উত্তর : ওয়াহদাতুল উজূদ বলতে আল্লাহর অস্তিত্বের মধ্যে বিলীন হওয়া বুঝায়। অস্তিত্ব জগতে যা কিছু আমরা দেখছি, সবকিছু একক এলাহী সত্তার বহিঃপ্রকাশ। এটা কুফুরী আক্বীদা। এই আক্বীদার অনুসারী ছূফীরা স্রষ্টা ও সৃষ্টিতে কোন পার্থক্য করে না। এদের মতে মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর সময়ে যারা বাছুর পূজা করেছিল, তারা মূলত আল্লাহকে পূজা করেছিল। কারণ তাদের দৃষ্টিতে সবই আল্লাহ। আল্লাহ আরশে নন, বরং সর্বত্র ও সবকিছুতে বিরাজমান। অতএব মানুষের মধ্যে ‘মুমিন’ ও ‘মুশরিক’ বলে কোন পার্থক্য নেই। যে ব্যক্তি মূর্তিপূজা করে বা পাথর, গাছ, মানুষ, তারকা ইত্যাদি পূজা করে, সে মূলত আল্লাহকেই পূজা করে। সবকিছুর মধ্যে আল্লাহর নূর বা জ্যোতির প্রকাশ রয়েছে। তাদের ধারণায় খৃষ্টানরা কাফির এজন্য যে, তারা কেবল ঈসা (আলাইহিস সালাম)-কেই প্রভু বলেছে। যদি তারা সকল সৃষ্টিকে আল্লাহ বলত, তাহলে তারা কাফির হত না। বলা বাহুল্য এটাই হল হিন্দুদের ‘সর্বেশ্বরবাদ’। তৃতীয় শতাব্দী হিজরী থেকে চালু এই সব কুফরী আক্বীদার ছূফী সম্রাট হলেন সিরিয়ার মুহিউদ্দিন ইবনু আরাবী।
বর্তমানে এই আক্বীদাই মা‘রিফাতপন্থী ছূফীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এদের দর্শন হল এই যে, প্রেমিক ও প্রেমাষ্পদের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হতে হবে যেন উভয়ের অস্তিত্বের মধ্যে কোন ফারাক না থাকে’। বলা বাহুল্য ‘ফানাফিল্লাহ’-র উক্ত আক্বীদা সম্পূর্ণরূপে কুফরী আক্বীদা। এই আক্বীদাই বর্তমানে চালু আছে। সর্বোপরি ইসলামী আক্বীদার সাথে মারেফাতের নামে প্রচলিত ছূফীবাদী আক্বীদার কোন সম্পর্ক নেই। ইসলাম ও ছূফীদর্শন সরাসরি সংঘর্ষশীল। ছূফীবাদের ভিত্তি হল আউলিয়াদের কাশফ্, স্বপ্ন, মুরশিদের ধ্যান ও ফয়েয ইত্যাদির উপরে। পক্ষান্তরে ইসলামের ভিত্তি হল আল্লাহর প্রেরিত ‘অহী’ কুরআন ও ছহীহ হাদীছের উপরে। ছূফীদের আবিষ্কৃত তরীকা সমূহ তাদের কপোলকল্পিত। এর সাথে কুরআন, হাদীছ, ইজমায়ে ছাহাবার কোন সম্পর্ক নেই। ছফীদের ইমারত খৃষ্টানদের বৈরাগ্যবাদ-এর উপরে দণ্ডায়মান। ইসলাম যাকে প্রথমেই দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে (সূরা আল-হাদীদ: ২৭)।
দ্বিতীয়তঃ পীররা শুধু নিজেদেরকেই আল্লাহর নির্বাচিত ওলী মনে করে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তার ওলী বা বন্ধুদের পরিচয় দিয়ে বলেন,
اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِیَآءَ اللّٰہِ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ - الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ کَانُوۡا یَتَّقُوۡنَ
‘জেনে রাখ! নিশ্চয় আল্লাহর ওয়ালীদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না, যারা ঈমান এনেছে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করে’ (সূরা ইউনূস: ৬২-৬৩)। ঈমান অর্থ শিরক ও কুফরমুক্ত তাওহীদ ও রিসালাতের বিশ্বাস। তাক্বওয়া অর্থ আত্মরক্ষা করা। সকল পাপ বর্জনকে তাক্বওয়া বলা হয়। ঈমান ও তাক্বওয়া যার মধ্যে যত বেশি ও পরিপূর্ণ হবে, তিনি তত আল্লাহ্র বড় ওয়ালী বলে বিবেচিত হবেন। এজন্য এমন প্রত্যেক মুসলিম যার মধ্যে ঈমান ও তাক্বওয়া আছে, তিনিই আল্লাহ্র ওয়ালী এবং ঈমান ও তাক্বওয়ার গুণ যার মধ্যে যত বেশি থাকবে, তিনি তত বড় ওয়ালী। ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ)-এর আক্বীদা বর্ণনা করে ইমাম ত্বাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
وَالْمُؤْمِنُوْنَ كُلُّهُمْ أَوْلِيَاءُ الرَّحْمَنِ، وَأَكْرَمُهُمْ عِنْدَ اللهِ أَطْوَعُهُمْ وَأَتْبَعُهُمْ لِلْقُرْآنِ
‘সকল মুমিনই করুণাময় আল্লাহ্র ওয়ালী। তাঁদের মধ্য থেকে যে যতবেশি আল্লাহ্র অনুগত ও কুরআনের অনুসরণকারী সে ততবেশি আল্লাহর নিকট সম্মানিত’ (ত্বাহাবী, আল-আক্বীদাহ, পৃ. ৩৫৭-৩৬২; ইবনু আবিল ঈয-এর শারহসহ)। ঈমান, তাক্বওয়া ও ফরয-নফল আমলের বাহ্যিক অবস্থার আলোকে আমরা মুসলিমদেরকে আল্লাহর ওয়ালী হিসাবে ধারণা করব। তবে কার ঈমান, তাক্বওয়া ও আমল আল্লাহ ক্ববুল করছেন তা আমরা জানি না। এজন্য অহীর নির্দেশনার বাইরে কাউকে ওলী বলে সুনিশ্চিত বিশ্বাস করা বা সাক্ষ্য দেয়া যায় না।
প্রশ্নকারী : ইমরান, সাতক্ষীরা।