বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৩ অপরাহ্ন

ফিতনার সময় যেমন হবে মুসলিমদের অবস্থান

-মূল: প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহ্হাব আল-আকীল (রাহিমাহুল্লাহ)
-অনুবাদ: মাহফুজুর রহমান ইবন আব্দুস সাত্তার*



আকাশের ঘনকালো মেঘ যেমন অনেক সময় সূর্যের কিরণকে ঢেকে ফেলে; মনে হয় হয়ত আর সূর্যের মুখ দেখা যাবে না। ঠিক তেমনি বর্তমান সময়ে ফিতনা যেন পুরো আকাশকে ঘিরে ফেলছে। বাতাসের সাথে মিশে গেছে। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মিশে মানুষের ভিতরে প্রবেশ করছে। সমুদ্রের বিশাল তরঙ্গের ন্যায় ধেয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এ ফিতনা থেকে আর কখনো মুক্তি পাওয়া যাবে না। তাই সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় ছড়িয়ে পড়া ফেতনা সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেকের জানা উচিত যাতে ফিতনার সময় সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারি।

ফিতনা পরিচিতি: আভিধানিক অর্থ পরীক্ষা করা, যাচাই করা। পারিভাষিক অর্থ হল:  هي الأمور و الشدائد التي يجريها الله على عباده على وجه الحكمة امتحانا و ابتلاء ‘ফিতনা হল এমন কিছু বিষয় ও বিপদাপদ, যা আল্লাহ তা‘আলা হিকমতের সাথে বান্দাদেরকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে তাদের মাঝে ঘটিয়ে থাকেন।

ফিতনার প্রকারভেদ: ফিতনা দুই প্রকার। ১. খাছ ফিতনা (الفتن الخاصة): আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে তার ব্যক্তিগত জীবনে যে বিপদাপদ দেন তাকে খাছ ফিতনা বলে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَىۡءٍ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٍ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ. ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ. أُوْلَٰٓئِكَ عَلَيۡهِمۡ صَلَوَٰتٌ مِّن رَّبِّهِمۡ وَرَحۡمَةٌۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُهۡتَدُونَ.

‘আর আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদেরকে। যারা তাদের উপর বিপদ আসলে বলে, ‘আমরা তো আল্লাহ্‌রই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী’। এরাই তারা, যাদের প্রতি তাদের রবের কাছ থেকে বিশেষ অনুগ্রহ এবং রহমত বর্ষিত হয়, আর তারাই সৎপথে পরিচালিত’ (সূরা বাক্বারাহ: ২৫৫-২৫৭)। ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে কখনো কখনো সুখ-শান্তি আবার কখনো কখনো বিপদাপদ দ্বারা পরীক্ষা করেন। যেমন, ভয়, ক্ষুধা, আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয় ব্যক্তিদের মৃত্যু। আল্লাহ বলেন, وَلَنَبۡلُوَنَّكُمۡ حَتَّىٰ نَعۡلَمَ ٱلۡمُجَٰهِدِينَ مِنكُمۡ وَٱلصَّٰبِرِينَ وَنَبۡلُوَاْ أَخۡبَارَكُمۡ ‘আর আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব, যতক্ষণ না আমরা জেনে নেই তোমাদের মধ্যে জিহাদকারী ও ধৈর্যশীলদেরকে এবং আমরা তোমাদের কর্মকাণ্ড পরীক্ষা করি’ (সূরা মুহাম্মাদ: ৩১)। তিনি আরো বলেন, كُلُّ نَفۡسٍ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ وَنَبۡلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلۡخَيۡرِ فِتۡنَةًۖ وَإِلَيۡنَا تُرۡجَعُونَ ‘জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আমরা তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমাদেরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’ (সূরা আল-আম্বিয়া: ৩৫)। তিনি আরো বলেন,

فَاِذَا مَسَّ الۡاِنۡسَانَ ضُرٌّ دَعَانَا ۫ ثُمَّ   اِذَا خَوَّلۡنٰہُ نِعۡمَۃً  مِّنَّا ۙ قَالَ  اِنَّمَاۤ  اُوۡتِیۡتُہٗ عَلٰی عِلۡمٍ ؕ بَلۡ  ہِیَ فِتۡنَۃٌ  وَّ لٰکِنَّ  اَکۡثَرَہُمۡ  لَا یَعۡلَمُوۡنَ.

