সালাফী মানহাজ ও তার প্রয়োজনীয়তা
-মূল: শাইখ ড. ছালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান
- অনুবাদ ও সংযোজন: মুহা. মাহফুজুর রহমান বিন আব্দুস সাত্তার*
যাবতীয় প্রশংসা বিশ্ব জাহানের রব আল্লাহ তা‘আলার জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের শেষ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ), তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল ছাহাবায়ে কিরামের প্রতি।
সালাফ দ্বারা উদ্দেশ্য কী?
সালাফ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, এই উম্মতের প্রথম প্রজন্ম। তথা মুহাজির ও আনছার ছাহাবীগণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ رَضُوۡا عَنۡہُ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
‘আর মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তিনি তাদের জন্য তৈরি করেছেন জান্নাত, যার নিচে নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য’ (সূরা আত-তাওবাহ: ১০০)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বিশেষভাবে মুহাজিরদের সম্পর্কে বলেন,
لِلۡفُقَرَآءِ الۡمُہٰجِرِیۡنَ الَّذِیۡنَ اُخۡرِجُوۡا مِنۡ دِیَارِہِمۡ وَ اَمۡوَالِہِمۡ یَبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰہِ وَ رِضۡوَانًا وَّ یَنۡصُرُوۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ؕ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الصّٰدِقُوۡنَ.
দএ সম্পদ নিঃস্ব মুহাজিরদের জন্য যারা নিজেদের বাড়িঘর ও সম্পত্তি হতে উৎখাত হয়েছে। তারা আল্লাহ্র অনুগ্রহ ও সস্তুষ্টির অন্বেষণ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্য করে। এরাই তো সত্যাশ্রয়ী’ (সূরা আল-হাশর: ৮)।
তারপর আনসারদের সম্পর্কে বলেন:
وَ الَّذِیۡنَ تَبَوَّؤُ الدَّارَ وَ الۡاِیۡمَانَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ یُحِبُّوۡنَ مَنۡ ہَاجَرَ اِلَیۡہِمۡ وَ لَا یَجِدُوۡنَ فِیۡ صُدُوۡرِہِمۡ حَاجَۃً مِّمَّاۤ اُوۡتُوۡا وَ یُؤۡثِرُوۡنَ عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ وَ لَوۡ کَانَ بِہِمۡ خَصَاصَۃٌ ؕ۟ وَ مَنۡ یُّوۡقَ شُحَّ نَفۡسِہٖ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ.
‘(আর এ সম্পদ তাদের জন্যও,) যারা মুহাজিরদের আগমনের আগে এ নগরীকে নিবাস হিসাবে গ্রহণ করেছে ও ঈমান গ্রহণ করেছে, তারা তাদের কাছে যারা হিজরত করে এসেছে তাদের ভালোবাসে এবং মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে তার জন্য তারা তাদের অন্তরে কোন (না পাওয়া জনিত) হিংসা অনুভব করে না, আর তারা তাদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দেয় নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও। বস্তুত যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, তারাই সফলকাম’ (সূরা আল-হাশর: ৯)।
অতঃপর মুহাজির ও আনছার ছাহাবীগণের পরে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সকল মুসলিমের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ الَّذِیۡنَ جَآءُوۡ مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ یَقُوۡلُوۡنَ رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا وَ لِاِخۡوَانِنَا الَّذِیۡنَ سَبَقُوۡنَا بِالۡاِیۡمَانِ وَ لَا تَجۡعَلۡ فِیۡ قُلُوۡبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا رَبَّنَاۤ اِنَّکَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ.
‘আর যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে ও ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদেরকে ক্ষমা করুন এবং যারা ঈমান এনেছিল তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব! নিশ্চয় আপনি দয়াদ্র, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-হাশর: ১০)।
সালাফ দ্বারা আরো উদ্দেশ্য হল, তাবেঈগণ, তাবে তাবেঈগণ ও তাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারা উত্তম যুগের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ﷺ) উত্তম প্রজন্ম সম্পর্কে বলেছেন, خَيْرُكُمْ قَرْنِىْ، ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ، ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ‘আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা, অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা’।[১]
আর তাদের যুগ ছিল পরবর্তীদের যুগের চেয়ে শ্রেষ্ঠ যুগ, এ জন্যই এ যুগকে বলা হয় (عصر القرون المفضلة) তথা সর্বোৎকৃষ্ট যুগ। এরাই হল এ উম্মতের সালাফ, উম্মতের আদর্শ, অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব। যাদের প্রশংসায় রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা, অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা।
সালাফী পরিচয় দেয়া যাবে কি?
