মোবাইলে কথা বলার শিষ্টাচার
-মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান*
ভূমিকা
বর্তমানে বিশ্বের সকল দেশের সকল মানুষের জনপ্রিয় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হল মোবাইল ফোন। আধুনিক সভ্যতায় মোবাইল ফোন বৈপ্লবিক পরিবর্তন দাঁড় করিয়েছে। বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজ বা বৈশ্বিক গ্রামের আওতায় এনে দিয়েছে। এখন সারা পৃথিবীর তরুণ-তরুণী, ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, চাকুরীজীবী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষক, রিক্সাওয়ালা, ড্রাইভার, গার্মেন্টস কর্মী, নৌকার মাঝি, ইমাম, মুফতি, হাফেয-ক্বারী, মাওলানা, আলিম থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের হাতে হাতে শোভা পাচ্ছে নিত্যদিনের সঙ্গী মোবাইল ফোন। পৃথিবীর যে কোন দেশের ও প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কথা বলার, খোঁজ-খবর ও যোগাযোগ করার, সংবাদ, ছবি ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট ইত্যাদি পাঠানোর সহজ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন। আধুনিক বিজ্ঞানের শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার মোবাইল ফোন স্বল্প সময়ে মানুষের জীবনকে সুন্দর, সহজ ও সাবলীল করে তুলেছে।
সার্বিক বিবেচনায় মোবাইল ফোনের উপকারিতার পাশাপাশি ক্ষতিকারক দিকটাও কম নয়। বর্তমান সমাজের তরুণ-তরুণী ও ছাত্র-ছাত্রীরা এন্ড্রয়েড সেটে ওয়াইফাই ও ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্যোশাল নেটওয়ার্কিং-এর মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, ইমো, ভাইভার, ইনস্ট্রাগ্রামে কথা বলে, মেসেজিং করে, চ্যাটিং আর গেমস খেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপচয় করছে। এভাবে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময় নষ্ট করছে। তাদের চরিত্র অপসংস্কৃতি ও অনৈতিকতার কালো ছোবলে বিষাক্ত। অবৈধ প্রেম-ভালবাসার নামে প্রতারণা, সাইবার ক্রাইম সহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। মোবাইল গেমস, কার্টুন আর পর্ণোগ্রাফির বিষাক্ত ছোবলে আমাদের সোনামণিদের কোমল হৃদয়েও অশ্লীলতার কালো দাগ পড়ে যাচ্ছে। ভেঙ্গে পড়ছে পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন। এভাবে চলতে থাকলে যুবসমাজ খুব শিঘ্রই অনৈতিকতা, অশ্লীলতা ও অপসংস্কৃতির অতল তলে নিমজ্জিত হবে।
মোবাইল ফোনে কথা বলার ইসলামী শিষ্টাচার
মানবতার কল্যাণে বিজ্ঞানের অনেক আবিষ্কারের মধ্যে মোবাইল ফোনের অবদান অনস্বীকার্য। মোবাইল আমাদের জীবনের প্রাত্যহিক কাজকে সহজ, সাবলীল ও সুন্দর করে দিয়েছে। আবার ফোনের অনিয়ন্ত্রিত ও অযৌক্তিক ব্যবহার আমাদের শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজকে অনৈতিকতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। উক্ত ভয়াবহ ফিতনার কথাই হয়তো নিম্নোক্ত হাদীছে ফুঠে উঠেছে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ حُذَيْفَةَ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ تُعْرَضُ الْفِتَنُ عَلَى الْقُلُوْبِ كَالْحَصِيْرِ عُوْدًا عُوْدًا فَأَيُّ قَلْبٍ أُشْرِبَهَا نَكَتَتْ فِيْهِ نُكْتَةٌ سَوْدَاءُ وَأَيُّ قَلْبٍ أَنْكَرَهَا نَكَتَتْ فِيْهِ نُكْتَةٌ بَيْضَاءُ حَتَّى يَصِيْرَ عَلَى قَلْبَيْنِ أَبْيَضُ بِمِثْلِ الصَّفَا فَلَا تَضُرُّهُ فِتْنَةٌ مَا دَامَتِ السَّمَاوَاتُ وَالْأَرْضُ وَالْآخَرُ أَسْوَدُ مِرْبَادًّا كَالْكُوْزِ مُجْخِيًّا لَا يَعْرِفُ مَعْرُوْفًا وَلَا يُنْكِرُ مُنْكَرًا إِلَّا مَا أُشْرِبَ مِنْ هَوَاهُ
হুযাইফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি যে, মানুষের অন্তরে ফিতনাসমূহ এমনভাবে প্রবেশ করে যেমন কাঠ একটির পর আরেকটি বিছানো হয়ে থাকে এবং সেই অন্তরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে তা প্রবেশ করে। এতে একটি কাল দাগ পড়ে। আর যে অন্তর একে স্থান দেয় না তাতে একটি সাদা দাগ পড়ে। ফলে মানুষের অন্তরসমূহ পৃথক দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক প্রকার অন্তর হয় মর্মর পাথরের ন্যায় সাদা, যাকে আসমান ও যমীন বহাল থাকা পর্যন্ত কোন ফিতনাই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না। পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকার অন্তর হয় কয়লার মত কাল। যেমন উপুড় হওয়া পাত্রের ন্যায়, যাতে কিছুই ধারণ করার ক্ষমতা থাকে না। তা ভালকে ভাল জানার এবং মন্দকে মন্দ জানার ক্ষমতা রাখে না। ফলে কেবল তাই গ্রহণ করে, যা তার প্রবৃত্তির চাহিদা মোতাবেক হয়।[১]
মোবাইল ফোন, ফেসবুক ও ইন্টারনেট অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে যুব সমাজ অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের অন্তরে কালো দাগ পড়ে গেছে। ফলে তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। অতএব মোবাইল ফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নিম্নে মোবাইল ফোনে কথা বলার ইসলামী শিষ্টাচার আলোকপাত করা হল।
মোবাইলে সালাম দিয়ে কথা বলা শুরু ও শেষ করা
মোবাইল ফোনে কথা বলার শুরুতে সালাম দেয়া সুন্নাত। কথা বলার শুরুতে এবং শেষে অবশ্যই ‘আস্সালামু ‘আলাইকুম’ বলবে। ‘হ্যালো’ বলে কথা বলা শুরু করা এবং ‘বাই বাই’, ‘টাটা’ বলে কথা শেষ করা ইসলামী আদব নয়। এ ধরনের সকল শব্দ অবশ্যই পরিত্যাগযোগ্য। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সালাম দেয়ার পূর্বে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। হাদীছে এসেছে, اَلسَّلَامُ قَبْلَ السُّؤَالِ فَمَنْ بَدَأكُمْ بِالسُّؤَالِ قَبْلَ السَّلَامِ فَلَا تُجِيْبُوْهُ ‘কোন কিছু জিজ্ঞেস করার পূর্বে সালাম। যে ব্যক্তি সালাম ব্যতীত কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করবে, তোমরা তার জবাব প্রদান করবে না’।[২] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِنَّ أَوْلَى النَّاسِ بِاللهِ مَنْ بَدَأَهُمْ بِالسَّلَامِ ‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকটে উত্তম সেই ব্যক্তি, যে প্রথমে সালাম দেয়’।[৩]
মোবাইলে উচ্চৈঃস্বরে বা কর্কশ স্বরে কথা না বলা
শিষ্টাচার বজায় রেখে ভদ্র ও সুন্দরভাবে মোবাইলে কথা বলা উচিত। উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করে বা কর্কশ স্বরে কখনও কথা বলা ঠিক নয়। এ কারণে ফোনদাতা অসন্তুষ্ট ও বিরক্ত হবে এবং মন খারাপ করবে। তাছাড়া সকল অবস্থায় সবার সঙ্গে নিম্ন স্বরে কথা বলা ইসলামের সৌন্দর্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اغۡضُضۡ مِنۡ صَوۡتِکَ اِنَّ اَنۡکَرَ الۡاَصۡوَاتِ لَصَوۡتُ الۡحَمِیۡرِ ‘তুমি তোমার কণ্ঠস্বর নীচু কর, স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা খারাপ’ (সূরা লুক্বমান : ১৯)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا ‘তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৮৩)। অতএব সকলকে মোবাইল ফোনে সুন্দরভাবে কথা বলা উচিত।
মোবাইলে রুচিসম্মত রিংটোন ব্যবহার করা