‘অতঃপর যখন কোন বিপদ-আপদ মানুষকে স্পর্শ করে, তখন সে আমাদেরকে ডাকে; তারপর যখন তাকে আমরা আমাদের কোন নে‘মতের অধিকারী করি তখন সে বলে, আমাকে এটা দেয়া হয়েছে কেবল আমার জ্ঞানের কারণে। বরং এটা এক পরীক্ষা, কিন্তু তাদের বেশীর ভাগই তা জানে না’ (সূরা আয-যুমার: ৪৯)। উপরিউক্ত আয়াতগুলো নিয়ে আমরা যদি একটু গবেষণা করি তাহলে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে যে, পদ্ধতিগত দিক থেকে খাছ ফিতনাগুলো কয়েকভাগে বিভক্ত।

ক. বিপদাপদের মাধ্যমে পরীক্ষা: যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ ؕ وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ.

‘আর আমরা তোমাদেরকে অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। আর আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদেরকে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৫৫)। আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

ما يزال البلاء بالمؤمن و المؤمنة في نفسه و ولده و ماله حتى يلقى الله و ما عليه خطيئة.

‘মুমিন নারী-পুরুষের উপর, তার সন্তানের উপর ও তার ধন-সম্পদের উপর অনবরত বিপদাপদ লেগেই থাকে। সবশেষে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সে গুনাহমুক্ত অবস্থায় মিলিত হয়’।[১] আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,  

إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلَاءِ وَإِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلَاهُمْ فَمَنْ رَضِىَ فَلَهُ الرِّضَا وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ.

‘বিপদ যত মারাত্মক হবে, প্রতিদানও তত মহান হবে। আল্লাহ্ তা‘আলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন তখন তাদেরকে বিপদে ফেলে পরীক্ষা করেন। যে লোক তাতে (বিপদে) সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহ তা‘আলার) সন্তুষ্টি বিদ্যমান। আর যে লোক তাতে অসন্তুষ্ট হয় তার জন্য (আল্লাহ তা‘আলার) অসন্তুষ্টি বিদ্যমান’।[২]

আল্লাহ তা‘আলার ফায়সালা ও তাক্বদীরের ভালো-মন্দের প্রতি ঈমান আনার স্বরূপ হল বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করা। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা যাকে বিপদাপদ দ্বারা পরীক্ষা করেন তার উপর আবশ্যক হল, ধৈর্যধারণ করা। কেননা ধৈর্যের মাঝে ইহকাল ও পরকালের অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তবে ধৈর্যধারণ করার অর্থ এই নয় যে, কোন প্রতিষেধক গ্রহণ করা যাবে না। বরং এ বিপদাপদে পতিত হওয়া থেকে মুক্ত থাকার জন্য বা প্রতিরোধ করার জন্য শরী‘আতসম্মত সকল ধরনের প্রতিষেধক গ্রহণ করা জায়েয রয়েছে।

যদি প্রশ্ন করা হয়, কেন আল্লাহ তা‘আলা মুমিন বান্দাদেরকেও বিপদাপদ দ্বারা পরীক্ষা করেন? এর উত্তর হল, মুমিন বান্দাদেরকে পরীক্ষা করার মাঝে আল্লাহ তা‘আলার বেশ কিছু হিকমত নিহিত রয়েছে। যেমন, মুমিনদের মর্যাদা উঁচু করা, তাদের পাপসমূহকে মিটিয়ে দেয়া, তাদেরকে পরীক্ষা করা এবং কে কথায় সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী তা যাচাই করা। এছাড়াও আল্লাহ তা‘আলার আরো অনেক হিকমত আছে বান্দাদেরকে এ ফিতনায় ফেলার মাঝে।

খ. নিয়ামত দ্বারা পরীক্ষায় ফেলা: এ প্রকার পরীক্ষা সৎ-অসৎ উভয় শ্রেণীর মাঝেই হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ اعۡلَمُوۡۤا  اَنَّمَاۤ   اَمۡوَالُکُمۡ  وَ اَوۡلَادُکُمۡ  فِتۡنَۃٌ ۙ وَّ اَنَّ اللّٰہَ عِنۡدَہٗۤ  اَجۡرٌ  عَظِیۡمٌ ‘আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি তো এক পরীক্ষা। আর নিশ্চয় আল্লাহ্‌, তাঁরই কাছে রয়েছে মহাপুরস্কার’ (সূরা আল-আনফাল: ২৮)।

