মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন

মোবাইলে কথা বলার শিষ্টাচার

-মুহাম্মাদ আযীযুর রহমান*


[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

অবসর ও বিশ্রামের সময় কাউকে ফোন না করা

ছালাতের সময়, গভীর রাতে ঘুমানোর সময়, খুব ভোরে ফোন না করা বা মিসকল না দেয়া। কারণ এ সময়গুলো মানুষ ছালাতরত অবস্থায় এবং ঘুমের মধ্যে থাকার কারণে ছালাত ও ঘুমের ক্ষতি হয় এবং বিরক্তবোধ করে।

ফোন লাউডস্পিকারে না শুনা এবং অন্যজনের ফোন রিসিভ না করা
কারও ফোন কখনও লাউডস্পিকারে শুনা উচিত নয় এবং অন্যজনের ফোন রিসিভ করা ঠিক নয়। কারণ এর ফলে পাশে অবস্থান করা ব্যক্তিদের সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং কলারের গোপন কথা থাকলে তা ফাঁস হয়ে যায়। তবে বারবার ফোন আসলে ঘনিষ্টজনের কেউ ফোন রিসিভ করে মেসেজটি ফোনের মালিককে পৌঁছে দেয়া ভাল।

হাতের কাছে কোন নোটবুক রাখা

জরুরী কোন কল আসলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নোট করার জন্য হাতের কাছে কলম ও ছোট নোট রাখা উচিত। ফলে মোবাইলে কথা বলার সময় দ্রুত এদিক-সেদিক যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

জনবহুল এলাকা এবং যানবাহন চালানোর সময় ফোন রিসিভ না করা ও কথা না বলা

মসজিদ, মাদরাসা, ওয়াজ মাহফিল, সভা-সমাবেশে অবস্থানকালে ফোন রিসিভ না করাই ভাল। কেননা কলার কিছুই শুনতে ও বুঝতে পারবে না। তবে পরবর্তীতে সুবিধাজনক স্থানে যেয়ে প্রয়োজনীয় কথাগুলো সংক্ষেপে সেরে নিতে হবে। এছাড়া গাড়ী চালানোর সময়ও মোবাইলে কথা বলা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কারণ এ সময় যে কোন ধরনের মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

মোবাইল ফোন সাইলেন্ট মুডে রাখা

মসজিদ, মাদরাসা, ক্লাসরুম, লাইব্রেরী, হাসপাতাল, মিটিংরুম, সভা-সমাবেশ, সেমিনার সহ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকা অবস্থায় মোবাইল ফোন সাইলেন্ট মুডে রাখা বা অফ করে রাখা জরুরী। যাতে পার্শ্ববর্তী মানুষদের কোন সমস্যা না হয়।

অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলে করণীয়

এমতাবস্থায় তার পরিচয় ভালভাবে নিশ্চিত হতে হবে। কেননা পরিচয় না জেনে কথা বল ঠিক নয়।

সম্মানি তব্যক্তির সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা
উচ্চ পর্যায়ের কোন সম্মানীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে হলে মার্জিত ভাষায় বলা উচিত। অতঃপর সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর বিনম্রভাবে নিজের পরিচয় দিয়ে মূল বক্তব্য সংক্ষেপে সুন্দর ভাষায় উপস্থাপন করা।

মোবাইল ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিকসমূহ
অবৈধ সম্পর্কের অবাধ বিস্তার লাভ
বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী, স্বামী-স্ত্রীরা নিজেদের দায়িত্ব ভুলে গিয়ে মোবাইলের মাধ্যমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অতিবাহিত করছে। পারিবারিক শাসনের কারণে যেসকল পরিবারের ছেলে-মেয়েরা প্রেম-ভালবাসার সংস্পর্শে আসতে পারেনি, তারাও আজ দরজা বন্ধ করে নির্জন রাতে অবৈধ পথে পা বাড়াচ্ছে। টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারে না, বাড়ীতে তিনবেলা খাবার জুটে না, তারাই আবার দামী এন্ড্রয়েড মোবাইল সেট ব্যবহার করে। এভাবে সমাজ অধঃপতনের অতলতলে ডুবে যাচ্ছে। ফলে তরুণ ছেলে-মেয়েদের শরীর, স্বাস্থ্য ও ব্রেইন ক্রমান্বয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ রাতকে বিশ্রামের জন্য সৃষ্টি করেছেন (সূরা ইউনুছ : ৬৭)। হাদীছে এসেছে, أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَكْرَهُ النَّوْمَ قَبْلَ الْعِشَاءِ وَالْحَدِيْثَ بَعْدَهَا ‘আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ইশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপসন্দ করতেন’।[১]