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ এর জন্য নিজেদেরকে সালাফী পরিচয় দেয়া বা সালাফী নাম ধারণ করা কোনক্রমেই বিদ‘আত নয়; বরং তা বৈধ। কারণ সালাফী পরিভাষা হুবহু আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আহ পরিভাষার মতই। আর উভয় পরিভাষা ছাহাবীগণের উপর একত্রে ব্যবহার হয়। একটু চিন্তা করলে উক্ত বিষয়টি উপলব্ধি করা যায় অর্থাৎ তারাই সালাফ এবং তারাই আহলুস সুন্নাহ। সুতরাং যেভাবে আহলুস সুন্নাহর দিকে সম্পৃক্ত করে ‘সুন্নী’ বলা আমাদের জন্য বিশুদ্ধ, ঠিক সেভাবে সালাফদের দিকে সম্পৃক্ত করে সালাফী বলাও আমাদের জন্য বিশুদ্ধ, কোন পার্থক্য নেই। কেননা উম্মতের মাঝে বিভিন্ন ফির্কা সৃষ্টি হওয়া এবং বিভক্তি ঘটার পর ‘সালাফ’ দ্বারা এমন লোকদেরকে বোঝানো হতে লাগল যারা ছাহাবীগণ ও শ্রেষ্ঠ যুগের মনীষীদের বুঝ অনুযায়ী সঠিক আক্বীদাহ ও মানহাজের উপর চলত। আর সালাফ পরিভাষাটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অন্যান্য শরী‘আতসিদ্ধ নামসমূহের সমার্থক নাম হিসাবে বিবেচিত হতে লাগল। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
لَا عَيْبَ عَلَى مَنْ أَظْهَرَ مَذْهَبَ السَّلَفِ وَانْتَسَبَ إِلَيْهِ وَاعْتَرَى إِلَيْهِ بَلْ يَجِبُ قَبُوْلُ ذَلِكَ مِنْهُ فَإِنَّ مَذْهَبَ السَّلَفِ لَا يَكُوْنُ إِلَّا حَقًّا.
‘এটা কোন ব্যক্তির জন্য দোষের নয় যে, সে সালাফদের মাযহাবকে তুলে ধরবে, তার সাথে সম্পৃক্ত হবে, তার দিকে নিসবত করবে, বরং তার থেকে সেটা মেনে নেয়া আবশ্যক; কারণ সালাফদের মাযহাব কেবল সত্যই হয়ে থাকে’।[২]
আস-সাম‘আনী তাঁর ‘আল আনসাব’ গ্রন্থে বলেছেন,
السلفي هذع النسبة إلى السلف و انتحال مذاهبهم على ما سمعت منهم
‘সালাফী’ এটি সালাফদের সাথে নিসবত বা সম্পৃক্ততা এবং যেভাবে সালাফদের থেকে শ্রুত হয়েছে সেভাবে তাদের মাযহাবকে অনুসরণ করা’।
শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) তার কতিপয় গ্রন্থের মাঝে ‘সালাফিয়্যাহ’ উপাধিটি ব্যবহার করেছেন ঐসব লোকদের উপর, যারা আল্লাহ তা‘আলার ‘উলূ তথা উপরে থাকা বিষয়ে সালাফদের বক্তব্য অনুযায়ী কথা বলেছেন। ইমাম যাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) তার ‘সিয়ার’ গ্রন্থে (১২/৩৮০) বলেছেন, ‘আল-হাফেয লকবের জন্য প্রয়োজন হল মুত্তাকী, মেধাবী ও সালাফী হওয়া’। তিনি তার ‘সিয়ার' কিতাবে (১৬/৪৫৫৭) ইমাম দারাকুতনী সম্পর্কে লিখেছেন, ‘লোকটি কখনো ইলমুল কালাম ও ইলমুল জাদাল তথা তর্ক শাস্ত্রে প্রবেশ করেননি এবং সে বিষয়ে নিমগ্ন হননি বরং তিনি ছিলেন সালাফী’।
শায়খ আব্দুল আযীয (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে নিজেকে সালাফী বা আছারী বলে তার সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? এটা কি প্রশংসার অন্তর্ভুক্ত? তিনি উত্তরে বলেন:
إذا كان صادقا أنه أثري أو سلفي لا بأس مثل ما كان السلف يقولون فلان سلفي فلان أثري تزكية لا بد تزكية واجبة
‘যখন সে সত্যই আছারী কিংবা সালাফী হবে তখন এটাতে কোন অসুবিধা নেই। যেমন সালাফগণ বলতেন: অমুক ব্যক্তি সালাফী; অমুক ব্যক্তি আছারী। এ প্রশংসার অবশ্যই দরকার রয়েছে। এ প্রশংসার আবশ্যকতা রয়েছে’।
শাইখ আল্লামা ছালিহ ইবন ফাওযান আল-ফাওযান, তার লিখিত ‘আল-আজওয়াবাতুল মুফীদাহ' গ্রন্থে (পৃ. ১০৩)। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল: সালাফিয়্যাহ কী? এবং সালাফী মানহাজে চলা এবং সেটা আঁকড়ে ধরা কি অবশ্যক? তিনি জবাবে বলেন,
السلفية هي السير على منهج السلف من الصحابة والتابعين والقرون المفضلة في العقيدة والفهم والسلوك ويجب على المسلم سلوك هذا المنهج.