আল্লাহ তা‘আলা যাকে নে‘মত দিয়েছেন তার উচিত নে‘মতপ্রাপ্ত হয়ে বাহ্যিকভাবে ও গোপনীয়ভাবে আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া জ্ঞাপন করা। আল্লাহ তা‘আলা তার উপর যা ওয়াজিব করেছেন তা আদায় করা। কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে ধৈর্যের পরিচয় দেয়া এবং সে নে‘মতের ক্ষেত্রে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়া থেকে ধৈর্যধারণ করা। আর নে‘মতগুলো বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। যেমন, অধিক ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, একাধিক সহধর্মিণী, সুস্থতা, অবসর সময়, যৌবন, নিরাপত্তা ইত্যাদি এ নে‘মতগুলো আল্লাহ তা‘আলা তার মুমিন ও মুমিন ছাড়াও যারা আছে তাদেরকে দেন। তাদেরকে পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে। সুতরাং যে বুঝবে তা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নে‘মত এবং তার হক্ব আদায় করবে সে দুনিয়া ও আখিরাতে সফলকাম হবে আর যে নে‘মত চিনবে না, তার হক্বও আদায় করবে না; দুনিয়া ও আখিরাতে তা তার বিপদের কারণ হয়ে দেখা দিবে।

গ. আসক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা: আর তা হলো, বান্দাকে প্রবৃত্তির আসক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা করা। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّہَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَ الۡبَنِیۡنَ وَ الۡقَنَاطِیۡرِ الۡمُقَنۡطَرَۃِ مِنَ الذَّہَبِ وَ الۡفِضَّۃِ وَ الۡخَیۡلِ الۡمُسَوَّمَۃِ وَ الۡاَنۡعَامِ وَ الۡحَرۡثِ ؕ ذٰلِکَ مَتَاعُ  الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ اللّٰہُ عِنۡدَہٗ حُسۡنُ الۡمَاٰبِ.

‘নারী, সন্তান, সোনা-রুপার স্তূপ, বাছাই কড়া ঘোড়া, গবাদি পশু এবং খেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। এসব দুনিয়ার জীবনের ভোগ্য বস্তু। আর আল্লাহ্‌, তাঁরই নিকট রয়েছে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল’ (সূরা আলে ইমরান: ১৪)।

ঘ. সংশয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা: সংশয় কী? সংশয় তো এমন একটি মারাত্মক দুর্যোগ, যা মেরুদণ্ডের ন্যায় শক্ত ঈমানকেও দুর্বল করে দেয়। দ্বীন নষ্ট করে দেয় এবং তা প্রত্যেক মতানৈক্য, বক্রতা, ভ্রষ্টতা, বিচ্ছিন্নতা, কুফরী ও নেফাকীর কারণ। আমরা আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য ফিতনা থেকে পানাহ চাচ্ছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ مَّرَضٌ ۙ فَزَادَہُمُ  اللّٰہُ  مَرَضًا ۚ  وَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌۢ  ۬ۙ بِمَا کَانُوۡا یَکۡذِبُوۡنَ.

‘তাদের অন্তরসমূহে রয়েছে ব্যাধি। অতঃপর আল্লাহ তাদের ব্যাধি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর তাদের জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি, কারণ তারা মিথ্যাবাদী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১০)। তিনি আরো বলেন,

ہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ مِنۡہُ اٰیٰتٌ مُّحۡکَمٰتٌ ہُنَّ اُمُّ  الۡکِتٰبِ وَ اُخَرُ مُتَشٰبِہٰتٌ ؕ فَاَمَّا الَّذِیۡنَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ زَیۡغٌ فَیَتَّبِعُوۡنَ مَا تَشَابَہَ مِنۡہُ ابۡتِغَآءَ الۡفِتۡنَۃِ وَ ابۡتِغَآءَ تَاۡوِیۡلِہٖ ۚ؃ وَ مَا یَعۡلَمُ  تَاۡوِیۡلَہٗۤ  اِلَّا اللّٰہُ  ۘؔ وَ الرّٰسِخُوۡنَ فِی الۡعِلۡمِ یَقُوۡلُوۡنَ اٰمَنَّا بِہٖ ۙ کُلٌّ  مِّنۡ عِنۡدِ رَبِّنَا ۚ وَ مَا یَذَّکَّرُ  اِلَّاۤ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ.