পারিবারিক অশান্তির ব্যাপকতা
পারিবারিক জীবনে অশান্তির কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল মোবাইল। স্ত্রী ফেসবুকের মাধ্যমে অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে আর স্বামী অন্যান্য গায়ের মাহরাম মেয়েদের সঙ্গে অবৈধ প্রেম বা পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ছে। স্বামীর প্রবাসে অথবা কর্মস্থলে থাকার সুবাধে মোবাইলে খোশালাপ, প্রেমালাপ করে ধীরে ধীরে অনেকেই আবার অবৈধ শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। কখনো স্বাভাবিক ছবি, নগ্ন ছবি আপলোড করে অথবা কখনো ভিডিও কলের মাধ্যমে নিজেকে প্রদর্শন করে। আবার নিজের দেহকেও প্রকাশ করে। অহরহ এমন ঘটনা ঘটতে থাকে। আবার অনেক ধার্মিক পরিবারের নেকাব পরিহিতা সুন্দর চেহারার মেয়েটিও মোবাইলের মাধ্যমে গোপনে প্রেম করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাচ্ছে। ফলে পারিবারিক অশান্তি বিস্তৃতি লাভ করছে।

অথচ অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনকারী বা যেনাকারী ইহকালে এবং পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এ ব্যাপারে ইসলামের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ لَا تَقۡرَبُوا الۡفَوَاحِشَ مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَ مَا بَطَنَ ‘তোমরা অশ্লীল কাজ ও কথার নিকটেও যেও না, তা প্রকাশ্যই হোক বা গোপনীয়ই হোক’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৫১)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قُلۡ اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الۡفَوَاحِشَ مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَ مَا بَطَنَ وَ الۡاِثۡمَ ‘(হে মুহাম্মাদ )! আপনি ঘোষণা করে দিন আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা এবং পাপকাজ হারাম করেছেন’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩৩)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَ لَا تَقۡرَبُوا الزِّنٰۤی اِنَّہٗ کَانَ فَاحِشَۃً وَ سَآءَ سَبِیۡلًا ‘তোমরা যিনার নিকটবর্তী হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৩২)।

অপরাধের বিস্তৃতি
মোবাইল সন্ত্রাসী ও অন্ধকার জগতের মোক্ষম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তারা অতি সহজে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে সন্ত্রাসী কর্মকা- অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি কারাগারে থেকেও চাঁদাবাজি ও অপরাধকর্ম অবলীলাক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে। মোবাইলে মানুষকে ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধমকি দেয়া নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও ঘুষ লেনদেনও চলছে। স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা পালিয়ে যাচ্ছে এবং অবৈধ প্রেম-ভালবাসার মাধ্যমে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চরমভাবে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।

অশ্লীলতার ছড়াছড়ি
বর্তমানে ব্যাপকহারে অশ্লীলতা বিস্তারলাভ করেছে। মোবাইলের মাধ্যমে কেউ ভালভাবে পড়াশোনা করছে, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। কেউ দ্বীন প্রচার করছে আবার কেউ কেউ অশ্লীলতার বিস্তার ঘটাচ্ছে। নোংরা নাটক-সিনেমা, নগ্ন-অর্ধনগ্ন চলচ্চিত্র, পর্নো ছবি দেখতে দেখতে তাদের জীবনটা দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। অথচ অশ্লীলতার বিস্তারকারীদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে পীড়াদায়ক শাস্তি প্রস্তুত রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ الۡفَاحِشَۃُ فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ‘ মুমিনদের মধ্যে যারা অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে পীড়াদায়ক শাস্তি’ (সূরা আন-নূর : ১৯)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,مَا كَانَ الْفُحْشُ فِيْ شَيْءٍ إِلَّا شَانَهُ وَمَا كَانَ الْحَيَاءُ فِي شيْءٍ إِلَّا زَانَهُ ‘কোন জিনিসে অশ্লীলতা বা নির্লজ্জতা তাকে কলুষিত করে। পক্ষান্তরে কোন জিনিসে লজ্জা-লাজুকতা তাকে সৌন্দর্যম-িত করে’।[২]