মোবইলে রুচিসম্মত রিংটোন ব্যবহার করা ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক। বাংলা, ইংরেজি বা হিন্দি সিনেমা বা গানের সুরের রিংটোন দিয়ে দেশের অধিকাংশ মোবাইল ভরা। মুসলিমদের জন্য বাজনাযুক্ত গান হারাম হওয়া সত্ত্বেও মোবাইল কোম্পানীগুলো প্রতিটি মোবইলে বাজনাযুক্ত রিংটোন সংযুক্ত করে দিয়েছে। ফলে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মানুষ হারাম কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। সুতরাং এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা সকলের কর্তব্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّیَتَّخِذَہَا ہُزُوًا اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ
‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ হতে (মানুষকে) বিচ্যুত করার জন্য অবান্তর কথাবার্তা (গান-বাজনা) ক্রয় করে এবং এই পথটিকেই ঠাট্টা-বিদ্রƒপ করে; তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’ (সূরা লুক্বমান : ৬)। হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِنَّ اللهَ تَعَالَى حَرَّمَ الْخَمْرَ وَالْمَيْسِرَ وَالْكُوْبَةَ ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মদপান করা, জুয়া খেলা এবং বাদ্যযন্ত্র হারাম করেছেন’।[৪] অতএব মোবাইলের রিংটোন সংযোগের সময় সতর্ক থাকতে হবে।
রিংটোন বাজলে বা কল আসলে দ্রুত রিসিভ করা
কল আসলে বা রিংটোন বাজলে দ্রুত রিসিভ করা ইসলামী আদব। কোন প্রকার ক্ষতি বা সমস্যার আশঙ্কা না থাকলে দ্রুত ফোন ধরে প্রয়োজনীয় কথা বলা উচিত। অনেকে এমন আছেন যে, ফোন বারবার বেজেই চলেছে কিন্তু রিসিভ করেন না। অথচ কেউ ডাকলে বা কথা বলতে চাইলে তার ডাকে সাড়া দেয়া ও কথা বলা ভদ্র ও ভাল মানুষের পরিচয় বহন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ لَا تَسۡتَوِی الۡحَسَنَۃُ وَ لَا السَّیِّئَۃُ اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ فَاِذَا الَّذِیۡ بَیۡنَکَ وَ بَیۡنَہٗ عَدَاوَۃٌ کَاَنَّہٗ وَلِیٌّ حَمِیۡمٌ
‘ভাল এবং মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা; ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৪)।
আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন ভাল বা উত্তম ব্যবহারের চমৎকার ফলাফলের কথা বলেছেন। মোবাইলে সুন্দর কথা বলার মাধ্যমে মানুষের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করা ও তা অক্ষুণ্ন রাখা খুব সহজেই সম্ভব হয়। নিজেদের প্রয়োজনে যেমন অন্যকে ফোন করা হয় এজন্য যে, সে যেন তার ফোনে সাড়া দেয়; অনুরূপভাবে অপরপ্রান্তে ফোনও রিসিভ করে তার ডাকে সাড়া দেয়া কর্তব্য। কেননা আমরা অন্যের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিলে সেও আমার প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিবে এটাই স্বাভাবিক। অতএব ফোন বাজলে দ্রুত রিসিভ করা উচিত।
সঠিক কথা বলার উপকারিতা
মোবাইলে সর্বদা সঠিক কথা বলা এবং কখনও মিথ্যা ও আজে-বাজে কথা না বলা। সঠিক কথা বলার গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ قُوۡلُوۡا قَوۡلًا سَدِیۡدًا -یُّصۡلِحۡ لَکُمۡ اَعۡمَالَکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ
‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য কথা বল। তাহলে তিনি তোমাদের কর্মকে ক্রটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন’ (সূরা আল-আহযাব : ৭০-৭১)।
হাসিমুখে কথা বললে অতি সহজেই অন্যের মনকে জয় করা যায়। এজন্যইতো মুচকি হেসে কথা বলাকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাদাক্বাহ বলেছেন।[৫] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাস রাখে সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[৬]