‘তিনিই আপনার প্রতি এই কিতাব নাযিল করেছেন যার কিছু আয়াত ‘মুহ্কাম’, এগুলো কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো ‘মুতাশাবিহ’। সুতরাং যাদের অন্তরে বক্রতা রয়েছে শুধু তারাই ফেতনা এবং ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। অথচ আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর তারা বলে, ‘আমরা এগুলোতে ঈমান রাখি, সবই আমাদের রবের কাছ থেকে এসেছে’ এবং জ্ঞান-বুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা ছাড়া আর কেউ উপদেশ গ্রহণ করে না’ (সূরা আলে ইমরান: ৭)।

২. ‘আম ফিতনা (الفتن العامة): আর তা হল, এমন ফিতনা, যা পুরো উম্মতকে গ্রাস করে নেয় এবং তার কারণে ইসলাম ও মুসলিমগণ মহা বিপদে পড়ে যান। ফলত মানুষের মাঝে ইসলাম দুর্বল হয়ে যায় এবং মুসলিমগণ লাঞ্ছিত হন। এ ফিতনা ছাহাবীদের যুগে শুরু হয়েছে এবং বর্তমান পর্যন্ত চলমান রয়েছে। তা বান্দাদের দ্বীন পালন অনুযায়ী কমবেশি হয়; বান্দা যখন দ্বীনের বেশি নিকটবর্তী হয় তখন তা দূরে চলে যায় আবার যখন তারা দ্বীন থেকে সড়ে যায় তখন তাদেরকে গ্রাস করে ফেলে (লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ)। আর নবী (ﷺ) উম্মতের উপর এ প্রকার ফিতনারই আশংকা করেছিলেন। উসামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

أَشْرَفَ النَّبِيُّ ﷺ عَلَى أُطُمٍ مِنْ آطَامِ الْمَدِيْنَةِ فَقَالَ ‏‏ هَلْ تَرَوْنَ مَا أَرَى إِنِّيْ لأَرَى مَوَاقِعَ الْفِتَنِ خِلَالَ بُيُوْتِكُمْ كَمَوَاقِعِ الْقَطْرِ.

‘নবী (ﷺ) মদীনার কোন একটি পাথর নির্মিত গৃহের উপর আরোহণ করে বললেন, আমি যা দেখি তোমরা কি তা দেখতে পাচ্ছ? (তিনি বললেন) বৃষ্টি বিন্দু পতিত হওয়ার স্থানসমূহের মত আমি তোমাদের গৃহসমূহের মাঝে ফিতনার স্থানসমূহ দেখতে পাচ্ছি’।[৩]

ফিতনার কারণ

ফিতনার কারণগুলো দুইভাগে বিভক্ত। (এক) কাওনী কারণ: আর তা হলো, এমনকি কিছু কারণ যা মানুষের সাধ্যের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর এ কারণগুলো আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এবং রাসূল (ﷺ) হাদীছের মাঝে উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটি হল:

১- রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যু: মুসলিম উম্মতকে যত ধরণের মুসিবত দিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে তান্মধ্যে সবচেয়ে বড় মুসিবত হল রাসূল (ﷺ)-এর মৃত্যু। তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে যমীনে আসমানের খবর আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁর মৃত্যুর মাধ্যমে জাতি এক নিষ্পাপ ইমামকে হারিয়েছে, এক উত্তম আদর্শবান ব্যক্তিকে হারিয়েছে। এক ন্যায়পরায়ণ হাকেমকে হারিয়েছে। তার মৃত্যুর মাধ্যমে যমীনবাসী থেকে নিরাপত্তা উঠে গেছে এবং ছাহাবীদেরকে প্রতিশ্রুত ফিতনা ও বিপদাপদ গ্রাস করে ফেলেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ مَا کَانَ اللّٰہُ  لِیُعَذِّبَہُمۡ  وَ اَنۡتَ فِیۡہِمۡ ؕ وَ مَا کَانَ اللّٰہُ مُعَذِّبَہُمۡ وَ ہُمۡ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ.

