সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১০:৩৬ পূর্বাহ্ন

 রামাযান মাস সম্পর্কে প্রচলিত যঈফ ও জাল হাদীছসমূহ

-আল-ইখলাছ ডেস্ক




১). ‘যে ব্যক্তি উক্ত মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে একটি নফল কাজ করল, সে ঐ ব্যক্তির সমান হল, যে অন্য মাসে একটি ফরয আদায় করল। আর যে ব্যক্তি উক্ত মাসে একটি ফরয আদায় করল, সে ঐ ব্যক্তির সমান হল, যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরয আদায় করল’।[১] হাদীছটি মুনকার।[২]

২). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা শুধু রামাযান বল না। কেননা রামাযান আল্লাহর নামসমূহের একটি। বরং বল রামাযান মাস’।[৩] ইবনুল জাওযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীছটি জাল।[৪]

৩). ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি কি তোমাদের সর্বোত্তম ফেরেশতা সম্পর্কে জানাব না? সে জিবরীল। সর্বোত্তম নবী আদম (আলাইহিস সালাম) । সর্বোত্তম দিন জু‘আর দিন। মাসসমূহের মধ্যে সর্বোত্তম মাস রামাযান মাস। রাতের মধ্যে সর্বোত্তম রাত লায়লাতুল ক্বদরের রাত। সর্বোত্তম নারী মারইয়াম বিনতে ইমরান।[৫] হাদীছটি জাল।[৬]

৪). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন রামাযান মাসের প্রথম রাত আসে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সৃষ্টি জগতের প্রতি দৃষ্টি দেন তাকে কখনোই শাস্তি দেন না। আর আল্লাহ তা‘আলা রামাযানের রাতে হাযার হাযার লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন’।[৭] হাদীছটি জাল।[৮]

৫). আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, যখন রামাযান মাস আসত- রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাপড়কে কোমরে শক্ত করে বেঁধে নিতেন। এভাবে রামাযান মাস কেটে যেত  তিনি বিছানায় যেতেন না’।[৯] হাদীছটি দুর্বল।[১০]

৬). বিলাল ইবনু হারিছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মদীনার একদিনের রামাযান অন্য শহরের হাযার রামাযানের চেয়ে উত্তম। মদীনার একদিনের জুমু‘আহ অন্য শহরের হাযার জুমু‘আহর চেয়ে উত্তম’।[১১] হাদীছটি বাতিল।[১২]

৭). আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনটি খেজুর দ্বারা ইফতার করাকে ভালোবাসতেন কিংবা এমন কিছু দ্বারা যাকে আগুন স্পর্শ করেনি।[১৩] হাদীছটি দুর্বল।[১৪]

৮). মু‘আয ইবনু যুহরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রত্যেক ইফতারের সময় বলতেন, اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ ‘হে আল্লাহ! আপনার জন্য ছিয়াম পালন করেছি এবং আপনার দেয়া রিযক থেকেই ইফতার করছি’।[১৫] হাদীছটির সনদ দুর্বল।[১৬]

৯). আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ... বান্দারা ঈদের দিন ঈদগাহের উদ্দেশ্যে যখন বের হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের লক্ষ্য করে বলেন, আমার ইযযতের কসম! জেনে রাখ, আমি তাদের দু‘আ নিশ্চয় কবুল করব। অতঃপর তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের গুনাহসমূহকে নেকীতে পরিণত করলাম। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ী ফিরে।[১৭] হাদীছটি জাল।[১৮]

১০). আলী ইবনু হুসাইন তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি রামাযান মাসে দশদিন ই‘তিকাফ করবে, সেটা তার জন্য দু’টি হজ্জ ও দু’টি ওমরার মত হবে।[১৯]  বর্ণনাটি জাল।[২০]

তথ্যসূত্র : 
[১]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৬০৮; মিশকাত, হা/১৯৬৫।
[২]. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৮৯।
[৩]. বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৮১৫৮।
[৪]. ইবনুল জাওযী, আল-মাওযূ‘আত, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৮৭।
[৫]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১১৩৬১।
[৬]. সিলসিলাতুয যঈফাহ ওয়াল মাওযূ‘আহ, ১/৬৩৮, হা/৪৪৬।
[৭]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৩৫।
[৮]. সিলসিলাতুয যঈফাহ ওয়াল মাওযূ‘আহ ১/৪৭০, হা/২৯৯।
[৯]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, ৩/৩১০, হা/৩৬২৪।
[১০]. ইবনু হিব্বান, আছ-ছিক্বাত, ৫/১৮৫; আল-কাশিফ, ২/২৭০।
[১১]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, ১/৪৯৩, হা/১১৪৪।
[১২]. সিলসিলাতুয যঈফাহ ওয়াল মাওযূ‘আহ, ২/২৩০, হা/৮১৩।
[১৩]. হায়ছামী, আল-মাজমাঊয যাওয়াইদ, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৫৫।
[১৪]. সিলসিলাতুয যঈফাহ ওয়াল মাওযূ‘আহ ২/২২৪, হা/৯৯৬।
[১৫]. আবূ দাঊদ,  হা/২৩৫৮; মিশকাত, হা/১৯৯৪।
[১৬]. ইরওয়াউল গালীল ৪/৩৮, হা/৯১৯; যঈফুল জামে‘ হা/৪৩৪৯।
[১৭]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৭১৭; মিশকাত, হা/২০৯৬।
[১৮]. যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৫৯৪; মিশকাত হা/২০৯৬।
[১৯]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৬৮০-৩৬৮১।
[২০]. সিলসিলা যঈফাহ, হা/৫১৮।




ফেসবুক পেজ