মোবাইলে কথা হবে নরম স্বরে, ভাষা হবে সহজ-সরল ও সুন্দর, মার্জিত ও রুচিসম্মত। ফোনে কখনও মিথ্যা কথা বলা ঠিক নয়। অথচ বেশীরভাগ মানুষকে দেখা যায় তারা একস্থানে থেকে অন্য স্থানের কথা বলছে। এমন মিথ্যা বলা খুবই খারাপ এবং এর পরিণাম ভয়াবহ। আল্লাহ তা‘আলা নিজেই মিথ্যাবাদীদের প্রতি অভিশাপ করেছেন (সূরা আলে ‘ইমরান : ৬১)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, آيَةُ الْمُنَافِقِ ثَلَاثٌ إِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا وَعَدَ أَخْلَفَ وَإِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ ‘মুনাফিকের নিদর্শন ৩টি। ১. কথা বললে মিথ্যা বলে, ২. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখলে খেয়ানত করে’।[৭] অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِيْ إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْجَنَّةِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ صِدِّيْقًا وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِيْ إِلَى الْفُجُوْرِ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِيْ إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللهِ كَذَّابًا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ. وَفِيْ رِوَايَةِ لِمُسْلِمٍ قَالَ إِنَّ الصِّدْقَ بِرٌّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِيْ إِلَى الْجَنَّةِ وَإِنَّ الْكَذِبَ فُجُوْرٌ وَإِنَّ الْفُجُوْرَ يَهْدِيْ إِلَى النَّارِ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধর। কেননা সত্য কল্যাণের পথ দেখায় আর কল্যাণ জান্নাতের পথ দেখায়। সুতরাং যে ব্যক্তি সর্বদা সত্যের উপর দৃঢ় থাকে তাকে আল্লাহর খাতায় সত্যবাদী বলে লেখা হয়। পক্ষান্তরে তোমরা মিথ্যা থেকে বেঁচে থাক। কেননা মিথ্যা পাপের পথ দেখায় এবং পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। সুতরাং যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলে এবং মিথ্যায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে আল্লাহর খাতায় মিথ্যুক বলে লেখা হয়।[৮] অতএব মোবাইলে ঠাট্টারছলে হলেও সর্বদা মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সর্বদা সঠিক, সুন্দর, ভাল ও সত্য কথা বলার চেষ্টা করতে হবে।
ফোনে ঝগড়া বিবাদ বা তর্ক-বিতর্ক না করা
মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় কখনও ঝগড়া-বিবাদ ও তর্ক-বিতর্ক না করা। যদি বিশেষ কারণে তর্ক করতেই হয়, তাহলে তা উত্তম পন্থায় করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে, আমার কথায় যেন কেউ মানসিকভাবে আঘাত না পায় এবং কারও ক্ষতি না হয়। মহান আল্লাহর বাণী, اِدۡفَعۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ السَّیِّئَۃَ نَحۡنُ اَعۡلَمُ بِمَا یَصِفُوۡنَ ‘মন্দের মোকাবেলা কর, যা উত্তম তা দ্বারা; তারা যা বলে আমি সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত’ (সূরা আল-মুমিনূন : ৯৬)।
মানুষের স্বভাব হল কেউ তার উপর কথা, কাজ ও আচরণে চড়াও হলে সেও তার প্রত্যুত্তরে আরও কড়া মেজাজে তার উপর চড়াও হয়। অথচ ইসলামী আদর্শ হল মন্দের প্রতিবাদ করবে ভাল দ্বারা এবং মূর্খ ও অজ্ঞদের সাথে কথা বলার সময় কখনও তর্কে না জড়িয়ে পড়া। কারণ আল্লাহ তা‘আলা মূর্খ ও অজ্ঞদের পরিত্যাগ করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ عِبَادُ الرَّحۡمٰنِ الَّذِیۡنَ یَمۡشُوۡنَ عَلَی الۡاَرۡضِ ہَوۡنًا وَّ اِذَا خَاطَبَہُمُ الۡجٰہِلُوۡنَ قَالُوۡا سَلٰمًا ‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে ন¤্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদেরকে যখন অজ্ঞ লোকেরা সম্বোধন করে, তখন তারা বলে সালাম’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ৬৩)।