‘সালাফিয়্যাহ হলো বিশ্বাস, বুঝ ও আচরণে সালাফদের তথা ছাহাবী, তাবেঈ ও শ্রেষ্ঠ শতাব্দীসমূহের লোকদের মানহাজের উপর চলা এবং প্রতিটি মুসলিমের উপর এই মানহাজের উপর চলা আবশ্যক’।
এসব শীর্ষ উলামায়ে কিরাম ও অন্যান্যরা কখনো সালাফী, সালাফিয়্যাহ ও সালাফিয়্যিন উপাধি ব্যবহারে কোন সমস্যা মনে করেননি। কেননা এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো এমন সব লোক, যারা সালাফদের মানহাজ ও তরীকায় চলে, তা আঁকড়ে ধরে থাকে। সুতরাং সালাফদের দিকে নিজেকে সম্পৃক্ত করে সালাফি লকব ধারণ করা ও তা দ্বারা পরিচয় দেয়া বৈধ।
মানহাজুস সালাফ কী?
সালাফগণ আক্বীদা, মু‘আমালাত, আখলাক-চরিত্রে এমনকি সর্বাবস্থায় যে পথে চলেছেন তাকে ‘মানহাজুস সালাফ’ বলে। আর এ মানহাজটি সরাসরি কিতাব-সুন্নাহ থেকে গৃহীত। কেননা তারা রাসূল (ﷺ) নিকটেই থাকতেন, ওহী নাযিল হওয়ার যুগের ছিলেন এবং সরাসরি রাসূল (ﷺ) থেকে ইলম গ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছেন। তাই তাদের প্রজন্মই হল, সবচেয়ে উত্তম প্রজন্ম এবং তাদের মানহাজ-ই হলো সর্বোত্তম মানহাজ। যেমন,
১- আক্বীদার ক্ষেত্রে সালাফদের মানহাজ
১. সালাফদের বুঝের আলোকে শুধু কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ থেকে আক্বীদা গ্রহণ করা।
২. আক্বীদার ক্ষেত্রে ছহীহ সুন্নাহকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করা। চাই তা খবরে মুতাওয়াতির হোক বা খবরে আহাদ।
৩. ওহী হিসাবে যা এসেছে সেগুলো স্বীকার করা। আকল দ্বারা তা প্রত্যাখান না করা এবং গায়েবী বিষয়ে নিমজ্জিত না থাকা, যা আক্বল তথা বিবেকের ক্ষেত্র নয়।
৪. যুক্তিবিদ্যা ও দর্শনশাস্ত্র নিয়ে ডুবে না থাকা।
৫. বাতিল তা’বীল (অপব্যাখ্যা) প্রত্যাখ্যান করা।
৬. একই মাসআলায় বর্ণিত নসসমূহকে একত্রিত করে তারপর হুকুম দেয়া।
২- কুরআন-সুন্নাহর নুসূসের ক্ষেত্রে সালাফদের মানহাজ
১. কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর সকল নসকে কোনরূপ শর্ত ছাড়াই মেনে নেয়া এবং সেগুলোর প্রতি ঈমান আনয়ন করা।
২. কুরআনের মধ্যে যে সকল খবর রয়েছে সেগুলো এবং দ্বীনের যেগুলো মৌলিক বিষয় সেগুলো কখনো মানসূখ হয় না।
৩. দ্বীনের মৌলিক বা শাখাগত বিষয়ে বিতর্ক হলে তা কিতাব-সুন্নাহর দিকে ফিরিয়ে দেয়া। একই মাসআলায় বর্ণিত সকল নসকে একত্রিত করে তারপরে হুকুম দেয়া।