‘আর আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন’ (সূরা আল-আনফাল: ৩৩)।

২- ছাহাবীদের মৃত্যু: কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা ছাহাবীদের অনেক প্রশংসা করেছেন। তাদেরকে ন্যায়পরায়ণ হিসাবে অবিহিত করেছেন। সমস্ত মানুষের উপর তাদের বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। রাসূল (ﷺ) বলেন, আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা, অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা। ইমরান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) (হাদীছের রাবী) বলেন, আমি বলতে পারছি না, নবী (ﷺ) (তাঁর যুগের) পরে দুই যুগের কথা বলেছিলেন বা তিন যুগের কথা। নবী (ﷺ) বলেছিলেন, তোমাদের পর এমন লোকেরা আসবে, যারা খিয়ানত করবে, আমানত রক্ষা করবে না। সাক্ষ্য দিতে না ডাকলেও তারা সাক্ষ্য দিবে। তারা মানত করবে কিন্তু তা পূর্ণ করবে না। তাদের মধ্যে মেদওয়ালাদের প্রকাশ ঘটবে।[৪]

ছাহাবীগণ ছিলেন উম্মতের জন্য বরকত। যখন তারা চলে গেলেন তারপর থেকে উম্মতের মাঝে ফিতনা ব্যাপক আকার ধারণ করে। রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তারকারাজি অবস্থানের কারণেই আকাশ স্থিতিশীল রয়েছে। তারকারাজি যখন বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়বে তখন আকাশের জন্য ওয়াদাকৃত বিপদ আসন্ন হবে অর্থাৎ ক্বিয়ামত এসে যাবে এবং আসমান ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। আর আমি আমার ছাহাবীদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা স্বরূপ। আমি যখন বিদায় নিব তখন আমার ছাহাবীদের উপর ওয়াদাকৃত সময় এসে সমুপস্থিত হয়ে যাবে অর্থাৎ ফিতনা-ফাসাদ ও দ্বন্দ্ব-সংঘাত লেগে যাবে। আর আমার ছাহাবীগণ সকল উন্মাতের জন্য রক্ষাকবচ স্বরূপ। আমার ছাহাবীগণ যখন বিদায় হয়ে যাবে তখন আমার উন্মতের উপর ওয়াদাকৃত বিষয় উপস্থিত হবে’।[৫]

দুই. খাছ কারণ: খাছ কারণ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, এমন কিছু বিষয় ও কাজ, মানুষ যখন সেগুলো সম্পাদন করে তখন তাদের মাঝে মহা ফেতনা দেখা দেয়। তন্মধ্যে কয়েকটি কারণ হল:

ক- কিতাব ও সুন্নাহ অনুসরণে শৈথিল্যতা প্রদর্শন করা। বিশেষ করে বিভিন্ন দুর্দৈব ও ইখতিলাফের সময়: আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করে ও তদনুযায়ী আমল করে আল্লাহ তার জিম্মাদারী নিয়েছেন যে, সে ইহকালে লাঞ্ছিত হবে না এবং পরকালে হতভাগাও হবে না’।[৬]

খ- অমুসলিম কর্তৃক মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা: মুসলিম উম্মাহ ফিতনাগ্রস্ত হওয়া ও বিপদে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণ হল মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইয়াহুদী, খ্রিস্টান ও মূর্তিপূজকদের ষড়যন্ত্র ও কুচক্র। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَدَّ کَثِیۡرٌ مِّنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ لَوۡ یَرُدُّوۡنَکُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ اِیۡمَانِکُمۡ کُفَّارًا ۚۖ حَسَدًا مِّنۡ عِنۡدِ اَنۡفُسِہِمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَہُمُ الۡحَقُّ.

