উত্তর : কোম্পানি বা দোকানের আর্থিক লেনদেনের হিসাব-নিকাশ সূদভিত্তিক হলে এবং নিষিদ্ধ বীমা কোম্পানি বা সূদী ব্যাংকের সঙ্গে লোনের কিস্তি দেয়া ও হিসাব রাখার দায়িত্ব পালন করলে আপনি সরাসরি হারাম কাজের সঙ্গে জড়িত। আপনার জন্য এ ধরনের কাজ বৈধ নয়। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ﷺ) সূদখোর, সূদদাতা, তার সাক্ষীদাতা ও তার লেখককে অভিসাম্পত করেছেন এবং বলেছেন, ‘ওরা সবাই সমান’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৭-১৫৯৮; আবূ দাঊদ, হা/৩৩৩৩)।
এখানে সূদের হিসাব রক্ষককেও শামিল করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, সেও সমপাপী। কোম্পানি বা দোকানের হারাম চুক্তিতে সাহায্য-সহযোগিতা করাও একটি অপরাধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তোমরা নেককাজ ও তাক্বওয়ায় পরস্পরকে সাহায্য কর এবং পাপ ও সীমালংঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না। আর আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ: ২)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাতে ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য, সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন’ (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/১২; তাফসীরে কুরতুবী, ৬/৪৬-৪৭ পৃ.)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, ‘যে ব্যক্তি সূদের হিসাব-নিকাশ করে বলতে, যে ব্যক্তি কাগজপত্র লিখে, যে ব্যক্তি সংশোধন করে, যে ব্যক্তি হিসাবের খাতায় আদান-প্রদান জমা করে, যে ব্যক্তি শতাংশ নির্ধারণ করে, যে ব্যক্তি সূদের টাকা সংগ্রহ করে অথবা যে ব্যক্তি সংগ্রহকারীর কাছে জমা করে, এরা সকলেই শামিল’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ১৫/৫ পৃ.)।
সুতরাং আপনার উপর অপরিহার্য হল- সূদের সঙ্গে জড়িত সমস্ত রকমের কাজ এই মুহূর্তেই বর্জন করা। তবে আপনি চাইলে কোম্পানীকে বলে এমন কোন কাজ নিতে পারেন, যার সঙ্গে সূদের কোন সম্পর্ক নেই এবং যেটা সূদের কাজে সাহায্য-সহযোগিতাও করা হবে না। যদি তারা আপনার আবেদন গ্রহণ না করে, সেক্ষেত্রে আপনার জন্য ঐ কাজে বহাল থাকা জায়েয হবে না। আপনি অন্য কোম্পানিতে হালাল কাজ অনুসন্ধান করুন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন’(সূরা আত-ত্বালাক্ব: ২,৪; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৯/৭৭ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৭৫৪৯২)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ শাহীন, চরফ্যাশন, ভোলা।