৪. কুরআনের ‘মুতাশাবিহ’ আয়াতের প্রতি ঈমান আনা এবং ‘মুহকাম’ আয়াতের প্রতি আমল করা। বিবেক, যওক, ঘুম, কাশফ বা অন্যকিছু দ্বারা শরী‘আতের ‘নস’ এর বিরোধিতা না করা কিংবা এগুলোর মাধ্যমে কুরআন-সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান না করা। শরী‘আতের নছ যেখানে থামায় সেখানেই থেমে যাওয়া এবং অনর্থক কথায় নিমজ্জিত না হওয়া। এজন্য উমার ইবনু আব্দুল আযীয (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, وجوبُ الوقوفِ حيثُ وَقَفَ القومُ ؛ لأنَّهُم وَقَفُوا عنْ علمٍ وبصيرةٍ ، ولوْ كانَ فيما حَدَثَ بعدَهم خيرٌ لكانوا بهِ أَحْرَى. ‘নবী (ﷺ) ও তার ছাহাবীগণ আক্বীদা ও আমলের ক্ষেত্রে যেখানে থেমেছিলেন, যা থেকে বিরত থেকেছিলেন সেখানে থেমে যাওয়া, তা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব। কারণ তারা জ্ঞান ও অন্তর্দৃষ্টি থাকা সত্ত্বেও বিরত থেকেছেন। পরবর্তীরা যে বিষয়ে কথা বলেছে তা যদি অধিক কল্যাণকর হতো তবে অবশ্যই তারা এ বিষয়ে কথা বলার অধিক যোগ্যতর ছিলেন’।
মানহাজুস সালাফ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে তা অনুসরণ করতে হবে।
সালাফে ছালেহীনের মানহাজ সর্বোত্তম মানহাজ। তাই মুসলিমদের উপর আবশ্যক হল, তাদের মানহাজ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা যাতে যথাযথভাবে তা অনুসরণ করা যায়। কেননা সালাফদের মানহাজ সম্পর্কে জানা, জ্ঞানার্জন করা ও আমল করা ব্যতীত তাদের মানহাজের উপর চলা সম্ভব নয়। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ
‘আর মুহাজির ও আনছারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে’ (সূরা আত-তাওবাহ: ১০০)।
সুতরাং সালাফদের মতাদর্শ, মানহাজ এবং যে পথে তারা চলেছেন তা জানা ব্যতিরেকে যথার্থতার সাথে তাদের অনুসরণ করা সম্ভব নয়। তাই সালাফ কারা? তাদের মানহাজ কী? সে সম্পর্কে না জেনেই শুধু নিজেকে সালাফ বা সালাফিয়্যাতের দিকে সম্পৃক্ত করাতে কোন ফায়েদা নেই, বরং কখনো কখনো তা ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। অতএব আমাদেরকে অবশ্যই সালাফে ছালেহীনের মানহাজ সম্পর্কে জানতে হবে। এজন্য এ উম্মতে মুহাম্মাদী অতি গুরুত্বের সাথে মানহাজুস সালাফ সম্পর্কে আলোচনা-পর্যালোচনা করেন এবং যুগ যুগ ধরে প্রচার করছেন। তাই বিভিন্ন মসজিদ মাদরাসা, ইনস্টিটিউট, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে তা পড়ানো হয়। এটাই হল সালাফে ছালেহীনের মানহাজ। আর তা সম্পর্কে জানার উপায় হল, আল্লাহ তা‘আলার কিতাব ও রাসূল (ﷺ) সুল্লাহ থেকে গৃহীত মানহাজুস সালাফ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা।
* অধ্যয়নরত, সানাবিয়া দ্বিতীয় বর্ষ, মাদরাসা মুহাম্মাদীয়া আরাবীয়া, উত্তর যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৫১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৩৫।
[২]. ইমান ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ১৪৯।