রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ০৬:৩১ অপরাহ্ন

রজব মাস সম্পর্কে প্রচলিত যঈফ ও জাল হাদীছসমূহ

-আল-ইখলাছ ডেস্ক


@ যঈফ হাদীছসমূহ

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ نَهْرٌ يُقَالَ لَهُ رَجَبٌ أَشَّدُ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وَأَحْلَى مِنَ الْعَسَلِ مَنْ صَامَ يَوْمًا مِنْ رَجَبٍ سَقَاهُ اللهُ مِنْ ذَلِكَ النَّهْرِ
১). আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘জান্নাতে একটি নহর আছে, যাকে বলা হয় রজব। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন ছিয়াম রাখবে, আল্লাহ তাকে সেই নহরের পানি পান করাবেন’।[১]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটির সনদ যঈফ।[২]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ رَجَبٌ قَالَ اَللهم بَارِكْ لَنَا فِيْ رَجَبٍ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
২). আনাস ইবনু মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, যখন রজব মাস আসত, তখন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি রজব ও শা‘বান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত পৌঁছার তাওফীক্ব  দিন’।[৩]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি সনদগতভাবে দুর্বল।[৪]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَة য أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَصُمْ بَعْدَ رَمَضَانَ إِلَّا رَجَبٌ وَشَعْبَانُ
৩). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাযানের পরে রজব ও শা‘বান ছাড়া অন্য কোন মাসে ছিয়াম রাখেননি।[৫]

তাহক্বীক্ব : হাদীছটি মুনকার। ইউসুফ ইবনু ‘আত্বিয়্যাহ বলেন, নিতান্তই যঈফ।[৬]

@ জাল হাদীছসমূহ

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجَبٌ شَهْرُ اللهِ وَشَعْبَانُ شَهْرِيْ وَرَمَضَانُ شَهْرُ أُمَّتِيْ
১). আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রামাযান আমার উম্মতের মাস।[৭]

তাহক্বীক্ব : বর্ণনাটি জাল।[৮]

مَنْ صَامَ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ مِنْ رَجَبٍ كُتِبَ لَهُ صِيَامَ شَهْرٍ وَمَنْ صَامَ سَبْعَةَ أَيَّامٍ مِنْ رَجَبٍ أَغْلَقَ اللهُ عَنْهُ سَبْعَةَ أَبْوَابٍ مِنَ النَّارِ وَمَنْ صَامَ ثَمَانِيَةَ أَيَّامٍ مِنْ رَجَبٍ فَتَح اللهُ لَهُ ثَمَانِيْةَ أَبْوَابٍ مِنَ الْجَنَّةِ وَمَنْ صَامَ نِصْفَ رَجَبٍ حَاسَبَهُ اللهُ حِسَابًا يَسِيْرًا
২). ‘রজব মাসে যে ব্যক্তি তিনটি ছিয়াম রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য একমাস ছিয়ামের নেকী লিপিবদ্ধ করবেন। আর যে ব্যক্তি রজব মাসে সাতটি ছিয়াম রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দিবেন। যে ব্যক্তি রজব মাসে আটটি ছিয়াম রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দিবেন। আর যে ব্যক্তি রজব মাসের অর্ধেক দিন ছিয়াম রাখবে তার হিসাব আল্লাহ সহজ করে দিবেন’। এ বর্ণনাটি জাল।[৯]

مَنْ صَلَّى الْمَغْرِبَ فِىْ أَوَّلِ لَيْلَةٍ مِنْ رَجَبٍ ثُمَّ صَلَّى بَعْدَهَا عِشْرِيْنَ رَكَعَةً يَقْرَأُ فِىْ كُلِّ رَكَعَةٍ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَقُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ مَرَّةً وَيُسَلِّمُ فِيْهِنَّ عَشَرَ تَسْلِيْمَاتٍ حَفِظَهُ اللهُ فِىْ نَفْسِهِ وِأَهْلِهِ وَمَالِهِ وَوَلَدِهِ وَأُجِيْرَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَجَازَ عَلَى الصِّرَاطِ كَالْبَرْقِ بِغَيْرِ حِسَابٍ وَلَا عَذَابٍ
৩). ‘যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখে মাগরিব ছালাত আদায় করতঃ বিশ রাক‘আত ছালাত পড়বে, প্রতি রাক‘আতে সূরা ফাতিহা এবং সূরা ইখলাছ একবার করে পড়বে এবং প্রতি দু’রাক‘আত পরপর সালাম ফিরিয়ে মোট দশ সালামে বিশ রাক‘আত পূর্ণ করবে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে, তার পরিবার, সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততীকে হেফাযত করবেন, কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন এবং সে বিনা হিসাবে ও বিনা শাস্তিতে বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার হবে’। এটিও একটি বানোয়াট হাদীছ।[১০]

إِنَّ شَهْرَ رَجَبٍ شَهْرٌ عَظِيْمٌ مَنْ صَامَ فِيْهِ يَوْمًا كَتَبَ اللهُ لَهُ صَوْمَ أَلْفَ سَنَةٍ
৪). ‘নিশ্চয় রজব মাস একটি সম্মানিত মাস। যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ছিয়াম রাখবে আল্লাহ তার জন্য এক হাজার বছর ছিয়াম রাখার নেকী লিপিবদ্ধ করবেন’। এটিও একটি স্পষ্ট জাল হাদীছ।[১১] অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রজব মাসে ছিয়াম রাখবে এবং চার রাক‘আত ছালাত পড়বে সে জান্নাতে তার নির্ধারিত আসন না দেখে মৃত্যু বরণ করবে না’। এটিও জাল হাদীছ।[১২]

তথ্যসূত্র :
[১]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৮০০।
[২]. ইবনু হাজার, তাবযীনুল ‘আজাব, পৃ. ৩-৫; সিলসিলা যঈফাহ, হা/১৮৯৮; যঈফুল জামে‘, হা/১৯০২।
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৮; মুসনাদে বাযযার, হা/৬৪৯৪; শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৮১৫।
[৪]. আল-জারাহ ওয়াত তা‘দীল, ৩/৬১৩ পৃ.; আল-মাজরূহীন, ১ম খণ্ড, পৃ. ৩০৮; তাক্বরীবুত তাহযীব, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৬৩, রাবী নং-২২৭৮।
[৫]. শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৮০৩।
[৬]. ইবনু হাজার, তাবযীনুল ‘আজাব, পৃ. ৭।
[৭]. মু‘জামু ইবনু ‘আসাকীর, হা/২১০।
[৮]. ফাতাওয়া লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২০৭।
[৯]. শাওকানী, আল-ফাওয়াঈদ আল-মাজমূ‘আহ, পৃ. ১০০।
[১০]. মাওযূ‘আত, ২য় খণ্ড, পৃ. ১২৩; তাবযীনুল ‘আজাব, পৃ. ১৩।
[১১]. মাওযূ‘আত, ২য় খণ্ড, পৃ. ২০৭; তাবযীনুল ‘আজাব, পৃ. ১৮; আল-ফাওয়াঈদ আল-মাজমূ‘আহ, পৃ. ১০১।
[১২]. আল-ফাওয়াঈদ আল-মাজমূ‘আহ, পৃ. ৪৭; মাওযূ‘আত, ২য় খণ্ড, পৃ. ১২৩-১২৪; তাবযীনুল ‘আজাব, পৃ. ১৪।




ফেসবুক পেজ