গান-বাজনার ব্যাপকতা
মোবাইলের মাধ্যমে গান-বাজনার ব্যাাপকতা লাভ করেছে। কেননা রিংটোন মোবাইলের আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। আর রিংটোন মানেই বাংলা, ইংরেজী বা হিন্দি গান ও বাজনার সমাহার। ওয়েলকাম টিউনের নামে আউটগোয়িং এ বাধ্যতামূলকভাবে গান শুনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক মোবাইলে রিসিভ করা মাত্র কয়েক সেকেন্ড গান শুনার পর কথা হয়। মোবাইল অপারেটরের নিকট ফোন করলে আধা মিনিট গান শোনানো হয়। আলিমরাও এই সিস্টেমের কারণে গান শুনতে বাধ্য হন। আল্লাহর ঘর মসজিদেও মাঝে-মধ্যে রিংটোন শুনা যায়। ফলে সকল মুছল্লীদের ছালাতের ব্যঘাত ঘটায় ও মনোযোগ নষ্ট করে। অথচ অশ্লীল গান-বাজনা, ছবি, কবিতা পাঠ, ক্রীড়া-কৌতুক ইত্যাদি হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّشۡتَرِیۡ لَہۡوَ الۡحَدِیۡثِ لِیُضِلَّ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّیَتَّخِذَہَا ہُزُوًا اُولٰٓئِکَ لَہُمۡ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ

‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশতঃ আল্লাহর পথ থেকে (মানুষকে) বিচ্যুত করার জন্য অবান্তর কথাবার্তা (গান-বাজনা) ক্রয় করে এবং এই পথটিকেই ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে; তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’ (সূরা লুক্বমান : ৬)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِى الْخَمْرَ يُسَمُّوْنَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا يُعْزَفُ عَلَى رُءُوسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ يَخْسِفُ اللهُ بِهِمُ الْأَرْضَ وَيَجْعَلُ مِنْهُمُ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيْرَ

‘নিশ্চয় আমার উম্মতের কিছু সংখ্যক মানুষ মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। তাদের নেতাদেরকে গায়িকা ও বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সম্মান করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভূমিকম্পের মাধ্যমে ধসিয়ে দিবেন। আর তাদেরকে বানর ও শুকরে পরিণত করবেন’।[৩]

অপ্রয়োজনীয় সেলফি তোলা
বর্তমান সমাজের যুবক-যুবতীরা লাঠির মাথায় মোবাইল বেঁধে সেলফি তোলে, হাসে আর গল্প করে। এভাবে সেলফি তুলতে তুলতে আর অবৈধ প্রেমালাপ করতে করতে অন্য মনস্ক হয়ে বাস-ট্রেনের নীচে পড়ে মারা যাচ্ছে অসংখ্য তরুণ-তরুণী।[৪] লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে এরা যেখানে সেখানে সেলফি তুলতে পাগলপারা হয়ে উঠে। বিভিন্ন ফ্যাশানে চোখ বুঝে, ঘাড় কাত করে, ঠোট ভিজিয়ে সেলফি তোলে। এসব সেলফি তোলা বন্ধ করা একান্ত প্রয়োজন। এ ব্যাপারেও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।

অর্থ ও সময়ের অপচয়
স্মার্টফোন উপহার, সস্তায় বা বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও ইন্টারনেট পরিচালনার জন্য প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় হয়। যা অপচয়ের শামিল। আর আল্লাহ অপব্যয়কারীকে শয়তানের ভাই বলেছেন (সূরা বানী ইসরাঈল : ২৭)।