‘কিতাবীদের অনেকেই চায়, যদি তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর কাফিররূপে ফিরিয়ে নিতে পারত! সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও তাদের নিজেদের পক্ষ থেকে বিদ্বেষবশত তারা এটা করে থাকে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১০৯)।

গ- মারামারি, অবাধ্যতা, পাপাচার প্রকাশ পাওয়া এবং ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ ছেড়ে দেয়া: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ظَہَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی  النَّاسِ  لِیُذِیۡقَہُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا  لَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ.

মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে’ (সূরা আর-রূম: ৪১)।

ঘ- ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধের দোহায় দিয়ে মুসলিমদের আমীর-উমারার বিরূদ্ধে যুদ্ধে বের হওয়া: রাসূল (ﷺ) বলেন,

مَنْ أَطَاعَنِيْ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ عَصَانِيْ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَمَنْ يُطِعْ الأَمِيْرَ فَقَدْ أَطَاعَنِيْ وَمَنْ يَعْصِ الأَمِيْرَ فَقَدْ عَصَانِيْ وَإِنَّمَا الْإِمَامُ جُنَّةٌ يُقَاتَلُ مِنْ وَرَائِهِ وَيُتَّقَى بِهِ فَإِنْ أَمَرَ بِتَقْوَى اللهِ وَعَدَلَ فَإِنَّ لَهُ بِذَلِكَ أَجْرًا وَإِنْ قَالَ بِغَيْرِهِ فَإِنَّ عَلَيْهِ مِنْهُ.

‘যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমার নাফরমানী করল, সে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলারই নাফরমানী করল। আর যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল, সে ব্যক্তি আমারই আনুগত্য করল আর যে ব্যক্তি আমীরের নাফরমানী করল সে ব্যক্তি আমারই নাফরমানী করল। ইমাম তো ঢাল স্বরূপ। তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধ এবং তাঁরই মাধ্যমে নিরাপত্তা অর্জন করা হয়। অতঃপর যদি সে আল্লাহর তাক্বওয়ার নির্দেশ দেয় এবং সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে, তবে তার জন্য পুরস্কার রয়েছে আর যদি সে এর বিপরীত করে তবে এর মন্দ পরিণাম তার উপরই বর্তাবে’।[৭] ইমাম ত্বাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিম ইমাম ও তাদের গভর্নর যদি প্রজাদের প্রতি যুল্ম করে তারপরেও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বের হওয়াকে আমরা বৈধ মনে করি না। তাদের উপর বদদু‘আ করা ও আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেয়াকেও জায়েয মনে করি না। আমরা মনে করি তাদের আনুগত্যের মাঝেই আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য নিহিত রয়েছে। যতক্ষণ না তারা পাপ কাজের আদেশ করে। আমরা তাদের জন্য সঠিক বুঝ ও সুস্থতার দু‘আ করি’।[৮]

ফিতনার সময় একজন মুসলিমের অবস্থান যেমন হওয়া উচিত

১. ফিতনার সময় স্থির থাকা, শুধু অন্যের কথা শুনেই লাফালাফি না করে সেই কথা যাচাই-বাচায় করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

یٰۤاَیُّہَا  الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا  اِنۡ جَآءَکُمۡ فَاسِقٌۢ بِنَبَاٍ فَتَبَیَّنُوۡۤا  اَنۡ  تُصِیۡبُوۡا قَوۡمًۢا بِجَہَالَۃٍ  فَتُصۡبِحُوۡا عَلٰی مَا فَعَلۡتُمۡ  نٰدِمِیۡنَ.

‘হে ঈমানদারগণ! যদি কোন ফাসিক তোমাদের কাছে কোন বার্তা নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখ, এ আশঙ্কায় যে, অজ্ঞতাবশত তোমরা কোন সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে বসবে, ফলে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হবে’ (সূরা আল-হুজুরাত: ৬)।

