তিনি অফিসে না থাকেন, তবে আপনার কাছেই রেখে দিবেন যখন দেখা হয়, হাতে হাতেই দিবেন। আমি যখন মুখ বন্ধ খামটা হজ্জ অফিসের ডাইরেক্টর শায়খ জাবের আল-মাদখালীর হাতে পৌঁছে দিলাম, তিনি তা খুলে পড়লেন এবং একটা রেজিষ্টার বের করে আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন, আর লিখে  রাখলেন।

আমি কৌতুহলবশত জানতে চাইলে তিনি বললেন, সামাহাতুশ শায়খ তোমার নাম, বিভাগ, হোস্টেলের রুম নাম্বার লিখে রাখতে বলেছেন। শুধু তাই না, তুমি এখন থেকে এ অফিসের একজন সম্মানিত অনিয়মিত দোভাষী হিসাবে তালিকাভুক্ত। আলহামদুলিল্লাহ বলে সেদিন হোস্টেলে ফিরলাম এবং শায়খের মহানুভবতা ও আমার প্রতি তাঁর সফট কর্তার অনুভব করে আল্লাহর শোকর আদায় করলাম।

হজ্জ পর্যন্ত তিনি মক্কা মুকাররামায় অবস্থান করতেন এবং হজ্জ অফিস সংলগ্ন মসজিদে অধিকাংশ সময়ই ছালাত আদা করতেন। যোহর ও আছরের পর প্রতিদিন তাঁর শিষ্য ভক্তরা ফরযের পরপরই হাদীছের কিতাব থেকে কয়েকটি হাদীছ পড়ে শোনাতেন। সাধারণত ছহীহ বুখারী থেকেই পড়া হত। পাঠকের ইবারত পড়ায় কোন রকম ভুল হলে শায়খ নিজের ঊরুতে বা মেঝেতে সজোরে হাত দিয়ে আঘাত করতেন, সাথে সাথেই পড়া বন্ধ হত। তখন আরেকজন ভিন্ন সংস্করণের বুখারী পড়ে শোনাতেন এবং সন্দেহ দূরীভূত করতেন। জীবনের এক অনুপম শিক্ষা লাভ করেছি শায়খের সংস্পর্শে এসে, অনেক কিছু পেয়েছি। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউসের সম্মানিত বাসিন্দা হিসাবে কবুল করুন- আমীন!!

যতদিন ছাত্র হিসাবে মক্কায় ছিলাম প্রায়ই ছয় বছর। সুদীর্ঘ সময় আমি হজ্জ মৌসুমে এ অফিসের দোভাষী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। এ সময় প্রায় সব ছাত্রই কাজ করে আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকে। কেউ মসজিদুল হারামের মুরাকিব হিসাবে। কেউ জবাল ছাওর বা জবালুন নূরে হাজীদের বিদ‘আত মুক্ত আমলের দিক-নির্দেশনা দিত। ‘আরাফাত, মিনা, জামারাত সব খানেই বিভিন্ন দেশের ছাত্রদের পাঠানো হত। তার আগে তাদের একটা প্রশিক্ষণ দেয়া হত। আহ! সে স্মৃতি মিশ্রিত দিনগুলো কত মধুময় ছিল! ما احلى الايام وذكرياتها
---0---
(১৬)

শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-এর আখলাক-আচরণ কাছে থেকে দেখেছি। একসাথে খেয়েছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা শুনেছি। ১৯৮০ সাল থেকে তাঁর ওফাত পূর্ব পর্যন্ত মক্কা মুকাররামায় ও রিয়াদের বাসায় যা দেখেছি তার সার-সংক্ষেপ না বললে নতুন প্রজন্ম অজ্ঞাতই থাকবে।

তিনি গোটা উম্মাহর সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করতেন। ইন্দোনেশিয়া থেকে আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবহেলিত তরুণ প্রজন্মের জন্য তিনি অসংখ্য বৃত্তি প্রদান করতেন। দূরারোগ্য ব্যক্তিদের নিয়মিত চিকিৎসা ভাতা দিতেন।

মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও রিয়াদের জামে‘আতুল ইমাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েটদের বিপুল সংখ্যককে ইসলামের দাঈ নিয়োগ দিয়ে বিশ্বের প্রায় সব দেশের আনাচে-কানাচে পাঠিয়েছেন। তাদের বেতন-ভাতার জন্য দারুল ইফতার বরাদ্দ প্রতি বছরই বাড়তেই থাকত।

এছাড়াও তিনি মুসলিম বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সংগঠন, সংস্থা, জমঈয়ত আল-খাইরিয়্যার নেতৃবৃন্দের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ের মানুষ ও তাঁর পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছুটে আসতেন। সবাইকে তিনি সহযোগিতা ও সহায়তা দিতেন।