ফ্যাশান আর অহংকারের নেশা
মোবাইল এখন ফ্যাশান আর অহংকারে বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এটা নেশার মত শিশু-কিশোরদেরকে গ্রাস করে ফেলেছে। এখন আর ছেলেদের মাঠে দেখা যায় না। আর মেয়েরা বিকেল বেলা বাড়ীর আঙ্গিনায় গোল্লাছোট, কিৎ কিৎ, লুকোচুরি, চুলটানা, বিবিয়ানা ইত্যাদি খেলে না। শিশু-কিশোরেরা গেমস আর কার্টুন নিয়ে ব্যস্ত। একদিন মোবাইল বন্ধ থাকলে যুবক-যুবতীরা দুনিয়াটা অন্ধকার বলে মনে করে আর বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বা জেলখানায় অবস্থান বলে মনে করে।

সুধী পাঠক! এগুলো ছাড়াও মোবাইলের আরও ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন-

মোবাইল ফোন ৬ থেকে ৭ ডিগ্রি কাছ থেকে ব্যবহার করলে চোখের ক্ষতি হয়।[৫] মোবাইলের নীল আলো চোখের রেটিনার কার্যক্ষমতা কমাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে চোখে যন্ত্রণা হয় এবং মাত্রারিক্ত ব্যবহারের ফলে অন্ধও হয়ে যেতে পারে[৬] এবং তা মেলাটোনিক হরমোনের ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। ফলে সহজে ঘুম আসতে চায়। কারণ আমাদের ঘুম কতটা ভাল হবে তা অনেকাংশেই নির্ভর করে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণের উপর।[৭] মস্তিস্ক সম্পর্কিত নানা জটিল রোগ আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়।[৮] চোখের পেশিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দৃষ্টিতে সমস্যা দেখা দেয় এবং দৃষ্টি শক্তি কমে যায়।[৯] টাচ স্কিন মোবাইল আঙ্গুলের স্পর্শে চালানোর ফলে আঙ্গুল, কব্জি, মাথা ও ঘাড় ব্যথা হতে পারে। দীর্ঘক্ষণ কথা বললে কানেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।[১০] এমনকি শ্রবণ শক্তিও কমে যায়।[১১] ব্যাকটেরিয়া থাকে মোবাইল ফোনে এবং তা থেকেও জীবাণু ছড়াতে পারে এবং শরীরে সংক্রমণও দেখা দিতে পারে।[১২] মানসিক চাপ বৃদ্ধির ফলে হতাশার সৃষ্টি হয়।[১৩] মোবাইল ফোনের কারণে মনের মধ্যে জন্ম নেয় ‘নোমোফোরিয়া’ নামক সমস্যা। বর্তমানে যুক্তরাষ্টের ৫৩ শতাংশ এবং ভারতের ২৯ শতাংশ তরুণরা এ রোগের শিকার।[১৪] ফোনের রেডিয়েশন চোখের ক্ষতি করে।[১৫] এমনকি গর্ভবতী নারীর শরীরে এই রেডিয়েশন বিরূপ প্রভাব ফেলে।[১৬] রেডিয়েশনের প্রভাবে গর্ভবতী মায়ের শরীরে এমন কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন হতে শুরু করে যে, তার প্রভাবে বাচ্চার ক্ষতি তো হয়ই, সেই সঙ্গে নানাবিধ প্রসবকালীন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। বিশেষত মিসক্যারেজের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।[১৭]

