উত্তর : শারঈ বিধান অনুযায়ী দাড়ি রাখা ওয়াজিব। দাড়ি কামানো, ছোট করা কোনটিই বৈধ নয়। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দাড়ি ক্লিন সেভ করা বা দৈর্ঘ্যে অথবা প্রস্থে ছোট করা কোনটাই জায়েয নয়’ (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ৩/৩৬৮ ও ৮/৩৭৪ পৃ.)। এক্ষেত্রে নি¤েœাক্ত দলীলগুলো উল্লেখযোগ্য। যথা : (১) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,انْهَكُوا الشَّوَارِبَ وَأَعْفُوا اللِّحَى ‘তোমরা গোঁফকে ছোট কর এবং দাড়িকে বর্ধিত কর’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৫৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯)। (২) অন্যত্র বলেন, خَالِفُوا الْمُشْرِكِيْنَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ ‘তোমরা মুশরিকদের উল্টো কর, দাড়ি দীর্ঘ কর এবং গোঁফ ছোট কর’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৯২)। উপরিউক্ত হাদীছের وَفِّرُوا اللِّحَى-এর ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, أي اتركوها وافرة ‘দাড়িকে পরিপূর্ণরূপে ছেড়ে দাও’ (ফাৎহুল বারী, ১০/৩৫০ পৃ.)। (৩) নবী করীম (ﷺ) আরো বলেন, جُزُّوا الشَّوَارِبَ وَأَرْخُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمَجُوْسَ ‘তোমরা গোঁফ ছেঁটে এবং দাড়ি ছেড়ে দিয়ে অগ্নিপূজকদের বিরোধিতা কর’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬০)। (৪) নবী করীম (ﷺ) গোঁফ ছাঁটতে এবং দাড়িকে ক্ষমা করতে আদেশ করেছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯)। (৫) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধাচরণ কর, মোচ কেটে ফেল এবং দাড়িকে রক্ষা কর বা পূর্ণ কর’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯)।
উপরিউক্ত হাদীছসমূহে দাড়ির বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ সম্পর্কে চারটি শব্দ বর্ণনা করা হয়েছে। যথা : ১- (أَعْفُوا)-এর অর্থ অব্যহতিদান করা, মাফ করা, ক্ষমা করা ইত্যাদি। ২- (وَفِّرُوا)-এর অর্থ বৃদ্ধি করা, প্রচুর পরিমাণে দেয়া, যোগান দেয়া, সঞ্চয় করা ইত্যাদি। ৩- (أَرْخُوا)-এর অর্থ ঝুলিয়ে দেয়া, ঢিল দেয়া, ছেড়ে দেয়া ইত্যাদি। ৪- (أَوْفُوا)-এর অর্থ পূরণ করা, রক্ষা করা, পালন করা, সম্পন্ন করা, সম্পাদন করা, পূর্ণ করা ইত্যাদি। উপরিউক্ত শব্দসমূহের অর্থগুলো থেকে এটিই প্রতিভাত হয় যে, রাসূল (ﷺ) লম্বা, দীর্ঘায়িত ও পরিপূর্ণ দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন। ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘উক্ত পাঁচটি বর্ণনার সারাংশ হল, দাড়িকে তার আসল অবস্থায় ছেড়ে দিতে হবে। এর কোন অংশ-ই কেটে বা ছেঁটে বাদ দেয়া যাবে না। হাদীছে বর্ণিত শব্দগুলোর বাহ্যিক অর্থ থেকে এটিই প্রতীয়মান হয়। আমাদের যুগের আলেমগণও এ কথাই বলতেন (শারহু ছহীহ মুসলিম, ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফাৎওয়া নং-১৪৫৫১২)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘কিছু লোক দাড়ি ক্লিন সেভ করে অথবা দৈর্ঘ্য-েপ্রস্থে কিছুটা ছোট করে, অথচ এর কোনটাই জায়েয নয়। কেননা এটি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আদেশের বিরোধী (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৫/১৩৭ পৃ.)। শায়খ ছালিহ আল-উছায়মীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, নিশ্চয় দাড়ি ছোট করা মানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশের নাফরমানী করা। যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর আদেশ ও নির্দেশের আনুগত্য করতে চায়, সে যেন দাড়িতে হাত না লাগায়। কারণ রাসূল (ﷺ) কখনো দাড়িতে হাত লাগাননি, অনুরূপভাবে পূর্বের নবীগণও (উছায়মীন, মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১১/৮২ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, দাড়ি বড় করা, বৃদ্ধি করা ও পরিপূর্ণরূপে ছেড়ে দেয়া অপরিহার্য। অনুরূপভাবে দাড়িতে ক্ষুর, কাঁচি, ব্লেড বা অন্য কোন অস্ত্র লাগানো নিষিদ্ধ (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ১০/৯৬-৯৭ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ, ঢাকা।