রিয়াদের দারুল ইফতার ভবনটি মুসলিমদের জন্য ‘হোয়াইট হাউস’ হিসাবেই পরিচিত। বিশ্বের অসংখ্য মুহাক্কিক্ব ওলামায়ে কেরাম, দারুল ইফতার গিফট আইটেম হিসাবে প্রায়ই দু’শ’ কেজির মত মহা মূল্যবান কেতাব পেয়ে ধন্য হয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের জন্য এই বরাদ্দ আরও বেশি পরিমাণে ছিল।

শায়খের সাথে আহার গ্রহণ

তিনি সফরে থাকাকালীন এবং বাসায় মুক্বীম অবস্থায় তাঁর সঙ্গে সব সময় দুপুর রাত সারাক্ষণ পঁচিশ-ত্রিরিশ জনের একদল মুসাফির থাকতেন। তাদের সঙ্গেই তিনি আহার গ্রহণ করতেন। তিনি বাসায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কখন খেতেন, আমার জানা নেই। খাবার সময় তিনি প্রায়ই রসিকতা করতেন। মুসাফিরের সংখ্যা বেশি থাকলে বড় বড় চার পাঁচটা খাবারের ডিস থাকত। প্রতিটি ডিস এর চারিদিকে বসতেন ছয়জন-আটজন। এরপর রকমারি ফল-মূল, সবশেষে পরিবেশিত হত চা-কফি ও আ্যরাবিয়ান গাহওয়া। তিনি আমার নাম নিয়েও একাধিক বার রসিকতা করেছেন। প্রায়ই বলতেন,

يا شمس أين القمر؟ فقلت له إذا طلعت الشمس يغيب القمر فضحك ويرى عليه اثار البهجة والسرور

‘ওহে শামস! চাঁদ কোথায়? (আমি বলতাম সামাহাতুশ শাইখ!) সূর্য উঠলে চাঁদ হারিয়ে যায়। তখন তিনি হেসে উঠতেন, আনন্দ উল্লাসের আলামত মুখম-লে ফুটে উঠত’।

পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ জমঈয়তে আহলে হাদীছের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকাকালীন, বিশেষত জমঈয়তের মহাসচিব হয়ে প্রথম যখন তাঁর সাথে দারুল ইফতায় গিয়ে সাক্ষাৎ করি, তিনি জিজ্ঞেস করলেন, উঠেছ কোথায়? আমি বললাম, বিমান থেকে নেমেই দেশের পরিচিত জয়ঈয়তের হিতাকাক্সক্ষী কিছু ভাইয়েরা রিসিভ করতে গিয়েছিলেন, তাদের ওখানেই ব্যাগ রেখে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছি। তিনি সাথে সাথেই সেক্রেটারীকে বললেন, সাকান আদ্ দোয়াতে (দারুল ইফতার পাশেই একটি গেষ্ট হাউস) ওর থাকার বন্দোবস্ত করে দাও। উল্লেখ্য যে, এই গেষ্ট হাউসে রান্নার সামগ্রী সহ সুপরিসর রান্নাঘর ওয়াশিং মেসিন থাকত, বহুবার এখানে থাকার সুযোগ হয়েছে।

যতবার শায়খের খিদমতে হাজির হয়েছি, সমুদ্র সম উদারতার পরশে নিজেকে ধন্য মনে করেছি, আল্লাহ! তাঁকে জান্নাতবাসী করুন-আমীন!!

ড. মুহাম্মাদ হাসান বাজূদা

আমাদের সময় উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ছিলেন। আমি স্যারের শিক্ষাদানের অভিনব কৌশলে শুধু মুগ্ধ ছিলাম না, বলা যায় আমার জীবনের সবচেয়ে সফল ও প্রিয় শিক্ষক ছিলেন। তিনি নানা ব্যস্ততায় থাকতেন। প্রায়ই দেশ-বিদেশে সফরে থাকতেন। তবুও তাঁর শিক্ষাই সবচেয়ে বেশি স্মরণ করছি, প্রেরণার বাতিঘর এবং বড় হওয়ার অন্যতম উৎসাহদাতা ছিলেন তিনি।

১৩৬০ হি./১৯৪১ খৃ. সালে তায়েফ শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত মক্কা মুকাররামায় পড়াশোনা করেন। কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবি সাহিত্যে গ্রাজুয়েশন শেষ করেন, মক্কায় ফিরে কিছুদিন মুঈদ বা য়্যাসিস্টেন্টশিপ নিয়ে উম্মুল ক্বুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগে শিক্ষকতা করেন। অতঃপর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলোশিপ পেয়ে বৃটেনে চলে যান। সেখান থেকে মাস্টার্স ও পিএইচ-ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর থিসিসের পরীক্ষকদের সুপারিশ ছিল, ‘থিসিসটি বর্তমান অবস্থায় ছাপানোর সুপারিশ করা হল’। তিনি মূলত একজন খ্যাতিমান কবি, সাহিত্যিক এবং আল-কুরআন গবেষক। তাঁর পিএইচ-ডি থিসিসের শিরোনাম ছিল,

An edition of the works of the minor Madinese poets to the end of the Umayyad period with a critical introduction.