সুধী পাঠক! মহান আল্লাহ এখানে অজ্ঞদের সাথে তর্ক না করে সালাম দিয়ে বিদায় নিতে বলেছেন। ফোনেও যেন আমরা কখনও কারও সাথে তর্কে জড়িয়ে না পড়ি সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং সর্বাবস্থায় কথা-বার্তায় ভদ্রতা বজায় রাখতে হবে।
তদন্ত করে কথা বলা
মোবাইলে একজনের নিকট থেকে কোন একটি কথা, খবর বা ঘটনা শুনেই বা ফেসবুকের মাধ্যমে পেয়েই মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাটি প্রচার করা বা ছড়িয়ে দেয়া কখনও উচিত নয়। এরূপ অনেক ঘটনার ফলে সমাজে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় এবং ঘটে যায় অনেক অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা। মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ جَآءَکُمۡ فَاسِقٌۢ بِنَبَاٍ فَتَبَیَّنُوۡۤا اَنۡ تُصِیۡبُوۡا قَوۡمًۢا بِجَہَالَۃٍ فَتُصۡبِحُوۡا عَلٰی مَا فَعَلۡتُمۡ نٰدِمِیۡنَ
‘হে মুমিনগণ! কোন ফাসিক ব্যক্তি যদি তোমাদের নিকট কোন বার্তা আনয়ন করে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়কে কষ্ট না পৌঁছাও যাতে পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হয়ে যাও’ (সূরা আল-হুজুরাত : ৬)। অতএব মোবাইল, ফেসবুক বা ইন্টারনেটের কোন কথা, ঘটনা বা সংবাদ জানলে তা যথাযথ যাচাই-বাচাই করে প্রচার করা উচিত।
মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া
মোবাইল ইন্টারনেট হতে পারে দ্বীন প্রচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। বর্তমানে সম্মানিত আলিম, ইমাম ও বক্তাগণ কুরআন ও হাদীছের বিশুদ্ধ বাণী মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লক্ষকোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছে দিতে পারেন। ফলে মানুষ ছহীহ আক্বীদার দাওয়াত পেয়ে নিজেদের আমলকে সমৃদ্ধ করতে পারে। মানুষ যত কাজে সময় ব্যয় করে তন্মধ্যে দাওয়াতী কাজের জন্য যে সময় ব্যয় করে তা শ্রেষ্ঠতম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ مَنۡ اَحۡسَنُ قَوۡلًا مِّمَّنۡ دَعَاۤ اِلَی اللّٰہِ وَ عَمِلَ صَالِحًا وَّ قَالَ اِنَّنِیۡ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ
‘ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কথায় কে উত্তম যে আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করে, সৎ কর্ম করে এবং বলে, আমি তো আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত’ (সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩)। অন্যত্র সাহল ইবনু সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,فَوَاللهِ لَأَنْ يَهْدِي اللهُ بِكَ رَجُلًا وَاحِدًا خَيْرٌ لَكَ مِنْ أَنْ يَكُوْنَ لَكَ حُمْرُ النَّعَمِ ‘আল্লাহর কসম! তোমার দ্বারা যদি একটি লোককেও আল্লাহ হেদায়াত দান করেন, তাহলে তা তোমার জন্য লাল বর্ণের উট অপেক্ষাও অধিকতর উত্তম হবে’।[৯]
মোবাইলের মাধ্যমে অতি সহজে স্বল্প খরচে একই সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের মাঝে দ্বীনের দাওয়াত দেয়া যায়। ফলে বাড়ীতে, অফিসে, কাজের ফাঁকে, শুয়ে, বসে অতি সহজে দাওয়াত গ্রহণ করে সমাজ, দেশ ও জাতি উপকৃত হচ্ছে। অন্যদিকে দাওয়াতদাতা অতি সহজে সীমাহীন নেকীর অধিকারী হতে পারেন। মোবাইলে অযথা সময় নষ্ট না করে দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমে অফুরন্ত ছওয়াবের ভাগীদার হওয়া যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের খ্যাতনামা আলিমগণ দ্বীনের এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তাদের খেদমত কবুল করুন-আমীন!!