মোবাইলে হার্টের সমস্যা হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে।[১৮] শিশুরা মোবাইলের তড়িৎ চুম্বকীয় দূষণের কারণে এপিলেপসি ও এ্যাজমায় ভুগতে থাকে।[১৯] অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করলে মুখে ক্যান্সার বা মেলিগ নানট টিউমার এর ঝুঁকি বাড়ে এবং বন্ধ্যাত্বও বৃদ্ধি পায়।[২০] মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাব ফেলে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, অস্থিরতা ও অমনোযোগিতা বৃদ্ধি পায়। হার্ট অ্যাটাক, কিডনি রোগ, ব্রেইন ও ব্রেস্ট ক্যান্সার সহ নানা রকম রোগ বৃদ্ধি হয়।[২১] মস্কিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয়। যার কারণে স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, মনোযোগ বৃদ্ধির ঘাটতিও দেখা দেয়। সেই সাথে ব্রেইনে রক্তের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে নানাবিধ ব্রেইন ডিজিজ-এ আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে।[২২]

প্রতিকার
মোবাইলে শুধু প্রয়োজনীয় কথা বলার অভ্যাস করা। ২. পরিবার প্রধান কর্তৃক কঠোরহাতে মোবাইলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। ৩. অবৈধ সম্পর্ক ও যেনার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতন করা। ৪. আল্লাহভীতি, ছালাতে অভ্যস্ত ও ইসলামী শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৫. সংঘঠিত অপরাধের দুনিয়াবী ও আখেরাতের শাস্তির বিষয়টি অবগত করা এবং দুনিয়াবী শাস্তি যথাযথ নিশ্চিত করা। ৬. খারাপ বন্ধু ও সহকর্মীদের সাধ্যমত এড়িয়ে চলা। ৭. পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়মিত কুরআন তেলাওয়াত এবং কুরআন অর্থ বুঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলা। ৮. অবসর সময়ে খেলাধুলা ও ব্যায়ামের সুযোগ করে দেয়া।

উপসংহার
পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের আদরের সন্তানরা যে পরিমাণ মোবাইল আসক্তি হয়েছে, তার জন্য আমরাই দায়ী। সুতরাং এখনই এদের লাগাম টেনে ধরতে না পারলে পরিবার, সমাজ, দেশ ও জাতি ডুবে যাবে অধঃপতনের অতল তলে। প্রয়োজনীয় কাজেই শুধু মোবাইল ব্যবহার করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। বাচ্চাদেরকে মোবাইল থেকে সর্বদা দূরে রাখতে হবে। পরিবারে সর্বদা ইসলামী অনুশাসন অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন-আমীন!!


* চাঁদপুর, রূপসা, খুলনা।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৮।
[২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭১২; তিরমিযী, হা/১৯৭৫; ইবনু মাজাহ, হা/৪১৮৫, সনদ ছহীহ।
[৩]. আবূ দাঊদ, হা/৩৬৮৮; ইবনু মাজাহ, হা/৪০২০, সনদ ছহীহ।
[৪]. “সেলফি তুলতে গিয়ে তরুণীর মৃতু” প্রথম আলো, ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৮।
[৫]. লাইফস্টাইল ডেস্ক, ২৫ মে, ২০১৮
[৬]. প্রাগুক্ত।
[৭]. প্রাগুক্ত।
[৮]. প্রাগুক্ত।
[৯]. হেলদি বিল্ডার্জড, ১৮ মে, ২০১৯; অনলাইন ডেস্ক।
[১০]. প্রাগুক্ত।
[১১]. দৈনিক যুগান্তর, ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮।
[১২]. হেলদি বিল্ডার্জড, ১৮ মে, ২০১৯; অনলাইন ডেস্ক।
[১৩]. প্রাগুক্ত।
[১৪]. দৈনিক কালের কণ্ঠ, ঢাকা, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭।
[১৫]. ক্যালিফোর্নিয়ার ডিপাটমেন্ট অপ পাবলিক হেলথ, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭; অনলাইন ডেস্ক।
[১৬]. দৈনিক যুগান্তর, ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮।
[১৭]. দৈনিক জনকণ্ঠ, ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
[১৮]. প্রাগুক্ত।
[১৯]. প্রাগুক্ত।
[২০]. দৈনিক জনকণ্ঠ, ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
[২১]. দৈনিক যুগান্তর, ঢাকা, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮।
[২২]. দৈনিক জনকণ্ঠ, ঢাকা, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮।




প্রসঙ্গসমূহ »: শিশু-কিশোর

ফেসবুক পেজ