আরবি শিরোনাম,

"شعر أهل المدينة المنورة حتى نهاية عصر بنى أمية مع دراسة نقدية"

থিসিসটিতে মদীনার দেড় শতাধিক পুরুষ ও মহিলা কবির কবিতা স্থান পেয়েছে। তাঁর স্বরচিত হাজার লাইনের কবিতাও আছে। এর বিষয়বস্তুও অত্যন্ত চমকপ্রদ।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সম্পর্কে আল্লাহর কালামে যা ইরশাদ হয়েছে কবিতার মাধ্যমে তিনি তা তুলে ধরেছেন। তাঁর পিএইচ-ডি থিসিসে উল্লেখিত মোট ছয় হাজারের বেশি কবিতার লাইন স্থান পেয়েছে। লন্ডন থেকে ফিরে ১৩৮৮ হি. সালে মক্কা মুকাররামায় বাদশাহ আব্দুল আযীয বিশ্ববিদ্যালয়ের উম্মুল ক্বুরা শাখায় আরবি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন, পরে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। আমি তাঁকে এ অবস্থায় পেয়েছি। তিনি অধ্যাপনার পাশাপাশি অসংখ্য দায়িত্ব পালন করতেন। রেডিও টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করতেন। এছাড়াও কুরআন কেন্দ্রিক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও প্রধান বিচারকের দায়িত্ব পালন করতেন।

তাঁর পাঠদান পদ্ধতি খুবই আকর্ষণীয় ছিল। আরব-আজম ছাত্রের মধ্যে পার্থক্য করার মত ঘৃণিত নীতি তাঁর মধ্যে ছিল না। ছুটিকালীন সময়গুলোতে তিনি ইউরোপ, আমেরিকা, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে প্রায়ই অংশগ্রহণ করতেন। একদিন তিনি ক্লাসে এসে পাকিস্তানের একটি কনফারেন্সে যোগদান এর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন,

‘একজন পাকিস্তানী অধ্যাপকের আরবিতে লেখা প্রবন্ধ শুনে আমি অনুষ্ঠান শেষে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কোন্ দেশের নাগরিক? তিনি বললেন, আমি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মানুষ। এখন পর্যন্ত দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাইনি। এমনকি এখনও আমি হজ্জ সফরেও যাইনি। আমি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডীন প্রফেসর জহুর আহমদ আযহার। আমার বেশ কিছু গ্রন্থ আছে। একটি আরবিতে লেখা। একথা বলে তিনি বইটি আমাকে উপহার হিসাবে দিলেন। আমি আগ্রহ করে হাত বাড়িয়ে গ্রহণ করলাম। ইতোমধ্যে আমার পালা আসলে আমার নাম ঘোষণা করা হয়। আমি আমার বক্তৃতায় বলেছিলাম,

‘যিনি  শুদ্ধ আরবি ভাষায় বলতে ও লিখতে পারেন তিনিই আরব। আরব হওয়ার জন্য আরব দেশের মাটিতে জন্ম গ্রহণ শর্ত নয়’।

স্যার পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে করতে অশ্রুসিক্ত হয়ে ব্যাগ থেকে উপহার হিসাবে প্রাপ্ত বইটি বের করে আমাদের সবাইকে দেখালেন এবং বললেন, আমাকে এ বইয়ের রিভিউ লিখে পাঠাতে হবে। কিন্তু আমার তো ফুরসত নেই। পাঁচশ’ পৃষ্ঠার বইটি লাইন বাই লাইন পড়ে, দুই-তিন পৃষ্ঠায় চমৎকার একটি রিভিউ লিখতে কে পারবে? হাত তোল! সবাই চুপ, তিনি পায়চারি করতে করতে আমার হাতে বইটি দিয়ে বললেন, ‘আনতা আহাক্ক বি হাযাল আমর’ (তুমিই এ কাজের জন্য যোগ্য)। উস্তাযের নেক-নযরকে আমি গণিমত ভেবে উচ্চারণ করলাম, আলহামদুলিল্লাহ। বইটি ছিল একটি আরবি উপন্যাস। শিরোনাম : ‘মুহাম্মদ বিন কাসিম’। পৃষ্ঠা সংখ্যা পাঁচ শতাধিক।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)




প্রসঙ্গসমূহ »: স্মৃতিচারণ

ফেসবুক পেজ