ফোন প্রদানকারীকে কথা বলার সুযোগ দেয়া
অনেকে এমন আছেন যে, ফোন আসছে আর কথা বলেই যাচ্ছে। ফোনদাতা কী কারণে ফোন দিল সেজন্য তাকে কথা বলার সুুযোগই দেয়া হয় না। ফলে ফোনদাতা বিরক্ত, অসন্তুষ্ট ও রাগান্বিত হয়। অথচ অন্যের কথা বলার সুযোগ দেয়া শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। অতএব ফোনে উভয়ের কথাগুলো শুনা ও বুঝার চেষ্টা করতে হবে এবং কথার গুরুত্ব দিতে হবে।
সময়মত ফোন ধরতে না পারলে ক্ষমা চেয়ে নেয়া
প্রয়োজনেই মানুষ অন্যের শরণাপন্ন হয়। বর্তমানে প্রযুক্তির যুগে অনেকেই তার প্রয়োজনটা মোবাইলেই মিটিয়ে থাকে। তাই কেউ ফোন করলে সময়মত বা সাথে সাথে ফোন ধরতে না পারলে পরবর্তীতে ফোন রিসিভ করে বা ফোন ব্যাক করে দুঃখ প্রকাশ করা উচিত। পাশাপাশি ফোন না ধরার কারণ তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। যাতে তার মনের ভিতর লুক্কায়িত ক্ষোভ দূর হয়। ফলে সে আরও ঘনিষ্ট হবে।
মোবাইলে নিরর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা
মোবাইলে প্রয়োজনীয় ভাল কথাগুলো গুছিয়ে বলতে হবে অথবা চুপ থাকবে। মানব জীবনের প্রতিটি কথা লিপিবদ্ধ করা হয় এবং সম্মানিত ফেরেশতাগণ স্বাক্ষী থাকেন, লিখে রাখেন এবং পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলা তার হিসাব গ্রহণ করবেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَ اِنۡ تُبۡدُوۡا مَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ اَوۡ تُخۡفُوۡہُ یُحَاسِبۡکُمۡ بِہِ اللّٰہُ فَیَغۡفِرُ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یُعَذِّبُ مَنۡ یَّشَآءُ وَ اللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ‘তোমাদের অন্তরে যা আছে, তা তোমরা প্রকাশ কর কিংবা গোপন কর আল্লাহ তার হিসাব তোমাদের নিকট হতে গ্রহণ করবেন। সুতরাং যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দিবেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮৪)। তাছাড়া অনর্থক কথা বর্জন করা মুমিনদের অন্যতম গুণাবলী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা অসার (অনর্থক) কথাবার্তা এড়িয়ে চলে’ (সূরা আল-মুমিনূন : ৩)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اِذَا سَمِعُوا اللَّغۡوَ اَعۡرَضُوۡا عَنۡہُ وَ قَالُوۡا لَنَاۤ اَعۡمَالُنَا وَ لَکُمۡ اَعۡمَالُکُمۡ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ لَا نَبۡتَغِی الۡجٰہِلِیۡنَ
‘তারা যখন অবাঞ্চিত বাজে কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং বলে, আমাদের জন্য আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ৫৫)। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনর্থক কথা বলতে নিষেধ করেছেন।[১০] অতএব ছোট-বড় সকলে মোবাইলে সকল প্রকার নিরর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে বিরত থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করতে হবে।
মোবাইলে ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয় কথা বলার নিয়ম
ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতিমূলক কোন কাজের কথা বলতে গেলে অবশ্যই ‘ইনশাআল্লাহ’ বলতে হবে। এ অভ্যাস ছোট-বড় সকলকে নিয়মিতভাবে রপ্ত করতে হবে। ‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দের অর্থ যদি আল্লাহ চান; আল্লাহর ইচ্ছায়, যা ভবিষ্যতের প্রতিটি কাজের অভিপ্রায় ব্যক্ত করার সঙ্গে সম্পর্কিত। ভবিষ্যতে কোন কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ لَا تَقُوۡلَنَّ لِشَایۡءٍ اِنِّیۡ فَاعِلٌ ذٰلِکَ غَدًا – اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰہُ
‘আপনি কোন কাজের বিষয়ে বলবেন না যে, সেটি আমি আগামীকাল করব; যদি আল্লাহ চান (এ কথা) বলা ব্যতীত’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ২৩-২৪)। অর্থাৎ আমরা যখন বলব যে, আগামীকাল করব, আগামীকাল পড়ব, আগামীকাল যাব ইত্যাদি কথা বলার ক্ষেত্রে অবশ্যই ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা যরূরী। সুতরাং ভবিষ্যতের কোন কথা বা কাজ করতে চাইলে এভাবে বলতে হবে যে, ‘ইনশাআল্লাহ, আগামীকাল এ কাজ করব’ ইত্যাদি।
কথা বলার সময় কাউকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ না করা
মোবাইলে কথা বলার সময় মজা করে হলেও কাউকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করা, অবহেলা করা চরম অন্যায় ও খারাপ কাজ। বুদ্ধি-বিবেক খাটিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলবে। কাউকে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা টিটকারী করা বা লেংড়া, কানা, খোঁড়া বলে ডাকা বা গালি দেয়া কঠিন পাপের কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا یَسۡخَرۡ قَوۡمٌ مِّنۡ قَوۡمٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُوۡنُوۡا خَیۡرًا مِّنۡہُمۡ وَ لَا نِسَآءٌ مِّنۡ نِّسَآءٍ عَسٰۤی اَنۡ یَّکُنَّ خَیۡرًا مِّنۡہُنَّ وَ لَا تَلۡمِزُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ لَا تَنَابَزُوۡا بِالۡاَلۡقَابِ بِئۡسَ الِاسۡمُ الۡفُسُوۡقُ بَعۡدَ الۡاِیۡمَانِ وَ مَنۡ لَّمۡ یَتُبۡ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الظّٰلِمُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! কতিপয় পুরুষ যেন অপর কতিপয় পুরুষকে বিদ্রূপ না করে; কেননা তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে এবং কতিপয় নারী অপর কতিপয় নারীকেও যেন বিদ্রূপ না করে; কেননা তারা তাদের অপেক্ষা উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কর না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না; ঈমানের পরে মন্দ নামে ডাকা গর্হিত কাজ। যারা এ ধরনের আচরণ পরিত্যাগ করে না তারাই অত্যাচারী’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১১)।
ফোনে কথা হবে মধ্যম মানের স্পষ্টভাবে
ফোনে কথা অতি সংক্ষেপ অথবা বেশী দীর্ঘ কোনটাই হবে না। শুধু দরকারী কথাগুলো স্পষ্টভাবে বলতে হবে। মোবাইল ফোনে কথা বলতে গেলেও অর্থ, সময় ও শ্রম ব্যয় হয়। বিন¤্রকণ্ঠে সহজ-সরল ভাষায় সকলে হৃদয়গ্রাহী মার্জিত, রুচিসম্মত ও মনোমুগ্ধকর কথা সবার প্রিয়, আকর্ষণীয় এবং মনঃপূত হয়। অতএব আমাদের সকলকে ভাল ও উত্তম কথা বলার প্রাকটিস করতে হবে।
একই সময়ে দুইবারের বেশি কল না করা
একই সময়ে একজনকে দুইবারের বেশী ফোন করা ঠিক নয়। কারণ সে হয়ত ছালাতে, বাথরুমে, যাত্রাপথে কিংবা তার মোবাইল সাইলেন্ট মুডে আছে শুনতে পাচ্ছে না, হয়তবা কোন রোগীর সেবা করছে ইত্যাদি যে কোন কারণ থাকতে পারে ফোন না ধরার। বিরক্ত না হয়ে কিংবা খারাপ মন্তব্য না করে কিছুক্ষণ পর পুনরায় তাকে ফোন করা ভাল।
(আগামী সংখ্যায় সমাপ্য ইনশাআল্লাহ)
* চাঁদপুর, রূপসা, খুলনা।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪।
[২]. সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৮১৬, সনদ হাসান।
[৩]. আবূ দাঊদ, হা/৫১৯৭, সিলসিলা ছহীহা, হা/৩৩৮২, ছহীহুল জামে, হা/৬১২১।
[৪]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৯৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭৬।
[৫]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫২৯; মিশকাত, হা/১৯১১।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৪৭।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৮।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৯৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬০৭।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৭০১; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৮।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৯২।
প্রসঙ্গসমূহ »:
শিশু-কিশোর