২. মুসলিমদের জামা‘আত ও তার নেতাকে আঁকড়ে ধরা: ফিতনার সময় প্রত্যেক মুসলিমের উপর দ্বিতীয়ত যে কাজটি আবশ্যক, তা হল মুসলিমদের জামা‘আত ও তাদের নেতাকে আঁকড়ে ধরা। ইমাম ত্বাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমরা মনে করি যে, দলবদ্ধ থাকাটাই হক ও সঠিক এবং বিচ্ছিন্নতা হল বক্রতা ও ভ্রষ্টতা’।[৯] তিনি আরো বলেন, ‘মুসলিম ইমাম ও তাদের গভর্নর যদি প্রজাদের প্রতি যুল্ম করে তারপরেও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বের হওয়াকে আমরা বৈধ মনে করি না। তাদের উপর বদদু‘আ করা ও আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেয়াকেও জায়েয মনে করি না। আমরা মনে করি তাদের আনুগত্যের মাঝেই আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য নিহিত রয়েছে। যতক্ষণ না তারা পাপ কাজের আদেশ করে। আমরা তাদের জন্য সঠিক বুঝ ও সুস্থতার দু‘আ করি’।[১০]।

৩. সঠিক জ্ঞান ছাড়া ফিতনা বিষয়ে কথা না বলা: যে বিষয়ে সঠিক জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلۡ  اِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّیَ الۡفَوَاحِشَ مَا ظَہَرَ  مِنۡہَا وَ  مَا بَطَنَ وَ الۡاِثۡمَ وَ الۡبَغۡیَ بِغَیۡرِ الۡحَقِّ وَ اَنۡ تُشۡرِکُوۡا بِاللّٰہِ مَا لَمۡ یُنَزِّلۡ بِہٖ سُلۡطٰنًا وَّ اَنۡ تَقُوۡلُوۡا عَلَی  اللّٰہِ  مَا لَا  تَعۡلَمُوۡنَ.

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, নিশ্চয় আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা। আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং কোন কিছুকে আল্লাহর শরীক করা- যার কোন সনদ তিনি নাযিল করেননি। আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ৩৩)।

৪. ফিতনার সময় মারামারি-হানাহানি থেকে বিরত থাকা: সাধারণত ফিতনার সূচনা হয় কথা কাটাকাটি মাধ্যমে কিন্তু তার পরিসমাপ্তি ঘটে মারামারি-হানাহানি ও খুনাখুনির মধ্য দিয়ে। এ জন্য প্রত্যেক মুসলিমের উপর আবশ্যক হল চোখ কান খোলা রাখা ও শয়তানের ফাঁদ থেকে সর্বাত্মক সতর্কতা অবলম্বন করা।

৫. বেশি বেশি তাওবা-ইসতিগফার করা, আল্লাহ তা‘আলার দিকে প্রত্যাগমণ করা: কারণ ‘ফিতনার কারণসমূহ’ আলোচনা করার সময় আমরা উল্লেখ করেছি যে, ফিতনার অন্যতম একটি কারণ হল, আল্লাহ তা‘আলার আদেশের অবাধ্য হওয়া। তাই আমাদের উচিত বেশি বেশি তাওবা ইসতিগফার করা, যেন তিনি আমাদেরকে মাফ করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ظَہَرَ الۡفَسَادُ فِی الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ بِمَا کَسَبَتۡ اَیۡدِی  النَّاسِ  لِیُذِیۡقَہُمۡ بَعۡضَ الَّذِیۡ عَمِلُوۡا  لَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ.  

‘মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সাগরে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে; ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে’ (সূরা আর-রূম: ৪১)।

পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আ করি, তিনি যেন আমাদেরকে ফিতনামুক্ত রাখেন। আর ফিতনায় পতিত হলেও তিনি যেন তাতে উত্তীর্ণ হওয়ার তাওফীক্ব দান করেন এবং সকল প্রকার বালা-মুসিবত থেকে সুস্থ রাখেন-আমীন!!

 



* পি-এইচ. ডি গবেষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[১]. তিরমিযী, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২২৮০, সনদ ছহীহ।

[২]. তিরমিযী, হা/২৩৯৬; মিশকাত, হা/১৫৬৬, সনদ ছহীহ।

[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১৮৭৮।

[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৫১।

[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৫৮৪।

[৬]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৩৬।

[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৫৭।

[৮]. শারহুল আক্বীদাহ আত-ত্বাহাবিয়া, পৃ. ৫৪০।

[৯]. শারহুল আক্বীদাহ আত-তাহাবিয়া, পৃ. ৭৭৫।

[১০]. শারহুল আক্বীদাহ আত-ত্বাহাবিয়া, পৃ. ৫৪০।




প্রসঙ্গসমূহ »: যুবসমাজ

ফেসবুক পেজ